কালিমাটি
অনলাইন / ১১১
প্রকাশিত হলো ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের দশম বর্ষের একাদশতম সংখ্যা। ক্রমিক সংখ্যার বিচারে একশ দশতম সংখ্যা। যেহেতু এই সংখ্যাটি প্রকাশিত হচ্ছে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারীতে, তাই সম্পাদকীয় লিখতে বসে বইমেলার ভাবনাটাই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষত বিগত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়ে গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি রাজ্যে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। বছরের শেষে মেলার আবহটা নিয়ে আসে লিটল ম্যাগাজিন মেলাই। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা শহরে লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদের উদ্যোগে পঠন-পাঠনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর এভাবে লিটল ম্যাগাজিন মেলাগুলো চলতে চলতেই জানুয়ারী মাসের শেষ মঙ্গলবারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার, যা বুধবার থেকে বারোদিনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষদের জন্য।
যদিও আমরা সাধারণ কথাবার্তায় উচ্চারণ করে থাকি ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা’, কিন্তু সরকারীভাবে স্বীকৃত নাম ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা’ (পূর্বনাম ‘কলিকাতা পুস্তকমেলা’)। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতে এই বইমেলা শুরু হয়েছিল বিগত শতাব্দীর ১৯৭৬ সালে। বেশ কয়েকবছর মেলা চলার পর ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করে। তবে একথাও প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, যদিও এই বইমেলা আন্তর্জাতিক বইমেলা রূপে বিশেষিত, কিন্তু মেলায় সিংহভাগ অংশগ্রহণ করে বাংলা প্রকাশনা। সঙ্গে অবশ্যই অংশগ্রহণ করে ইংরেজি, হিন্দি, ঊর্দু প্রকাশনাও। এছাড়াও বিদেশি দূতাবাসগুলিও স্টল বা প্যাভিলিয়ন সাজিয়ে নিজ নিজ দেশে প্রকাশিত বইপত্রের প্রদর্শনী করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ভারত সরকারের বাংলা প্রকাশনা বিভাগগুলিও এই মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। সেইসঙ্গে ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার আদলে প্রতি বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী একটি বিদেশি রাষ্ট্র ‘ফোকাল থিম’ ও অপর একটি রাষ্ট্র ‘সম্মানিত অতিথি রাষ্ট্র’ নির্বাচিত হয়। সেইসব দেশের প্রকাশনা সংস্থাগুলি অংশগ্রহণ ক’রে কলকাতা বইমেলার আন্তর্জাতিক মানকে গৌরবান্বিত করে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম অবাণিজ্যিক বইমেলা, ফ্রাঙ্কফুর্ট বা লন্ডন বইমেলার মতো বাণিজ্যিক বইমেলা নয়। কলকাতা বইমেলায় ফ্রাঙ্কফুর্ট ও লন্ডন বইমেলার মতো গ্রন্থপ্রকাশনা, পরিবেশনা এবং অনুবাদ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা বাণিজ্য হয় না। বরং বইয়ের প্রকাশকরা ও পরিবেশকরা সাধারণ মানুষের কাছে তাদের বইয়ের প্রদর্শনী, প্রচার ও বিক্রি করে থাকে। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতায় তাই এই বইমেলা কলকাতার প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরার অনুসারী।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যশালী বইমেলা বাংলাদেশের ঢাকায় আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। প্রতি বছর ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয় এই বইমেলা এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিনে। যতদূর জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর সামনের বটতলায় কলকাতা থেকে ৩২টি বই এনে একটা চটের ওপর সাজিয়ে বইমেলা শুরু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ (এখন ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’) থেকে প্রকাশিত ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকেরা ছিলেন এই বইগুলির লেখক। পরবর্তীকালে এই মেলা ক্রমশই সম্প্রসারিত হয়। বাংলা একাডেমী এবং বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি মেলার উদ্যোক্তা হন। পূর্বে এই বইমেলার নাম ছিল ‘একুশে গ্রন্থমেলা’। ১৯৮৪ সালে মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
প্রতি বছরের মতোই, আশাকরি, ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা’ এবং ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই দেশের অগণিত সাহিত্যপ্রেমী পাঠক-পাঠিকা, লেখক-লেখিকা এবং প্রকাশনা তথা পরিবেশনা সংস্থাগুলির কাছে।
ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
জানাই সবাইকে।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের
ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com
/ kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন