প্রতিবেশী সাহিত্য
ডবলু এইচ অড্যেন -র কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতি : ডবলু এইচ অড্যেন
একজন ব্রিটিশ আমেরিকান কবি। ১৯০৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ইউ কে-তে ইওর্ক শহরে তিনি জন্মগ্রহণ
করেন এবং ১৯৭৩ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর ভিয়েনাতে মারা যান। তিনি তাঁর মেধা মননশীলতা এবং রসবোধের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর কবিতা সুবিন্যস্ত, স্টাইলিশ, বিস্তৃত
বিষয়সূচিতে সমৃদ্ধ। রাজনীতি, আদর্শবাদ, ধর্ম
ও ভালবাসা ইত্যাদি নানা বিষয় তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে। গভীর অনুভবের ফসল তিনটি কবিতার অনুবাদ এখানে দিলাম।
ফিউনারাল ব্লুজ (ব্যথা-নীল অন্তেষ্টিক্রিয়া)
সমস্ত ঘড়ি থামিয়ে দাও
টেলিফোনের তার কেটে দাও
থামিয়ে দাও রসালো হাড়ের টুকরো নিয়ে
পথ-সারমেয়দের বিরক্তিকর চিৎকার।
স্তব্ধ করে দাও পিয়ানোর সুরেলা আওয়াজ।
এগিয়ে আসুক আচ্ছাদিত ঢাকের সাথে
কফিন এবং শোকার্ত মানুষেরা!
এরোপ্লেনকে মাথার ওপর আকাশে
চক্রাকারে ঘুরতে দিও… সংবাদ ছড়িয়ে
দিতে
‘সে মৃত!’
রাস্তার পায়রাগুলোর সাদা গলায়
ঝুলিয়ে দিও ক্রেপের ব্যান্ড।
ট্র্যাফিক-পুলিশদের হাতে তুলে দিও
কালো দস্তানা।
সে আমার উত্তর ছিলো
আমার দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিমও!
আমার কর্মব্যস্ত সপ্তাহ এবং রবিবারের
বিশ্রাম
আমার চাঁদ, আমার মধ্যরাত, আমার কথা
ও গান!
ভেবেছিলাম…
ভালোবাসা চিরকালের মতো থাকবে
ভুল ছিলাম আমি!
নক্ষত্রদের আর চাই না
প্রত্যেককে বের করে নাও
চাঁদকে গুটিয়ে ফেলো আর
সূর্যকে ভেঙেচুরে দাও।
সমুদ্রকে সরিয়ে… ঝাড়ু মেরে
দূর করে দাও সবুজ বনানী।
এগুলোর আর প্রয়োজন নেই
এরা আর কোনো ভালো কাজে আসবে না!
দ মোর লাভিং (আরও ভালোবাসার মানুষ)
আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে
বেশ বুঝতে পারি
সবার জন্য তাদের ভাবনা।
আমি নরকেও যেতে পারি।
কিন্তু পৃথিবী বড় উদাসীন!
আমরা অত্যন্ত চিন্তাজনক ভাবে
মানুষ থেকে পশুতে চলে আসি।
এটা কীভাবে ভালো লাগবে
তারাগুলো জ্বালিয়ে দেবো
সংবেদনার পরিবর্তে সংবেদননা জানাবো
না!
যদি সমান সমান না সম্ভব হয়
আরও বেশি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকুক
প্রসংশা করুক আমি যা নিজেকে ভাবি
তার চেয়েও বেশি কিছু!
তারাগুলো সেসব কিছু দেয় না।
এখন তাদের দেখতে পারি এবং বলতে পারি
ভীষণভাবে একজনকে সারাদিন মিস করেছি।
যেখানে নক্ষত্রেরা সব অদৃশ্য হয়ে
যাবে
অথবা শেষ হয়ে যাবে শূন্য আকাশের দিকে
তাকাতে শিখে যাবো। সময় লাগলেও
অনুভব করবো সম্পূর্ণ অন্ধকারের
অদ্ভুত সুন্দর পবিত্র নির্জনতা!
আত্মপ্রতিকৃতি
সে তার অনুভবের সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে
লক্ষ্য করে রাজকুমারীর পদক্ষেপ,
শোনে স্ত্রী এবং সন্তানদের সংলাপ।
হৃদয়ের পুরনো পিটারা খুলে জানতে চায়
কোন আইন অবমাননা করে
মানুষগুলো মৃত্যুবরণ করেছে!
এবং খুব নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে
পৌঁছায়
সমস্ত আরামচেয়ারে বসে থাকা
দার্শনিকরা এক বিশাল ভুল!
অন্যদেরকে ভালোবাসা এক বিভ্রান্তি!
দয়া প্রদর্শনও শয়তানের কারসাজি।
ভাগ্য মেনে নিয়ে সফলতার শিখরে পৌঁছে
সমস্ত প্রাণীদের রাজা হয়েও
এক শরত-রাতের দুঃস্বপ্নে সে
নিজেকে দেখতে পায় শূন্য করিডোরে
নিজেরই বিকৃত চেহারা
যে কাঁদে,কাঁ দতে কাঁদতে যন্ত্রণায়
কুঁকড়ে ওঠে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন