রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

অভিজিৎ মিত্র

 

সিনেমার পৃথিবী ২৫  




এই পর্ব থেকে আবার আমাদের বিশ্বভ্রমণ শুরু হচ্ছে। যে যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার  ছবি আমরা এখনো অব্ধি একেবারেই ছুঁইনি, এবারে আমি সেইসব জায়গাগুলো একে একে আলোচনায় আনার চেষ্টা করব। দেখুন, এ পর্যন্ত আমরা এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অফ্রিকা – এই সব মহাদেশ  কোন না কোনভাবে অলোচনায় এনেছি (সব জায়গা নয়)। কিন্তু ছুঁয়েও দেখিনি শুধু অস্ট্রেলিয়া। তাই এই পর্বে আমরা অস্ট্রেলিয়ার ছবি নিয়ে আলোচনা করব।

অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউ গিনি আর কিছু ছোট দ্বীপপুঞ্জ – এই নিয়ে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ। এবং আপনারা নিশ্চয় জানেন যে অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি থাকা সত্বেও নিউজিল্যান্ড কিন্তু কোনভাবেই এই মহাদেশের অংশ নয়। নিউজিল্যান্ড (এবং বিশ্বের আরো কিছু দ্বীপ) পৃথিবীর কোন মহাদেশেরই অংশ নয়। কিন্তু আমাদের আলোচনার সুবিধের জন্য আজ আমরা এই আলোচনায় নিউজিল্যান্ডকেও টেনে নেব।

আমি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৩০টা মত ছবি দেখেছি। নিউ গিনি বা তাসমানিয়ার কোন ছবিই দেখিনি। অতএব এই মহাদেশের ছবি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা কম। সেই কম অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের আলোচনা। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার যে যে ছবির নাম উল্লেখ করতেই হয় – ওয়াক অ্যাবাউট (১৯৭১), পিকনিক অ্যাট হ্যাঙ্গিং রক (১৯৭৫), ব্রেকার মোরান্ট (১৯৮০), গ্যালিপলি (১৯৮১), ক্রোকোডাইল ডান্ডি (১৯৮৬), প্রুফ (১৯৯১), দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব প্রিসিলা (১৯৯৪), বেব (১৯৯৫), শাইন (১৯৯৬), দ্য ক্যাসল্‌ (১৯৯৭), চপার (২০০০), মুলা রুজ (২০০১), ল্যান্টানা (২০০১), র‍্যাবিট প্রুফ ফেন্স (২০০২), টেন ক্যানোজ (২০০৬), অস্ট্রেলিয়া (২০০৯), এনিমাল কিংডম (২০১০), টুমেলা (২০১১) ও দ্য গ্রেট গ্যাটস্‌বি (২০১৩)। এবং নিউজিল্যান্ডের – দ্য পিয়ানো (১৯৯৩), হেভেনলি ক্রিচারস (১৯৯৪), হোয়েল রাইডার (২০০২) ও বয় (২০১০)। এর থেকে আজ আমরা অস্ট্রেলিয়ার চারটে ও নিউজিল্যান্ডের দুটো ছবি বেছে নেব। তবে ক্রোকোডাইল ডান্ডি বা অস্ট্রেলিয়া-র মত বক্স অফিস হিট ছবি আমি বাছব না, আমার বাছাই হবে জীবন ও আর্ট হাউজের মিশ্রণ।  সেই লিস্টে থাকবে - ওয়াক অ্যাবাউট (১৯৭১), ব্রেকার মোরান্ট (১৯৮০), প্রুফ (১৯৯১) ও র‍্যাবিট প্রুফ ফেন্স (২০০২) [অস্ট্রেলিয়া] এবং দ্য পিয়ানো (১৯৯৩) ও হোয়েল রাইডার (২০০২) [নিউজিল্যান্ড]।

তবে শুরুর আগে একটা কথা। ওপরের ছবির লিস্ট দেখে আপনারা ভাবতেই পারেন যে সত্তর থেকে নব্বই দশক অব্ধি এত ছবির নাম কেন? এবং কেন তার আগেকার কোন ছবির নাম নেই? আসলে, ইউরোপে যে নব্য বাস্তব সিনেমার ঢেউ এসেছিল চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে, অস্ট্রেলিয়ায় সেটাই এসে লাগে সত্তরের দশকে – স্থায়ী হয় নব্বইয়ের দশক অব্ধি। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন আমার এই লিস্ট বানানোর কারণ। অস্ট্রেলিয়ার নিউ ওয়েভ ছবির একটা অংশ জুড়ে আছে  ওখানকার আদিবাসী বা অ্যাবঅরিজিনাল মানুষদের আদিম জীবন ও তাদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ মানুষের পার্থক্য। সেটা আমাদের লিস্টেও বুঝতে পারবেন। 

একদম শুরুর দিকের অস্ট্রেলিয়ান নিউ-ওয়েভ ছবির কথা বললে ‘ওয়াক অ্যাবাউট’-এর কথা আসে। নিকোলাস রোগের ১০০ মিনিটের ছবি। বেশির ভাগ শুটিং হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গল ও পরিত্যক্ত অঞ্চলে যাকে ওখানে আউটব্যাক বলা হয়ে থাকে। সিডনি শহরের এক কিশোরী ও তার ভাই স্কুল ছুটির পর তাদের বাবার সঙ্গে এইরকম এক আউটব্যাকে বেড়াতে আসে। কিন্তু সেখানে আসার পর হঠাৎ তাদের বাবা তাদের দিকে এলোপাথারি গুলি ছুঁড়তে থাকে। কিশোরী তার ভাইকে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে লুকোয়। সেখান থেকে দেখে তাদের বাবা তাদের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে নিজেকে গুলি করে মেরে ফেলে। সে এই কথা তার ভাইকে বলতে পারে না কারণ তার নাবালক ভাই এই পুরোটাই একটা খেলা ধরে নিয়েছে। কিন্তু এবার তো বাড়ি ফিরতে হবে। সেই পরিত্যক্ত জংলা অঞ্চল থেকে চিনে ফিরতে গিয়ে তারা রাস্তা হারিয়ে ফেলে। পথিমধ্যে দেখা হয় এক আদিবাসী কিশোরের সঙ্গে। ওদের আকারে ইঙ্গিতে বলা হাত মুখে নড়া দেখে  সেই আদিবাসী কিশোর তাদের সঙ্গে পথ চলতে থাকে, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে। নিজে ক্যাঙারু বা মোষ শিকার করলে এদের তার ভাগ দেয়। একদিন সেই কিশোর তাদের আদিবাসী প্রথায় সারাদিন নেচে এই কিশোরী মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে, সঙ্গম করার অনুমতি চায়। মেয়েটি বুঝতে না পেরে ভয়ে এক ভাঙা ছাউনির ভেতরে ঢুকে যায়। সারাদিন নাচার পর আদিবাসী কিশোর একে নিজের অপমান হিসেবে দেখে আত্মহত্যা করে। তার দেহ গাছে ঝুলতে থাকে। পরের দিন ভাই-বোন হাঁটতে হাঁটতে এক ফেলে দেওয়া খনির কাছে আসে। সেখানে কোন একজন তাদের শহর যাবার রাস্তা বলে দেয়।

এই ছবির প্রথম পাওনা হল কিশোরীর ভূমিকায় ১৭ বছরের জেনি অ্যাগুটারের দারুন অভিনয়। কৈশোরের চঞ্চলতা ও বয়ঃসন্ধির লজ্জা, এই দুয়ের মিশেল তার চরিত্রে। দিদি হিসেবে ভাইকে বাঁচানোর আকুলতা। পরের পাওনা নিকোলাস রোগের পরিচালনা ও ক্যামেরা। এই ছবিতে দুটোই উনি সামলেছেন। সিনেমার প্রয়োজনে কিছু বিতর্কিত শট্‌ করা দরকার ছিল, সেগুলো উনি নির্দ্বিধায় করেছেন। সভ্য মানুষ ও অসভ্য মানুষের সংজ্ঞার সীমারেখা মুছে দিয়েছেন। বক্স অফিসে এই ছবি খুব খারাপ করেছিল, কিন্তু আজ এই সিনেমা পৃথিবীর সেরা ছবিগুলোর অন্যতম। 

৮০ এবং ৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার দুই বিখ্যাত সিনেমা ‘ব্রেকার মোরান্ট’ ও ‘গ্যালিপলি’ যুদ্ধের আবহ নিয়ে বানানো। দুই সিনেমাই দর্শকের কাছে টানটান  উপস্থাপন। কিন্তু সামাজিক মনস্তত্ব ও ড্রামা হিসেবে ব্রেকার মোরান্ট-কে খানিক এগিয়ে রাখতেই হয়। ১৯০২ সালে ব্রিটিশ মিলিটারিতে তিনজন অস্ট্রেলিয়ান লেফটেনান্টের কোর্ট মার্শাল এবং ফাঁসি হয় – হ্যারি মোরান্ট, পিটার হ্যানকক ও জর্জ উইটন। এদের দোষ ছিল যে এরা অ্যাংলো-আফ্রিকান যুদ্ধের সময় বেশ কয়েকজন আফ্রিকান নিরীহ মানুষকে খুন করে। এদের বিচারের সময় এরা একবারও দোষ অস্বীকার করেনি, বরং ঐ মানুষদের কেন মারা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছিল। এক সত্যি ঘটনা অবলম্বনে টানটান এই সিনেমায় এই তিন ফাঁসির আসামী লেফটেনান্টদের অস্ট্রেলিয়ান হিরো ও শহীদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। দুর্দান্ট কোর্টরুম ড্রামা, উত্তেজনা এবং বেশ গোছানো আর্গুমেন্ট। যদিও ঐতিহাসিক কিছু বিচ্যুতি আছে, কিন্তু সিনেমা হিসেবে দারুন। এক কথায় যা যুদ্ধের সার্বিক অপ্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেয়। এক প্রশ্ন খাড়া করে – যুদ্ধের সময় নীতিকথা বলতে কী বুঝব?  

ব্রেকার মোরান্ট আমার ভাললাগা ছবির তালিকায় আরো এক কারণে। এর  সিনেমাটোগ্রাফি। ১০৭ মিনিটের এই ছবির লং শট, প্যানোরামিক শট, ক্লোজ শট এবং ফোকাসড্‌ শট, ক্যামেরার অ্যাঙ্গল - বেশ ভাল। কিছু সিনে রঙের কনট্রাস্ট এবং সিনে এগিয়ে যাবার গতি ভাল লাগে। সবশেষে, শক্তিশালী অভিনয়ের কথা না বললে এই ছবির প্রতি অবিচার হবে। কোর্ট মার্শালে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে ‘we shot them under rule 3-0-3’ বলা – এডওয়ার্ড উডওয়ার্ডের এই অভিনয় ভোলা যায় না।

প্রুফ ছবির পাওনা এর অদ্ভুত থিম। উপরি পাওনা হুগো উইভিং ও রাসেল  ক্রো’র ফাটাফাটি অভিনয়। হুগো এখানে এক অন্ধ ফটোগ্রাফারের ভূমিকায়। সে ছোটবেলা থেকেই সন্দিহান। তার মনে হয় আশেপাশের সবাই তার অন্ধত্বের সুযোগ নিচ্ছে। হয় তাকে ঠকাচ্ছে নয় তাকে দয়া করছে। বড় বয়সে সে তার চারপাশের ছবি তোলে, কাউকে জিজ্ঞেস করে সেখানে কী দেখা যাচ্ছে। তারপর  ছবিটা ব্রেল অক্ষরের সাথে লিখে রাখে। এগুলো তার ভবিষ্যতের ‘প্রুফ’ হিসেবে রাখতে ভালবাসে। হুগোর পরিচারিকা সিলিয়া এইসব কাজে হুগোকে সাহায্য করে এবং হুগো তার সান্নিধ্য উপভোগ করে। কিন্তু একদিন এদের দুজনের মাঝে এসে উপস্থিত হয় রাসেল। ব্যস্‌, সিনেমা জমে যায়।

জসলিন মুরহাউজের ৮৬ মিনিটের এই ছবি উপভোগ্য। প্রতি চরিত্রে চ্যালেঞ্জ। মনস্তত্ব। মানুষের সঙ্গে মানুষের জটিল সম্পর্ক। অন্ধত্ব সত্বেও প্রতি চরিত্রকে খুব কাছাকাছি পর্যবেক্ষন। শুধুমাত্র মনস্তাত্তবিক থিমের জন্যই এই ছবিকে সেরা অস্ট্রেলিয়ান ছবির দৌড়ে রাখতেই হবে।

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, দেশের তরুণদের জীবনের সঠিক অর্থ  বোঝানোর জন্য এবং সহিষ্ণুতা শেখানোর জন্য আমি কী কী সিনেমা দেখতে বলব, তাহলে আমার তরফ থেকে একটা নাম অবশ্যই হবে ‘র‍্যাবিট প্রুফ ফেন্স’।  শুধু নিউ-ওয়েভ সিনেমা নয়, এই ছবি অস্ট্রেলিয়ার এক হারিয়ে যাওয়া অমানবিক প্রথার জীবন্ত দলিল। আদিবাসী (অ্যাবঅরিজিনাল) বাচ্চাদের নিয়ে বিশ শতকের শুরু থেকে মোটামুটি ষাটের দশকের মাঝামাঝি অব্ধি অস্ট্রেলিয়ার কী নির্মমতা চলেছে, এই ছবি দেখলে তা খানিক বোঝা যায়। এই ছবি নেওয়া  হয়েছে ডোরিস পিলকিংটনের ‘ফলো দ্য র‍্যাবিট প্রুফ ফেন্স’ নামক উপন্যাস  থেকে, যা এক সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা। লেখিকার মা এবং তার আরো দুই বোনকে, সবাই আদিবাসী, ছোটবেলায় তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এক সেটলমেন্ট ক্যাম্পে। উদ্দেশ্য, শ্বেতাঙ্গ পরিবারের কাজের মেয়ে হিসেবে তাদের তৈরি করা। কিন্তু সেই তিনটি মেয়ে সেই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসে। তারা প্রায় ন’সপ্তা ধরে ১৬০০ মাইল হেঁটে আবার তাদের  ঘরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এই দীর্ঘ সময় তারা অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত খরগোশ আটকানোর কাঁটাতারের বেড়া ‘র‍্যাবিট প্রুফ ফেন্স’ বরাবর হাঁটে। দীর্ঘ দুর্গম পথ। এই নিয়েই সেই উপন্যাস। এবং উপন্যাসের ছায়ানুসারে ফিলিপ নয়েসের দেড় ঘন্টার এই বিখ্যাত ছবি।

সোজাসাপ্টা সিনেমা। আদিবাসী বাচ্চাদের ভাল অভিনয়। এবং আউটডোর ক্যামেরার কাজ। এই তিনে মিলে এই ছবিকে অস্ট্রেলিয়ান ছবির কিংবদন্তী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।  

এবার নিউজিল্যান্ডের ছবি ‘দ্য পিয়ানো’। এক মূক যুবতী আদা এবং তার  নাবালিকা মেয়ে ফ্লোরা স্কটল্যান্ড থেকে দীর্ঘ জাহাজ যাত্রা শেষ করে নিউজিল্যান্ডের এক সমুদ্রতটে এসে পৌঁছয়। তাদের সঙ্গে তাদের জিনিষপত্র এবং এক পিয়ানো। আসলে আদা এক পিয়ানোবাদক। নিউজিল্যান্ডের ধনী ব্যবসায়ী স্টুয়ার্টের কাছে স্ত্রী হিসেবে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেই নতুন স্বামীর কাছে বহু বছরের বোবা আদা তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছে। উদ্দেশ্য, এক উন্নত জীবনযাত্রা। কিন্তু সেখান পৌঁছনোর পর আদা তার পিয়ানো শিক্ষকের সঙ্গে এক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরে।

সাহসী থিম ও হোলি হান্টারের অস্কার পুরস্কার পাওয়া অভিনয়। কিন্তু শুধু সেটাই এই ছবির একমাত্র পরিচয় নয়। এর আসল কাজ লুকিয়ে আছে সিনেমাটোগ্রাফি-তে। ভাবুন, সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে এক বড় নৌকোয় পিয়ানো আনা হচ্ছে। কখনো ঢেউ পিয়ানো ঢেকে দিচ্ছে, আবার তা দেখা যাচ্ছে। হোলি পিয়ানো বাজানোর সময় তার শিক্ষক তার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করছে, যেটা শরীর থেকে দু’ফুট দূরে রাখা ক্যামেরার ১৮০ ডিগ্রি ঘোরানো ক্লোজ শটে  অনায়াসে উঠে আসছে। পিয়ানোর রিড বরাবর ক্যামেরা ঘুরতে ঘুরতে একটা রিড ফাঁকা। কাট্‌। আর বারবার সমুদ্রের তীরে রাখা সেই পিয়ানোর মোটিফ। জেন ক্যাম্পিয়নের প্রায় দু’ঘন্টার এই সিনেমা আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি। উপভোগ করেছি গ্রীক ভাস্কর্যের মত আদরের দৃশ্যগুলোও। আপনারাও দেখুন।

নিউজিল্যান্ডের অ্যাবঅরিজিনাল বললে মাওরি সম্প্রদায়। তাদের রীতি-নীতি, বহু শতকের কুসংস্কার। আর সেই কুসংস্কার ভাঙতে বদ্ধপরিকর তাদেরই এক কিশোরী মেয়ে। এই নিয়ে ‘হোয়েল রাইডার’। মাওরি সম্প্রদায়ের নেতা হয়  একমাত্র ছেলেরা। কিন্তু এক মাওরি কিশোরী ‘পাই’ তার জমজ ভাই মারা যাবার পর ১২ বছর বয়সে নেতা হবার জন্য তার ঠাকুমা ও কাকার সাহায্যে ট্রেনিং নিয়ে নিজেকে তৈরি করে ফেলে। তার রক্ষণশীল দাদুকে মানিয়ে নিলেই সে এবার নেতা হতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার শক্ত কিছু পরীক্ষা পাস করা। তারপর?

নিকি কারো-র ১০১ মিনিটের সিনেমা এর প্রধান চরিত্র কিশা ক্যাসল হিউজেসকে (পাই-এর ভূমিকায়) মাত্র ১৩ বছর বয়সেই স্টার বানিয়ে দিয়েছিল। সিনেমার শুটিং হয়েছিল হোয়াঙ্গারা নামক এক জায়গায়, যেখানে মাওরি-রা থাকে, এবং অকল্যান্ডে। নেতা হিসেবে তুলে ধরার জন্য ক্যামেরা পাই-কে ঠিক মাঝখানে রেখে ফ্রেম থেকে ফ্রেমে ঘুরেছে। নিচু অ্যাঙ্গল থেকে পাই-এর ছবি তুলেছে যখন পাই কিছু বলছে। ক্লোজ শটে পাই-এর কান্না দেখিয়ে তাকে মানুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চেয়েছে। একটা গোষ্ঠীর ভেতর প্রত্যাশা,  মতপার্থক্য ও হতাশা, এমনকি জেনারেশন গ্যাপ-এর দৃশ্যও ক্যামেরার চোখ এড়ায়নি।

কিন্তু একটা ব্যাপার আমার মনে হয় পাঠক-পাঠিকার নিশ্চয় এতক্ষণে চোখে  পড়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডে মহিলা পরিচালক ও ছবির মুখ্য চরিত্রে মহিলার প্রাধান্য। এর কারণ নিউজিল্যান্ডের আইন। নিউজিল্যান্ড  পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে মহিলাদের সমানাধিকার দেওয়া হয়েছিল। ১৮৯৩ সালে এই দেশে মহিলাদের ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয় এবং ১৯১৯ সালে মহিলাদের পার্লামেন্টে যাবার সুযোগ করে দেওয়া হয়। ১৯৪৯ সালে এদেশে এক আদিবাসী মাওরি মহিলা এম-পি হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়াও এ ব্যাপারে খুব একটা পিছিয়ে নেই। এক সমালোচক হিসেবে তাই ইচ্ছে করেই আমি এই মহাদেশ ও দেশের মহিলাদের কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা আনন্দের সঙ্গে সামনে রাখলাম।   

(ক্রমশ)  

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন