কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৪ |
এক্স...
বারান্দার
কোণে জড়োসড়ো দাঁড়িয়ে আছে ভালোবাসা। আপাতত কেউ চাইছে না ওকে আর। আপাতত একা সে।
নতুন
ঝকঝকে বাড়িতে বেমানান জায়গা জুড়ে। ললিতা ফেলতে পারছে না প্রাণে ধরে। অথচ রাখতেও অস্বস্তি।
সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে শুধু কাঠামো জানাচ্ছে বসন্তস্মৃতি।
শ্বশুরবাড়ির
সম্পত্তি। দেরাজটা আদতে খুড়শ্বশুরের। তিনি পেয়েছিলেন বিবাহের যৌতুক। হৈমন্তীবালা দেবী।
এবাড়িতে সকলেই দেবী, কৌলিন্যে বনেদিয়ানায়। দাসী নয়।
খসখসে
বেনারসী আর বেগমপাড় শাড়ির পরে এলো তাকে তাকে পাটভাঙা ধুতি, ছাপাশাড়ি আর তার ফাঁকে গুঁজে রাখা যত্নের গোপনে
হলুদ হয়ে যাওয়া অস্পষ্ট চিঠি। কে লিখেছিল! কাকে! এখন আর তা জানা যায় না। শাশুড়ির আমল
হয়ে এলো ললিতার ভাগে।
একপাশে
অযত্ন ছেঁড়া সম্পর্ক নিয়ে অপরাধীর মতো সে দাঁড়িয়ে থাকে।আশা করে না মানুষের কাছে কিছুই।
প্রতিদিন
সকালে বারান্দায় এলে ওকে দেখে ললিতা। কবে থেকেই তার মনের কথাগুলো বিড়বিড় করে দেরাজ
বন্দী করা অভ্যাস হয়ে গেছে।
যা
কিছু মূল্যবান কথা, গোপন আর অবৈধ, হতাশা আর অবিমৃশ্যকারিতার কথা, সব।
শাশুড়ি
গত হওয়ার পর গুপ্তধন আবিষ্কারের মেতে ওঠা সেইসব দুপুর। কথা বলত দেরাজ। অনেক কথা।
এই
বাড়ির সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলেটির কথা যে নিরুদ্দিষ্ট, তাই তার বয়স বাড়েনি। সমাজ বদলের
স্বপ্নে রেখে গেছে খোলস ছেড়ে তাকে, ঠাণ্ডায় অন্ধকারে।
সেই
মেয়েটার হলুদ চিঠি সবুজের ছোপে গলি দিয়ে চলাচল ফর্সা কোঁকড়া চুল যুবকের কথা। কয়েদ থেকে
বেরোয়নি যে। তার কথা লেখা আছে ছেঁড়া চিঠিতে এই দেরাজে কোণে। ললিতা সম্পর্ক করেছিল এইসব
গোপনের সঙ্গে। ধুলো পড়েছে। এখন ঠাণ্ডার সময়। ওভাবেই ঘরের বাইরে... দেরাজটা। একাই।
বিক্রী করে দেবে ভাবছে ললিতা। দ্বিধা সমুদ্র আঁকছে।
করবে
কি? মায়া লেগে আছে প্রতিটা তাকে, পালিশের গায়ে। তবু, আসবাবই তো! ভালোবাসা তো নয়!
দেরাজে
শেষের তাকের বাঁ কোণে লেগে থাকা প্রাচীন রক্তের দাগ। অনেক বছরের আস্তরণের পরিসরে এখনও
বেদনার মতো লেগে আছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। কার রক্ত? কার?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন