শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

সুবল দত্ত

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


মাছি

মাছির মতন ছ্যাঁচড় জীব আর দ্বিতীয় নেই। হাজার চোখ দিয়ে নিমেষে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মলমুত্র বসা রঙ রস সব, সবকিছু মুন্ডু তিনশো ষাঠ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেখে নেয়, চিনে নেয়। আর তেমনি মাছি স্বভাবের ছ্যাঁচড় একটা লোক। জানি না কোত্থেকে গন্ধ পায়, রোজ সকালে পরিত্রাতা ঈশ্বরের নাম নিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরোই, কিন্তু নাঃ পরিত্রাণ কই? একটা মাছি আর একটা লোক কোথায় যে ওত্‍ পেতে থাকে কে জানে, ঠিক সংগ নেয়। মাছি উড়তে উড়তে কানে চোখে কপালে ঘাড়ে বসে। মারতেও পারি না। বারবার তাড়াই, বারবার এসে গায়ে বসে। আর লোকটা? আগে পিছনে পাশে জামা হাত ধরে টান মেরে জবরদস্তি দাঁড় করায়। আধোয়া বাসী দুর্গন্ধ মুখ দিয়ে লালা ছিটিয়ে অশ্রাব্য গল্প আর খবর শোনায়, আর হাসি। আমার মর্নিংওয়াকের বারোটা বাজে। যতবার ওকে ‘আচ্ছা এবার আসি কেমন?’ বলে হাঁটা দিই, ততই দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে টানে। ঘর থেকে বেরনোর সব কটা পথ আমি ট্রাই করে নিয়েছি। ডেসটিনেশন, সময় বদলেছি। কিন্তু নাঃ। যখনই বেরোই, মাছি ও মাছিমানুষ আমার পিছু নেবেই। রোজ সকালে একটা খারাপ খবর ওনার দেওয়া চাইই। কোন মন্ত্রী ঘুষ খেলো, কার ঘরে সর্বনাশ হলো, কে পরলোকগত হলো। দুনিয়ার খারাপ খবরের ফিরিস্তি। এই তো আজ সকালে ঘর ছেড়ে মাত্র ক’পা এগিয়েছি, অমনি রাস্তার ধারে পাশের বাড়ির পালিত কুত্তার বিষ্ঠা থেকে বিন বিন করে উড়ে এসে মাছিটা আমার নাকে এসে বসল। আর একই সময়ে মহানন্দে নাচতে নাচতে প্রেম বিলোতে এসে গেলেন তিনি।

‘জয় গুরু’(আহা কী মধুর সম্ভাষণ) ‘খবরটা শুনেছেন কি না?’

(আমি আঁতকে উঠি, এইরে) না, ক্কি কি-হলো?

‘আরে গতকাল আমাদের পাড়ার মোড়ে একটা জম্পেশ রেপকেস হয়েছে। একেবারে রোমহর্ষক’।

মাছি তখন আমার নাকের ভিতর প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। আমি দ্রুত পা চালিয়ে এগোতে যাব, মাছিমানুষ আমার সামনে পথ আগলে দাঁড়াল। ‘জানেন তো আমি গোপনে সব তথ্য জোগাড় করেছি। সে এক ইতিহাস মশায়। শুনুন তবে’।

(আমি প্রাণপণে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করি) গতকালই তো একটা ইতিহাস  শোনালেন, আজকে আবার?

মাছি তখন আমার কানে ঢোকার চেষ্টা করছে।

‘আরে গতকাল তো পরশুদিনের ঘটনা বলেছি। কি বলবো বলতেও খারাপ লাগে আর না বলে পারি না। কালের ঘটনাও ওই। পলিটিক্যাল। তবে একেবারে সিনেমার মত। শুনুন বলছি। টাইম লাগবে’।

আমি ওনাকে জোর করে ঠেলে পাশ কাটিয়ে এগোই। মাছি তখন ঘাড়ে।

‘আজ একটু তাড়া আছে। কাল শুনি?’ কে কার কথা শোনে। আমার কাঁধে হাত রেখে জম্পেশ টান।

‘আরে না মশাই, এখুনি শুনে যান। সত্যিই বলছি, অমন দৃষ্টিনন্দন ঊরু আর ওইসব (হে ভগবান সকাল সকাল)। তার উপর পাঁচ সাতজন হাতে ঝাণ্ডা আর ব্যানার নিয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ করতে করতে ওই কর্মটি করলো, একদম ওপেন। যারা দেখেছে তারাই জানে। একেবারে স্বর্গীয় মশাই। একটু শুনলেও আপনি রস পাবেন’।

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন