সমকালীন ছোটগল্প |
সোমনাথের আশ্চর্য প্রদীপ
আমাদের
রেল কলোনির বিলকিস বানু গর্বের সঙ্গে বলতো - মেরে পাস জাদুই চিরাগ হ্যায়।
টাটানগর
রেল কলোনিতে বিলকিসদের কোয়ার্টারটা ছিলো জোড়া কোয়ার্টার। এমনিতে টাটানগর রেল কলোনিতে
কোয়ার্টারগুলো সারিবদ্ধভাবে পরষ্পর যুক্ত হয়ে থাকতো। আর তাদের বলা হতো ব্লক। যেমন
আমরা থাকতাম Block 97এ। অধিকাংশ ব্লকের মতো ঐ ব্লকটাতেও ছিলো সাতটা কোয়ার্টার। আমাদের
কোয়ার্টারটা ছিলো সাত নম্বর কোয়ার্টার। ১ আর ৭ নম্বর কোয়ার্টারের অবস্থান ছিলো সারির দুই প্রান্তে। এ জন্য তাদের একটা এডভান্টেজ
ছিলো। বাকি সব কোয়ার্টারের বাগান থাকতো কেবল সামনে। আর দুই প্রান্তের কোয়ার্টারের
বাগান অনেকটা, সামনে এবং পাশে। আর বিলকিসদের কোয়ার্টারের বাগান ছিলো তার চারপাশেই।
এই সুবিধেটা ওরা পেয়েছিলো কারণ ওদের ব্লকটা
সাত কোয়ার্টারের ছিলো না। ওদেরটা ছিলো দুটো
কোয়ার্টারের ব্লক। এবং নানা কৌশল ও চেষ্টা চরিত্র করে বিলকিসের বাবা এবং কাকা ঐ দুটো
কোয়ার্টারকে দুই ভাইয়ের নামে ‘এলোট’ করিয়ে নিয়েছিলো। ফলে পাশাপাশি দুটো কোয়ার্টারই
ওদের। বিলকিস অহঙ্কার করে বলতো - হমলোগকা হ্যায়
জুড়বা খোলি।
কোয়ার্টারকে
তখন অনেকেই খোলি বোলতো। বিলকিসের খুব অহঙ্কার করার স্বভাব ছিলো। খুব সুন্দরী ছিলো।
গোরি গোরি খুবসুরত লড়কি। চোখমুখ নাক তীক্ষ্ণ কাটা কাটা। মা বলতেন ওরা কাশ্মিরী মুসলিম।
ওরা ওরকম সুন্দরীই হয়। কলোনির বাকি মুসলমানরা ওদের সঙ্গে মেলামেশা কম করতো। ওদের বিরুদ্ধে
তাদের অভিযোগ ছিলো। ওদের মেয়েরা পর্দা কম করে। মানে ওদের মেয়ে বউয়েরা বোরখা পড়ে
না। আর ওরা সুন্নি নয় সিয়া। আমরা সিন্নি চিনতাম। সুন্নি কি বস্তু জানতাম না। সিয়াও
জানতাম না। আমরা পর্দা বলতে জানালা দরজার পর্দাই বুঝতাম। তাই মেয়ে বউদের পর্দা কম
না বেশি এই ব্যাপারটা যে কি সেটা ঠিক বুঝতাম না। বোরখা চিনতাম। মুসলিম মহিলাদের কেউ
কেউ সেটা পরতো। তবে অনেকেই পরতো না। তখন রেল কলোনির সব মহিলাদেরই ঘরে বাইরে বিস্তর কাজ করতে হতো। আর বোরখা পরে সেই সব কাজ করা
সম্ভব নয়। পুরুষদের শিফ্ট ডিউটির জন্য মেয়েদের
বাজার হাটও করতে হতো। মুসলিম মহিলাদেরা একমাত্র তখনই বোরখা পরতে দেখেছি। তাও সবাই নয়।
এবং বাজারে দরদাম করার সময় মুখের বোরখার ঢাকা
খুলতেই হতো। বোরখা পরে বাজারে এসে ফেরার সময়
বোরখা খুলে ব্যাগে ভরে দুহাতে ভরা থলি নিয়ে তাদের বাড়ি ফিরতেও দেখেছি। সুতরাং বোরখা
না পরার অভিযোগটাও শুধু মাত্র বিলকিসদের পরিবারের
জন্য খাটে না। তথাপি সেটা বলা হতো। এবং ঝগড়ার সময়, আমরাও বিলকিসকে ‘বেশরম বেপর্দা
সিয়া কোথাকার’ বলতাম। সম্পূর্ণ মানে না বুঝেই।
বিলকিসের
সাথে আমাদের ঝগড়াও খুব হতো। এ জন্য বিলকিসের অহঙ্কারী কথাবার্তাই দায়ী। বিলকিসের
সুন্দরী মম্মি বলতেন - মেরি এহ লাডলি বড়ি ঘমন্ডি ঔর বড়বোলি হ্যায়। বড়বোলি মানে
বাড়িয়ে কথা বলা। বিলকিসরা ছিলো চার বোন পাঁচ ভাই। খুড়তুতো ভাই আর খুড়তুতো বোন মিলে।
বিলকিস ছিলো সবার ছোটো। পড়তো আমাদের এক ক্লাস
নিচে। রেলওয়ে স্কুলের উর্দু সেকসনে। ওর মা আমার মাকে হেসে হেসে বলতেন, অব ঔর না। মেরি তো থৈলি খালি হো গই। দিদাও হেসে বলতেন,
বুঝছি মা, এইডা তোমার খইলদা ঝাড়া মাইয়া।
এটাও টাটানগর রেলওয়ে কলোনির একটা আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য ছিলো। অনেকেই নিজেদের মধ্যে আলাপ আর গল্প সল্প করতো নিজের নিজের ভাষায়। একজন বাংলা বলছে তো অন্যজন হিন্দি বলছে। কেউ ওড়িয়া বা কেউ তেলেগু। একটা ভাষার সাথে আর একটার ছিঁটেফোঁটা মিল নেই। তবু দিব্যি গল্প সল্প চলতো। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এর ওর ভাষা কিছুটা কিছুটা শেখা হয়ে যেতো। আমরা মনে করতাম বিলকিসরা হিন্দি বলে। কিন্তু ঘমন্ডি বিলকিস বলতো - নহি হিন্দি নহি। হম লোগ উর্দু বোলতে হ্যায়। উর্দু হিন্দি সে জেয়াদা খুবসুরত জবান হ্যায়।
বিলকিসের
সাথে ঝগড়া যেমন ছিলো। ভাবও ছিলো খুব। ও নিজেদের মহেমান নওয়াজীর বড়প্পন দেখাতে প্রায়ই
আমাদের দাওত দিতো। দাওত মানে খাওয়ার নেমন্তন্ন। নিজের মায়ের কাছে বায়না করে করে
আমাকে গীতাকে আর সোমনাথকে সেই দাওত খাওয়াতো। বিলকিসের মা তার ছোটো মেয়ের এই আব্দার
হাসি মুখেই মানতেন। ফলে আমরা লচ্ছা, সেবই, ফিরনি, গলুস, আফগানি লাভাস ইত্যাদি নানা
রকম খাবারের স্বাদ পেতাম। অচেনা নাম অচেনা স্বাদ। কিন্তু খেতে দারুন। সে স্বাদ যেন
আজো মুখে লেগে আছে।
বিলকিসদের বিশাল বাগানে অনেক অনেক ফুল আর ফলের গাছ। তার মধ্যে একটা ঝোপালো কামিনী ফুলের গাছও ছিলো। সেটা ছিলো আমাদের ফেবারিট গাছ। গাছটাতে রাশি রাশি ফুল ফুটতো। যখন ফুল ফুটতো তখন ফুলের সুগন্ধে গোটা বাগানটা ভরে যেতো। কিন্তু সেই কামিনী ফুলের গাছটার প্রতি আমাদের আকর্ষণের কারণ ছিলো সম্পূর্ণ অন্য। সেই গাছটার ডালপালা মাটি পর্যন্ত ঝুলে ছিলো। ফলে তার মোটা গুড়ি ঘিরে একটা গোলাকার তাঁবুর মতো হয়ে গেছিলো। আমরা ডাল পাতা সরিয়ে তার ভেতরে ঢুকে পড়তাম। ভেতরটা দিব্যি পাতার ছাউনি দেওয়া ছোটো ঘরের মতো। তবে সেই ঘরটা যৌথ মালিকানাধীন ছিলো। ওদের সাত ভাই বোনেরই বরাবর হক ছিলো সেটার উপর। ওটা কখনো বিলকিসের দাদাদের গোপনে সিগারেট খাওয়ার জায়গা। তো কখনো দিদিদের কাহানি কিতাব আর শেরো শায়রি পড়ার নিরিবিলি জায়গা। আর আমাদের চারজনের জন্য খেলাঘর। যেখানে অতিশয় লজ্জাজনক কয়েকটা খেলা হতো। খেলাগুলো হচ্ছে পুতুলখেলা, রান্নাবাটিখেলা, আর গুড্ডা গুড্ডি কা শাদী। মানে পুতুলের বিয়ে। সব মেয়েলি খেলা। কোনোটাই ছেলেদের জন্য উপযুক্ত নয়। তবু আমি আর সোমনাথ যেতাম। আমাদের পৌরুষ গরিমা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে সেই সব খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। করতাম স্রেফ লোভের বশে। লোভটা দাওয়াত খাওয়ার। সেই লাভের জন্য জন্যে এটুকু মানসম্মানের ক্ষতি তো মেনে নিতেই হবে। তাছাড়া ঐ গোপন ঘরের ভেতরে ঢুকে আমরা কি করছি দুনিয়া তো সেটা জানছেও না। সেটাও আমাদের ভরসা যোগাতো। সুতরাং আমি আর সোমনাথ অনেকদিনই ঐ খেলাগুলো খেলেছি। কখনো কখনো আমাদের খেলতে মন করতো না। তখন গল্প সল্প হতো। সেখানেও মূল বক্তা বিলকিস। সে তার অজব গজব ডিং হাঁকতো। ডিং হাঁকা মানে অহঙ্কারের কথা। সে রকম ডিং হাঁকতে গিয়েই ও আমাদের জাদুই চিরাগের কথা বলেছিলো। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্প আমাদের জানা ছিলো। জানতাম সে প্রদীপ ঘষলেই প্রদীপের দৈত্য বা জিন্ন হাজির হয়ে যায় আর বলে, "হুকুম মেরে আকা"। তারপর তাকে যা হুকুম করা হয় সে ঝটপট সেটা করে দেয়। সেই জাদুই চিরাগ বা আশ্চর্য প্রদীপ নাকি বিলকিসদের ঘরে আছে। এক বড়ি সন্দুকমে বন্দ। ওটা ওর আব্বু যখন হজ্জ করতে গেছিলো, তখন আরব দেশের এক জাদুগরের কাছ থেকে অনেক অনেক আশরাফি দিয়ে কিনে এনেছে। এখন ওটা সন্দুকে বন্ধ করে রাখা আছে। বছরে একদিনই বের করা হয়। ঈদের আগের দিন। বের করে বিলকিসের আব্বু চিরাগের গায়ে হাত রগড়ে জিন্নকে ডেকে আনে। তারপর তাকে হুকুম দেয় সবার জন্য নই লিবাস, জেবরাত, জুতি আনার জন্য। আর জিন্ন ঝটসে সব এনে হাজির করে। ওরা সবাই ঈদের দিন সে সব পরে ঠাট দেখিয়ে মসজিদে যায়। জিন্নকে দিয়ে উমদা লজ্জতদার খানাও আনা হয়। ওরা সেসব মজা করে খায়।
বাড়ি
ফেরার পথে আমি আর সোমনাথ বলেছিলাম,
-
চিরাগ না কচু। সব বিলকিসের বানানো কথা। গুল তাপ্পি।
গীতা
বলেছিলো,
-
না রে। ঈদের সময় ওরা সত্যি সত্যি কতো সুন্দর সুন্দর জামা পরে। অমন সুন্দর জামা কাপড়
এখানকার কোনো দোকানেই পাওয়া যায় না।
ঈদের
সময় বিলকিস বা অন্য মুসলিমরা আমাদের দাওয়াত দিতো না। তবে ঘরে ঘরে মেওয়া আর লচ্ছা
পাঠাতো।
এই মিলমিশের জগতে হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর দূর্যোগ এসে হাজির হয়েছিলো। সালটা মনে নেই। খুঁজলে পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু খোঁজার একবিন্দু ইচ্ছেও আমার নেই। টাটানগর জামশেদপুরের জন্য সেটা বড়ই লজ্জা আর কুন্ঠিত হওয়ার মতো কয়েকটা কালোদিন। তিনদিন ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গোটা শহর জ্বলেছিলো। সেই আগুন চলে এসেছিলো আমাদের টাটানগর রেলওয়ে কলোনিতেও। অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিলো। লুটপাট ঘটেছিলো। আর ঘটেছিলো একটা অগ্নিকাণ্ড। বিলকিসদের দুই কোয়ার্টারের আলাদা ইউনিট, যেটা ওদের আব্বু আর চাচা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যোগাড় করছিলো, সেটাই ওদের সর্বনাশের কারণ হয়ে গেছিলো। আলাদা ব্লক। আর সে দুটো আর কোনো কোয়ার্টারের সাথে যুক্ত নয়। দুটোই মুসলমানদের। সুতরাং নিশ্চিন্তে আগুন লাগানো যায়। শয়তানরা এক রাতে সেটাই করেছিলো। পেট্রোল ঢেলে বিলকিসদের জোড়া কোয়ার্টারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। দাউ দাউ সর্বগ্রাসী আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছিলো। একটাই মন্দের ভালো। বিলকিসরা সবাই আগে ভাগে পালাতে পেরেছিলো। তাদের কারো কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি। সারা রাত জ্বলার পর পরদিন সকালে আগুন নেভানোর দমকল এসেছিলো। হোস পাইপের জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করেছিলো। বেশ কঠিন কাজ। একটাই দমকল। কাছে পিঠে জলাশয় নেই। দমকলের জল ফুরিয়ে গেলে দূরের বি এন আর বাঁধ থেকে জল ভরে আনতে হচ্ছিলো। এ সবই আমরা দুরু দুরু বক্ষে দেখে যাচ্ছিলাম। একসাথে ভয় পাচ্ছিলাম আর কান্নাও পাচ্ছিলো। তিন চারদিন লেগে গেছিলো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। বাড়িটা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিলো। বাগানের গাছটাছগুলোও আগুনে ঝলসে গেছিলো। ঘরের কাছের গাছগুলো পুড়ে কাঠ। পুলিশ আর দমকলের লোকরা হাত মাইকে সবাইকে সাবধান করে দিয়েছিলো। খবর্দার কেউ যেন ঐ পোড়া ঘরের দিকে না যায়। আগুন খুব সেয়ানা শয়তান। আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকতে ওস্তাদ। যে কোনো সময় আবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। এছাড়া পোড়া বাড়ির কমজোর দেওয়াল আচমকা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তেও পারে। সুতরাং ঐ অঞ্চলে যাওয়া মানে একরকম বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া। সুতরাং সবাই সাবধান। কেউ যেন ভুলেও ওদিকে না যায়।
আমরা
সাবধান হয়ে গেছিলাম।
শৈশবের
নানা রকম দুর্বলতা যেমন আছে তেমন শক্তিও আছে। বিলকিসদের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের
সেই দুর্বলতা আমাদের চোখের জল ফেলিয়ে ছিলো। আর আমাদের শক্তি কয়েকদিনের মধ্যেই সেই
দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছিলো।
একদিন
সন্ধ্যায় আমাদের কোয়ার্টারের ছাদে শুয়ে সন্ধ্যা হওয়া দেখছি। এটা আমার আর গীতার
খেলা ছিলো। আমরা ছাতে শুয়ে শুয়ে পাখিদের বাসায় ফেরা আর তারাদের ফুটে ওঠা দেখতাম।
ছাদে ওঠার জন্য কোনো সিড়ি-টিরি ছিলো না। তবে
আমাদের উঠোনের পেয়ারা গাছটা বেয়ে সহজেই ছাতে ওঠা যেতো। সেদিন আমি আর গীতা শুয়ে আছি।
দেখলাম একসময় পেয়ারা গাছ বেয়ে সোমনাথ উঠে এলো। আমাদের কাছে এসে খবরের কাগজ মোড়া
একটা জিনিষ দেখালো।
-
কি এটা?
-
আশ্চর্য প্রদীপ। বিলকিসের জাদুই চিরাগ।
ততক্ষণে
খবরের কাগজের মোড়ক খুলে বস্তুটা বের করে এনেছে সোমনাথ। কালিঝুলি মাখা একটা ধাতব প্রদীপ।
আমি
ভালো করে দেখবো বলে হাত বাড়িয়ে কালি ঝুলি মুছতে গেলাম। শশব্যস্ত হয়ে সোমনাথ প্রদীপটা
আমার হাতের নাগালের বাইরে সরিয়ে নিয়ে বলে উঠেছিলো,
-
ক্ষেপেছিস? ঘষা লাগলে এক্ষুনি প্রদীপের দৈত্য এসে যাবে। তখন কি হবে?
-
ভালই তো। এসে গেলে ভালো ভালো জিনিষ চেয়ে নেবো।
পাশ
থেকে গীতাও বলে উঠেছিলো,
আমি
আনতে বলবো বিলকিসের মতো সিল্কের সালোয়ার কামিজ। জড়ি আর চুমকি বসানো ওড়নি। আর গয়না।
সোমনাথ
ধমকে চুপ করিয়ে দিয়ে ছিলো। আর বলেছিলো,
-
অনেক কষ্টে চুপিচুপি ওখানে গিয়ে বহুত খুঁজে পেতে তবে প্রদীপটা পেয়েছি। এর দৈত্যের
কাছে যা চাইবার তোরা না আমিই চাইবো। আর কেউ নয়।
এটা
অবশ্যি মানবারই কথা। ঐ বিপজ্জনক ভয়ঙ্কর জায়গায় যাওয়া, তারপর পোড়া ছাইয়ের স্তুপ
ঘেঁটে প্রদীপ খুঁজে বের করা, অসম্ভব সাহসের কাজ। তারপর সোমনাথকে সে কাজটা করতে হয়েছে
সবার নজর বাঁচিয়ে। এ কাজ একমাত্র সোমনাথের পক্ষেই সম্ভব। সুতরাং একমাত্র সোমনাথেরই
হক আছে, প্রদীপের দৈত্যকে ডেকে এনে তাকে দিয়ে তার নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করানোর।
আমরা
দুজনেই সেটা মেনে নিয়েছিলাম। তবে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-
কি চাইবি তুই? রবিনহুড সাইকেল?
ঐ
সাইকেলটা তখন খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো। সোমনাথ মাথা নেড়ে বলেছিলো,
-
না। অন্যকিছু।
-
তবে কি রাজদূত মোটর সাইকেল? খুব ভারি হয় কিন্তু। সামলাতে পারবি? তারচেয়ে...
সোমনাথ
হাত তুলে আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলেছিলো,
-
তোদের ফালতু মাথা ঘামাতে হবে না। কি চাইবো সেটা আমার ঠিক করাই আছে। তবে সেটা লুকিয়ে
লুকিয়ে চাইতে হবে। আর চাইতে হবে একদম মাঝ রাতে। ফলটা সবাই টের পাবে সকালে।
কি
সেই চাওয়া সোমনাথ সে রহস্য না ভেঙ্গেই চলে গেছিলো। আমরাও ছাত থেকে নেমে এসেছিলাম।
তিনদিন
পর একদিন সোমনাথ এসে আমাদের বললো,
-
সব ফালতু। ওটা কোনো আশ্চর্য প্রদীপ টদিপ নয়। বিলকিসের আব্বু ওকে বাজে ঢপ দিয়েছিলো।
-
তুই কি করে জানলি?
-
তিন রাত্তির ধরে কত কতবার চেষ্টা করলাম। কোনো দৈত্য বা জিন্ন এলো না তো!
সত্যিই
খুব আশাভঙ্গের কথা। আমরাও সোমনাথের সাথে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে রইলাম। তারপর এক সময়
জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-
প্রদীপ ঘষে কি চাইছিলি তুই?
-
এখন আর জেনে কি হবে? প্রদীপটা তো আমি বি এন আর বাঁধের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। বাজে
জিনিস কাছে রেখে কি লাভ?
তখন বলেনি। তবে পরে সোমনাথ আমাকে জানিয়েছিলো, প্রদীপের দৈত্যের কাছে কি ছিলো ওর চাওয়া। বিলকিসদের বাড়ি বাগান সব আগের মতো করে দিতে হবে। এমনকি সেই কামিনী ফুলের গাছটাকেও।
অত্যন্ত
দুঃখের কথা, তার সেই ইচ্ছে পূরণ করতে কোনো প্রদীপের দৈত্য আসেনি।
এখন
জানি, এসব কাজ কোনো দৈত্য দানোর নয়। মানুষের। একমাত্র তারাই পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন