সিনেমার পৃথিবী – ২৪
আজ হলিউডের স্বর্ণালী যুগের প্রিয় অভিনেত্রীদের
নিয়ে আলোচনা যারা আমাদের ছেড়ে অন্যলোকে চলে গেছেন। এখনকার দিনে হলিউডের নায়িকারা চরিত্রাভিনয়ের
দিকে বেশি ঝুঁকলেও স্বর্ণযুগে কিন্তু নায়িকাদের ঝাড়াই বাছাই হত প্রাথমিকভাবে তাদের
সৌন্দর্য ও গ্ল্যামার সূচক দেখে। যেমন মেরিলিন মনরো। এবং এর আগের পর্বেই বলেছি যে তখনকার
দিনে কিন্তু এইসময়ের মত সিনেমা ভিত্তিক চুক্তি হত না - চুক্তি হত প্রোডাকশন হাউজের
সঙ্গে, বেশ কয়েক বছরের জন্য। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ঐ সময়ের ভেতর অন্য
কোন সিনেমায় কাজ করতে পারতেন না। এবং যে যে নায়িকার অভিনয় দক্ষতা থাকলেও তার সৌন্দর্য
ফিকে হয়ে আসত, যে আর দর্শক টানতে পারত না, তার নাম দেওয়া হত ‘বক্স অফিস পয়জন’। আজ কিন্তু
আমরা যাকে আমাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখব, তাকেও ‘বক্স অফিস পয়জন’ তকমা দেওয়া হয়েছিল।
যদিও তার অতি বড় নিন্দুকেও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে অভিনয় দক্ষতায় তার নাম একদম
ওপরের দিকে রাখতেই হবে।
এই লেখা শুরু করতে গিয়ে অ্যালেন পো-র এক বিখ্যাত কবিতা মনে পড়ে গেল ‘Helen, thy beauty is to me / Like those Nicean barks of yore, / That gently, o’er a perfumed sea, / The weary, way-worn wanderer bore / To his own native shore’ এবং এই কবিতার ছায়ানুসারে বানানো আরেক বিখ্যাত কবিতা ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা / মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য, অতিদূরে সমুদ্রের পর / হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা / সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর / তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে’। সত্যিই, আজ আমরা যাদের নিয়ে আলোচনা করব, তাদের প্রত্যেকের ছবি দেখে আপনাদেরও এই কবিতা দুটোই মাথায় আসবে। এরা সবাই সেই প্রদীপ যারা নিজের সময়ে গোটা পৃথিবীকে আলোকিত করেছিলেন। এবং পাঠক, আপনাদের কি ছোটবেলার অরণ্যদেব কমিকের ‘ডায়ানা’ বা ম্যানড্রেকের ‘নার্দা’কে মনে আছে? ড্রিমগার্ল বলতে যা বোঝায়, এরা যেন ঠিক তাই। আজো আমি যখনই ইনগ্রিড বার্গম্যানকে ছবির পর্দায় দেখি, মনে হয় যেন সেইরকম কোন এক ড্রিমগার্লকে চোখের সামনে দেখছি।
তাহলে লিস্ট শুরু করি। আমার বানানো এই লিস্টে প্রথম নামঃ ক্যাথরিন হেপবার্ন। এই নিয়ে কারো কোন দ্বিমত থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। যদিও ওনাকেও যে ‘বক্স অফিস পয়জন’ তকমা দেওয়া হয়েছিল, সেটা তো একটু আগেই বললাম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু আমার পছন্দ অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইনগ্রিড বার্গম্যান ও তৃতীয় বেটি ডেভিস। এবং যে দুজনের নাম এদের আশেপাশে উল্লেখ না করলে আমার মাথা-আঙুল-কিবোর্ড থামবে না, তারা হলেন অড্রে হেপবার্ন ও এলিজাবেথ টেলর।
হ্যাঁ, এই প্রসঙ্গে এমন একজন ডাকাবুকো
নায়িকার নাম করতেই হবে যাকে অস্কার কমিটি বারবার উপেক্ষা করে ভুল করেছে। সেই ভুল ঠিক
করার জন্য অস্কার কমিটি তাকে শেষ জীবনে ১৯৮২ সালে অনারারি অস্কার দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু
তাতে কি এত বছরের ভুল শোধরায়? বারবারা স্ট্যানউইক। ‘ডবল ইনডেমনিটি’র (১৯৪৪) সেই কুখ্যাত
নায়িকা। ‘স্টেলা ডালাস’-এ (১৯৩৭) সীমানার বাইরে থেকে মেয়ের আলো ঝলমলে বিয়ের দিকে চেয়ে
থাকা এক অসহায় কিন্তু খুশি মা। ‘সরি, রং নাম্বার’-এর (১৯৪৮) হুইলচেয়ারে বসা এক সন্দিহান
প্রতিবন্ধী মহিলা। অস্কার কমিটি আসলে কোনদিন (হয়ত এখনো) বোঝেইনি যে অনেক ক্ষেত্রেই
তাদের চশমা দরকার ছিল। আরেকজন মানসিক সমস্যায় ভোগা নায়িকার কথা না বললে আমার মনের উশ্খুশ্
থেকে যাবে। ভিভিয়ান লেই। দার্জিলিং-এ জন্ম। সুতরাং জন্মসূত্রে বাঙালি। আর সেজন্যই ওনার
নাম এই লিস্টে না রাখলে আমার অধর্ম হবে।
ক্যাথরিন হেপবার্ন (১৯০৭-২০০৩) ছিলেন
এক স্বাধীনচেতা মহিলা, যিনি প্রায় ছ’দশক ধরে ৫২টি বিভিন্ন রকমের সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
অভিনয়ের জন্য সারা জীবনে ৫০টি পুরস্কার জিতেছেন যার ভেতর প্রথমেই বলতে হয় ১২বার অস্কার
নমিনেশন, ৪বার বিজয়ী, ৮বার গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন, ৬বার এমি নমিনেশন ও ১বার জয়লাভ এবং
৫বার বাফটা নমিনেশন ও ২বারের বিজয়। এছাড়াও কান ও ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং নিউইয়র্ক
ফিল্ম ক্রিটিক সার্কল থেকেও পুরস্কার পেয়েছেন। ওনার যে যে ছবি তালিকার একদম ওপর দিকে
থাকবে, সেগুলো হল - মর্নিং গ্লোরি (১৯৩৩),
অ্যালিস অ্যাডামস (১৯৩৫), ফিলাডেলফিয়া স্টোরি (১৯৪০), ওম্যান অব দ্য ইয়ার (১৯৪২), আন্ডারকারেন্ট
(১৯৪৬), দ্য আফ্রিকান কুইন (১৯৫১), সামারটাইম (১৯৫৫), দ্য রেইনমেকার (১৯৫৬), লং ডেজ
জার্নি ইন্টু নাইট (১৯৬২), গেস হু ইজ কামিং টু ডিনার (১৯৬৭), দ্য লায়ন ইন উইন্টার
(১৯৬৮) এবং অন গোল্ডেন পন্ড (১৯৮১)। নিজের কেরিয়ার যখন নিচের দিকে, তখন তা টেনে তোলার
জন্য উনি আর-কে-ও থেকে ‘ফিলাডেলফিয়া স্টোরি’র স্বত্ব কিনে নিয়ে আবার বেচে দেন, শুধুমাত্র
এই শর্তে যে উনি হবেন সেই ছবির নায়িকা। সেই ছবি দুর্দান্ত হিট হয় এবং ক্যাথরিন আবার
হলিউডের এক নম্বর নায়িকার আসনে বসেন। পরিণত বয়সে উনি অন্যধরনের ছবি করতে শুরু করেন এবং সেখানেও
সফল হন। এইরকম এক অ্যাডভেঞ্চার ও প্রেমের কাহিনী ছিল ‘দ্য আফ্রিকান কুইন’ যেটা নিয়ে
আমি আগের পর্বে আলোচনা করেছি। হামফ্রে বোগার্ট ছিলেন এই ছবির নায়ক। তাই আজ আর নতুন
করে ক্যাথরিনের অন্য কোন সিনেমা নিয়ে লিখব না।
ইনগ্রিড বার্গম্যান (১৯১৫-১৯৮২)–কে নিয়ে
আমি কিছু লিখলে তাতে পক্ষপাতিত্বের দোষ থাকতেই পারে কারণ উনি আমার অল টাইম ড্রিমগার্ল।
সৌন্দর্য্য, ব্যক্তিত্ব, হৃদয়ছোঁয়া হাসি, অনবদ্য
সংলাপ বলার ক্ষমতা, সোনালি চুল, প্রেমে পড়া চাউনি – কী ছিল না ওনার মধ্যে? জন্মসূত্রে
সুইডিশ ইনগ্রিড তিরিশের দশকে আমেরিকায় চলে এসে হলিউডে বিখ্যাত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে
সুইডেন, জার্মান, ফ্রান্স ও ইতালি – সব দেশের ছবিতেই অভিনয় করেছেন। ওনার বিখ্যাত ছবির
তালিকায় আছে - কাসাব্লাঙ্কা (১৯৪২), ফর হুম দ্য বেল ট্রোলস (১৯৪৩), গ্যাসলাইট (১৯৪৪),
দ্য বেল্স অব সেন্ট মেরিজ (১৯৪৫), নটোরিয়াস (১৯৪৬), জোয়ান অব আর্ক (১৯৪৮), জার্নি
টু ইতালি (১৯৫৪), অ্যানাস্তাসিয়া (১৯৫৬), মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (১৯৭৪)
এবং অটাম সোনাটা (১৯৭৮)। ইনগ্রিড যখন ১৯৮২ সালে ব্রেস্ট ক্যানসারে মারা যান, সেই সময়
উনি একটা টিভি সিরিজে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন।
সেই চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য মারা যাবার পর উনি পসথুমাস এমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
তিনবার অস্কার পেয়েছিলেন, যার প্রথমটা এসেছিল ‘গ্যাসলাইট’ ছবির জন্য। এই ছবি নিয়েই
আজ আমাদের অলোচনা। এই ছবির শুরুর নাম ছিল
‘মার্ডার ইন থর্নটন স্কোয়ার’। পরে এম-জি-এম সেটা বদলায়।
ছবির মুখ্য চরিত্রে ইনগ্রিড বার্গম্যান
ও চার্লস বয়ার। যাত্রাপালার বিখ্যাত গায়িকা অ্যালিস তার দামি গয়নাপত্রের জন্য খুন হন।
কিন্তু খুনি সেইসব চুরি করার আগেই অ্যালিসের ভাইঝি পওলা সেখানে এসে পড়ায় পালিয়ে যেতে
বাধ্য হয়। এই ঘটনায় পওলা এত আঘাত পায় যে তাকে গান শেখার জন্য ইতালি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বেশ কয়েক বছর পরে, পওলা (ইনগ্রিড) গ্রেগরি নামের এক যুবকের প্রেমে পড়ে। তারা বিয়ে করে
এবং আবার পওলার পিসির বিরাট প্রাসাদে ফিরে আসে। সেখানে এসে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে গ্রেগরি
আস্তে আস্তে প্রমাণ করতে চায় যে পওলা মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তার মানসিক চিকিৎসা দরকার। পওলাও সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং গোটা
পৃথিবীর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। একদিন ধরা পড়ে যে গ্রেগরিই সেই মানুষ যে অ্যালিসকে
খুন করেছিল এবং সে পওলাকে বিয়ে করেছিল তার পিসির সম্পত্তির লোভে। এই সিনেমায় ইনগ্রিডের
অভিনয় গায়ে কাঁটা দেওয়া।
রোমান্স বা কমেডি থেকে শুরু করে ভয়ের
সিনেমা বা ঐতিহাসিক ছবি থেকে শুরু করে চোয়ালচাপা দুর্বার চরিত্র, হলিউডে যাকে যে কোন
চরিত্রে ভরসা করা হত, তার নাম রুথ এলিজাবেথ ডেভিস (১৯০৮-১৯৮৯)। সংক্ষেপে বেটি ডেভিস।
বেটির ঝুলিতে প্রচুর সফল ছবি - অফ হিউম্যান বন্ডেজ (১৯৩৪), ডেঞ্জারাস (১৯৩৫), মার্কড
ওম্যান (১৯৩৭), জেজেবেল (১৯৩৮), ডার্ক ভিক্টরি (১৯৩৯), দ্য লেটার (১৯৪০), দ্য লিটল
ফক্সেস (১৯৪১), নাউ, ভয়েজার (১৯৪২), অল অ্যাবাউট ইভ (১৯৫০), দ্য স্টার (১৯৫২), হোয়াটেভার
হ্যাপেনড টু বেবি জেন (১৯৬২), দ্য হোয়েলস অব অগস্ট (১৯৮৭) ইত্যাদি। জেজেবেল ছবির জন্য
১৯৩৮ সালে উনি দ্বিতীয় অস্কার পেয়েছিলেন এবং ১৯৩৮-৪২, পরপর পাঁচবার অস্কারের জন্য নমিনেটেড
হয়েছিলেন। এখানে কিন্তু আমরা ওনার এই পাঁচটা ছবির কোনোটা নিয়েই আলোচনা করব না। ওনার
প্রথম অস্কার পাওয়া ‘ডেঞ্জারাস’ নিয়েও নয়। আমরা দেখব ওনার অস্কার না পাওয়া (এমনকি নমিনেশন-ও না পাওয়া) ‘অফ হিউম্যান বন্ডেজ’।
লেসলি হাওয়ার্ড ও বেটি অভিনীত এই সিনেমা
থেকেই বেটি স্টার হয়ে ওঠেন। এখানে লেসলি এক ডাক্তারি ছাত্র এবং বেটি এক ওয়েট্রেস যার
প্রতি লেসলি আকৃষ্ট কিন্তু বেটি তাকে পাত্তা দেয় না। লেসলি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে
সে প্রত্যাখ্যান করে। তার অন্য এক প্রেমিকের কাছে চলে যায়। কিন্তু কয়েক বছর পরে সে
লেসলির কাছে গর্ভাবস্থায় ফিরে আসে ও আশ্রয় চায়। বাচ্চার জন্ম দেবার পরে সে সেই বাচ্চা
এক নার্সের হাতে তুলে দিয়ে একজনের সাথে প্যারিস চলে যায়। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে।
লেসলি এরপর ডাক্তারি পড়া শেষ করে, কিন্তু বেটি তদ্দিনে টিবি-তে আক্রান্ত, তার বাচ্চা
মারা গেছে। সমারসেট মমের উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবি সেই সময়ের ব্লকবাস্টার।
ধরুন, আপনাকে যদি একটা সহজ প্রশ্ন করা
হয়, বাংলা ছবিতে স্টাইল আইকন হিসেবে আপনি কাকে সবার ওপরে রাখবেন? এর উত্তর, মনে হয়,
নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসবে যে অপর্ণা সেন। তেমনি বিশ্ব সিনেমায় কাউকে যদি সত্যিকারের স্টাইল আইকন বলতে হয়, তিনি একজনই- অড্রে
ক্যাথলিন হেপবার্ন রাস্টন (১৯২৯-১৯৯৩) বা অড্রে হেপবার্ন। ইনগ্রিড যেমন আমার ড্রিমগার্ল,
তেমনি পৃথিবীতে এখনো অগণিত সিনেমাপ্রেমী ও সমালোচক আছেন, যাদের ড্রিমগার্ল অড্রে। ভীষণ মিষ্টি চাউনি
ও হাসি। জন্মসূত্রে বেলজিয়ান এই ব্রিটিশ অভিনেত্রীর বিখ্যাত ছবির তালিকাও বেশ বড়- রোমান
হলিডে (১৯৫৩), সাব্রিনা (১৯৫৪), ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিজ (১৯৬১), শ্যারাড (১৯৬৩),
মাই ফেয়ার লেডি (১৯৬৪), ওয়েট আনটিল ডার্ক (১৯৬৭), রবিন অ্যান্ড মারিয়ন (১৯৭৬) ইত্যাদি। শেষ বয়সে উনি
সিনেমা ছেড়ে দিয়ে আফ্রিকার গরীব দেশগুলোয় সেখানকার লোকেদের জন্য ইউনিসেফের অ্যাম্বাস্যাডর
হিসেবে রয়ে গেছিলেন। উনিও ইনগ্রিডের মত কম বয়সেই অ্যাপেনডিক্স ক্যানসারে মারা যান।
অড্রের একটাই ছবি আমরা বেছে নেব যার জন্য উনি একসঙ্গে অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা
পেয়েছিলেন। গ্রেগরি পেকের সঙ্গে সেই বিখ্যাত রোমান্টিক ছবি ‘রোমান হলিডে’।
অ্যান, এক ইউরোপিয় রাজকুমারী, রোম ঘুরবে
বলে এসেছে। কিন্তু সিকিওরিটির এত কড়াকড়ি যে বিরক্ত হয়ে সে পালিয়ে যায় এবং এক বেঞ্চে
ঘুমিয়ে পড়ে। এক তরুণ রিপোর্টার জো তাকে দেখতে পেয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। যদিও জো জানত না সে আসলে কে। পরেরদিন জো নিজের অফিসে গিয়ে
বুঝতে পারে নিজের ফ্ল্যাটে সে যাকে রেখে এসেছে, সে একজন রাজকুমারী। জো তার এক বন্ধুকে
ভাড়া করে লুকিয়ে তার ও রাজকুমারীর ফটো তোলার জন্য। এবং সেই রাজকুমারী অ্যানকে নিয়ে
এক ভেসপা স্কুটারে রোম ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে। একদিনের রোমান্স ও ঘোরা। পরেরদিন অ্যান আবার
নিজের জায়গায় ফিরে যায়, জো নিজের অফিসে। এবং প্রেস মিট করার সময় সে অ্যানের হাতে লুকিয়ে
তোলা সব ফটো তুলে দিয়ে বলে সেগুলো সে ছাপেনি, সেগুলো নিয়ে অ্যান যা খুশি করতে পারে।
দুর্দান্ত। অ্যানের ভূমিকায় অড্রে এবং জো-এর চরিত্রে গ্রেগরি পেক অনবদ্য। ফটোগ্রাফি
সুন্দর, যার ভেতর দিয়ে গোটা রোম চেনা যায়। রোমান্টিক ছবি বললে আজো সবাই রোমান হলিডে-র
উদাহরণ দেয়।
জর্জ (রিচার্ড বার্টন) এবং মার্থা (লিজ
টেলর) এক শিক্ষিত দম্পতি। জর্জ কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং মার্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তাদের বাড়িতে তারা এক গভীর রাতের পার্টিতে আরেক অধ্যাপক দম্পতিকে
ডাকে। সেই রাতের ঘটনা নিয়েই এই ছবি। মাঝরাতে মদ্যপ অবস্থায় জর্জ ও মার্থার ফাটাফাটি
ঝগড়া, সেই ঝগড়ায় অতিথিদের যোগদান, সারারাত পার্টির পর শেষরাতে তাদের ছেড়ে আসা, এবং
ভোরবেলা জর্জ ও মার্থার আবার হাত ধরে গান গেয়ে ওঠা – জীবনের এক বিশেষ দিক ফুটিয়ে তোলে।
উপরি পাওনা লিজের কমেডি অভিনয়। এই ছবি ১৩টা অস্কার নমিনেশন পেয়েছিল - অস্কারের যা যা
বিভাগ হয়, সেই সবকটায়।
ভিভিয়ান হার্টলে (১৯১৩-১৯৬৭) জন্মেছিলেন
দার্জিলিং-এর সেন্ট পল্স স্কুলে। পরে উনি লন্ডন চলে গিয়ে পড়াশোনা করেন এবং হারবার্ট
লেই-কে বিয়ে করে ভিভিয়ান লেই হিসেবে পরিচিত হন। অবশ্য পরবর্তীকালে উনি লরেন্স অলিভিয়ার-কে
বিয়ে করার পর লেডি অলিভিয়ার হিসেবেই বেশি পরিচিত হয়েছিলেন। ভিভিয়ানের বিখ্যাত ছবিগুলো
হল - ফায়ার ওভার ইংল্যান্ড (১৯৩৭), গন উইথ দ্য উইন্ড (১৯৩৯), আনা কারেনিনা (১৯৪৮),
এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার (১৯৫১), দ্য ডিপ ব্লু সি (১৯৫৫) ও শিপ অব ফুলস (১৯৬৫)। ভিভিয়ান
বিখ্যাত ছিলেন ওনার দুটো ছবির জন্য – গন উইথ দ্য উইন্ড এবং এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার।
উনি পরিণত বয়সে একধরনের মানসিক সমস্যা ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’-এ ভুগতেন। এবং শেষ জীবনে
টিবি হয়ে মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই মারা যান। ওনার
‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ নিয়ে যেহেতু আমরা চার নম্বর পর্বে আলোচনা করেছি, তাই আজ ওনার অন্য কোন ছবি নিয়ে
লিখব না।
এইসব সোনালি দিনের বিখ্যাত হলি-নায়িকাদের
পাশাপাশি যদি পৃথিবীর দিকে সার্চলাইটটা ঘোরাই, তাহলে এমন কিছু অতীত অভিনেত্রীদের ছবি
ভেসে উঠবে যারা সেই সময়ে তাদের দেশে বা কখনো-সখনো হলিউডে রানির মতই রাজত্ব করেছেন।
যেমন জার্মানির মার্লিন ডিট্রিচ, মেক্সিকোর ডোলোরেজ ডেল রিও, জাপানের সেতসুকো হারা,
ফ্রান্সের জান মরো, ইতালির মোনিকা ভিটি, রাশিয়ার তাতিয়ানা সময়লোভা। এবং এদের বাইরেও
আরো অনেকে।
মার্লিন ডিট্রিচ (১৯০১-১৯৯২) জার্মানিতে
খ্যাতিলাভ করার পর হলিউডে পাড়ি দেন। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বেশ কয়েক দশক
স্টেজ আর্টিস্ট হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেন। এমনকি স্টেজে উঠে উনি পিট সিগারের
গানও গাইতেন। ওনার উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি হল - দ্য ব্লু অ্যাঞ্জেল (১৯৩০), মরক্কো (১৯৩০),
ডিজঅনার্ড (১৯৩১), সাংহাই এক্সপ্রেস (১৯৩২), দ্য স্কারলেট এমপ্রেস (১৯৩৪), ডেভিল ইজ
আ ওম্যান (১৯৩৫), ডিজায়ার (১৯৩৬), স্টেজ ফ্রাইট (১৯৫০), উইটনেস ফর দ্য প্রসিকিউশন
(১৯৫৭), টাচ অব এভিল (১৯৫৮) ও জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ (১৯৬১)। যেহেতু ওনাকে আমি
জার্মানির তারকা হিসেবে দেখিয়েছি, অতএব এখানে ওনার জার্মান ছবি ‘দ্য ব্লু অ্যাঞ্জেল’
নিয়ে লিখব।
‘ব্লু অ্যাঞ্জেল’ ডান্সবারের ক্যাবারে
ডান্সার লোলা-র (মার্লিন) প্রেমে পড়েন স্থানীয় এক শিক্ষক রাথ। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে লোলার জন্য একসময়
তিনি এক সার্কাসের জোকার হিসেব নাম লেখান। লোলাকে কাজের খাতিরে অনেকের সঙ্গে প্রেমের
অভিনয় করতে হত, যেটা নিয়ে রাথ আরো রেগে উঠতে থাকেন। কোন এক রাত্রে রাথ কয়েকজনের সঙ্গে
মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। তাকে আটকে রাখা হয়। ছাড়া পাবার পর উনি সেই ক্লাসরুমে এসে আত্মহত্যা
করেন যেখানে উনি একসময় বহুবছর শিক্ষকতা করতেন। এই সিনেমায় মার্লিনের ক্যাবারে এতই খ্যাতি
পেয়েছিল যে উনি হলিউড থেকে একে একে প্রস্তাব পেতে শুরু করেন। ওনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে
হয়নি।
মারিয়া দে লো ডোলোরেজ আসুনসোলো লোপেজ
নেগ্রেতে (১৯০৪-১৯৮৩), সংক্ষেপে ডোলোরেজ ডেল রিও ছিলেন হলিউডের প্রাক স্বর্ণযুগের প্রথম
লাতিন আমেরিকান স্টার যিনি মেক্সিকো ও হলিউড,
দু’জায়গাতেই রাজত্ব করেছেন। তার মনে রাখার
মত ছবিগুলো হল - রিসারেকশন (১৯২৭), রামোনা (১৯২৮), ইভাঞ্জেলিন (১৯২৯), বার্ড অব প্যারাডাইজ
(১৯৩২), ফ্লাইং ডাউন টু রিও (১৯৩৩), মাদাম দু’বেরি (১৯৩৪), মারিয়া ক্যান্ডেলারিয়া
(১৯৪৩), দ্য অ্যাবানডান্ড (১৯৪৫), দ্য ফিউজিটিভ
(১৯৪৭), ডোনা পারফক্টা (১৯৫১) ইত্যাদি। এছাড়াও উনি থিয়েটার ও টিভি সিরিজেও চুটিয়ে অভিনয়
করতেন। স্বীকার করে নিই যে আমি ওনার মাত্র দুটো ছবি দেখেছি। তার ভেতর যেটা বেশি ভাল
লেগেছিল, ‘দ্য অ্যাবানডান্ড’, সেটা নিয়েই লিখি।
এই ছবিতে ডেলোরেজ এক অসহায় কুমারী মা
যার প্রেমিক তাকে ছেড়ে অন্য এক মহিলার সঙ্গে উধাও হয়ে গেছে। নিজের সন্তানকে আগলে রাখা
ও মানুষ করার সাথে সাথে সে বিশ শতকের শুরুর দিকে মেক্সিকোর রক্ষণশীল সমাজের খোঁচা, ঝড়-ঝাপ্টা ও অত্যাচার চোয়াল চেপে সহ্য করে
চলেছে। থিম সাদামাটা, কিন্তু ডেলোরেজের আপরাইট অভিনয় এখানে চোখে পড়ার মত।
সেতসুকো হারা (১৯২০-২০১৫) ছিলেন ৬৭টা
ছবিতে অভিনয় করা জাপানের মেনস্ট্রিম ছবির এক নম্বর নায়িকা যখন উনি ১৯৪৯ সালে ওজু-র
‘লেট স্প্রিং’ ছবিতে অভিনয়
করেন এবং গোটা পৃথিবীর নজরে আসেন। এ যেন অনেকটা উত্তমকুমার ও সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’
সিনেমার মত! ওনার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো – লেট
স্প্রিং (১৯৪৯), ব্লু মাউন্টেন রেঞ্জ (১৯৪৯), আর্লি সামার (১৯৫১), টোকিও স্টোরি (১৯৫৩),
টোকিও টুইলাইট (১৯৫৭), দ্য ইডিয়ট (১৯৫৮), লেট অটাম (১৯৬০), দ্য এন্ড অব সামার (১৯৬১)
ইত্যাদি। সেতসুকোর সঙ্গে সেই সময়ের হিরো তোশিরো মিফুনের (আগের পর্বে যাকে নিয়ে লিখেছিলাম)
বেশ কয়েকটা ছবি আছে, যার ভেতর উল্লেখযোগ্য হল ‘দ্য ইডিয়ট’। মনে রাখার মত কমেডি। সেতসুকোর
প্রধান গুণ ছিল ওনার নিখুঁত অভিনয়, যে কারণে
ওজুর মত খুঁতখুঁতে পরিচালকও সেতসুকোর প্রশংসা করতেন। ওজু লিখেছিলেন – ‘In fact, without
flattery, I think she is the best Japanese film actress’। বিয়ে করেননি বলে জাপানে
ওনাকে ‘the eternal virgin’ নামে ডাকা হয়। প্রায় ১০০র ওপর ছবিতে অভিনয় করেছেন। অদ্ভুতভাবে
১৯৬২ সালে ‘স্টোরি অব ফ্লাওয়ার, স্টোরি অব স্নো’ ছবিতে অভিনয়ের পর আমৃত্যু সেতসুকো নিজেকে গোটা বিশ্ব থেকে
গুটিয়ে নেন। আজ ওনার কোন ছবি নিয়েই লিখব না।
জান মরো (১৯২৮-২০১৭) এমন এক নায়িকা যিনি ত্রুফো-র ‘400 ব্লোজ’-এ এক ছোট্ট রোলে ছিলেন, এমনকি গোদারের ‘এ ওম্যান ইজ আ ওম্যান’ ছবিতেও একটা সিনে, কিন্তু আমরা কেউ তাকে লক্ষ্য করিনি। আমরা তার অভিনয় দেখে চুপ হয়ে গেছি ‘সেভেন ডেজ...সেভেন নাইটস’ ছবিতে, তারিফ করেছি অ্যান্তনিয়নির ‘দ্য নাইট’ ছবিতে তার চরিত্র এবং মুগ্ধ হয়ে গেছি ত্রুফোর ‘জুলস অ্যান্ড জিম’ আর ওয়েলেসের ‘দ্য ট্রায়াল’ ছবিতে তাকে দেখে। এই হলেন ফ্রেঞ্চ নায়িকা জান মরো, অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতেন, ছোট-বড় রোল দেখতেন না। ফ্রান্সের থিয়েটার থেকে উঠে আসা নায়িকাকে নিয়ে অরসন ওয়েলেস বলেছিলেন ‘the greatest actress in the world’। মরোর মনে রাখার মত সিনেমা বললে যে নামগুলো আসবে - এলিভেটর টু দ্য গ্যালোজ (১৯৫৮), দ্য লাভার্স (১৯৫৮), সেভেন ডেজ...সেভেন নাইটস (১৯৬০), দ্য নাইট (১৯৬১), জুলস অ্যান্ড জিম (১৯৬২), দ্য ট্রায়াল (১৯৬২), দ্য ট্রেন (১৯৬৪), ভিভা মারিয়া (১৯৬৫), দ্য ওল্ড লেডি হু ওয়াকড ইন দ্য সি (১৯৯২)।
মরোর যে কোন সিনেমা নিয়েই লেখা যায়, কিন্তু আজ ওনার নব্য-বাস্তব ছবি ‘জুলস অ্যান্ড জিম’ নিয়ে কিছু বলা দরকার। এই ছবি শুধু যে ত্রুফোর অন্যতম সেরা ছবি, তা নয়, এই ছবি ফ্রান্সের নব্য-বাস্তবতার এক সাহসী দলিল। এক ত্রিকোণ ভালবাসা, যার দু’দিকে এক বোহেমিয়ান জিম ও লাজুক লেখক জুলস, এবং অন্যদিকে এদের দুজনের বান্ধবী ক্যাথরিন (জান মরো), যে পরবর্তীকালে জুলসের স্ত্রী হয়ে ওঠে। এরমধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় এবং জিম ও জুলস আলাদা দলের হয়ে লড়তে চলে যায়। যুদ্ধশেষে জিম তাদের কাছে ফিরে আসে। তদ্দিনে ক্যাথরিন ও জুলসের বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের এক ছোট্ট মেয়ে আছে। জিমকে দেখে ক্যাথরিন তার সঙ্গে থাকতে চায়। স্ত্রী ও সন্তানকে হারানোর ভয়ে জুলস তাতেই রাজী হয়ে যায়। যদিও জিম তাদের ছেড়ে চলে যায়। আবারো। এবং আবারো। এই ছবির প্রতি সিনে ত্রুফো চমক আর উৎকন্ঠা লুকিয়ে রেখেছেন। সেটা নিজে দেখুন। ভাল লাগবে।
মোনিকা ভিটি (১৯৩১-২০২২)-কে বলা হয় ‘কুইন অব ইতালিয়ান সিনেমা’। বিশেষ করে মাইকেলেঞ্জেলো অ্যান্তনিয়নির ছবি বললেই যেন মোনিকার নাম ভেসে ওঠে। অবশ্য ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে মোনিকা আরেক পরিচালক মারসেলো মোনিসেলি-র কমেডি ছবিতেও অভিনয় করেছেন। ওনার সফল ছবিগুলোর মধ্যে - দ্য অ্যাডভেঞ্চার (১৯৬০), দ্য নাইট (১৯৬১), দ্য একলিপ্স (১৯৬২), সুইট অ্যান্ড সাওয়ার (১৯৬৩), রেড ডেসার্ট (১৯৬৪), দ্য গার্ল উইথ আ পিস্তল (১৯৬৮) এবং জেলাসি, ইতালিয়ান স্টাইল (১৯৭০)। তবে হ্যাঁ, যেটা বলতেই হয়, উনি সুযোগ পেয়েও হলিউড যাননি দুটো কারণে। এক, উনি দীর্ঘ আকাশযাত্রা পছন্দ করতেন না। দুই, উনি মনে করতেন ওনার ইংরাজি কথায় কিছু সমস্যা আছে। ফলে উনি সারাজীবন ইতালিতেই থেকেছেন ও সিনেমা করেছেন। এবং আমি এটা স্বীকার করে নিই যে সমালোচক হিসেবে কিন্তু আমার কোথাও কোথাও মনে হয়েছে যে ওনার অভিনয় স্টিফ। যাইহোক, ২০০২ সালে ওনার অ্যালঝেইমার ধরা পরে, সেই থেকে উনি গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং এ’বছরের গোড়ায় উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রেড ডেসার্ট নিয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি, সুতরাং আজ আর মোনিকা-র অন্য ছবি নিয়ে কিছু বলব না।
তাতিয়ানা সময়লোভা (১৯৩৪-২০১৪) প্রথম
যে সিনেমা করেছিলেন, যা করে উনি সারা পৃথিবীর নজরে চলে আসেন, সেই ছবির নাম ‘দ্য ক্রেনস
আর ফ্লাইং’। এই ছবির জন্য কান ফিল্ম ফেস্টিভালে
ওনাকে বলা হয়েছিল ‘most modest and charming actress’। হলিউড থেকে অনেক অফার এসেছিল।
কিন্তু ওনার দুর্ভাগ্য, তৎকালীন সোভিয়েত সরকার ওনাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। উনি এরপর
রাশিয়াতেই ছবি করার দিকে মন দেন। ওনার বিখ্যাত ছবিগুলো – দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং (১৯৫৭),
আনা কারেনিনা (১৯৬৭), লেটার নেভার সেন্ট (১৯৬০),
আলবা রেজিয়া (১৯৬১), অ্যাটাক অ্যান্ড রিট্রিট (১৯৬৪) ইত্যাদি। খুব বেশি ছবিতে উনি অভিনয়
করেননি। যদিও ওনাকে রাশিয়াতে ড্রিমগার্ল হিসেবেই দেখা হত। এবং ষাটের দশকের পর উনি হঠাৎ
ছায়াছবি জগৎ থেকে এবং লোকচক্ষু থেকে উধাও হয়ে যান। আবার ওনাকে দেখা যায় বহু বছর পর,
নয়ের দশকে। ১৯৯৩ সালে ওনাকে ‘পিপল’স আর্টিস্ট অব রাশিয়া’ উপাধি দেওয়া হয়। এবং ২০০৭এ
মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার। ওনার ছবি নিয়েও আজ কিছুই লিখব না কারণ
‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং’ নিয়ে আমি পরে একদিন
বলব।
তাহলে স্বর্ণালী যুগের প্রিয় অভিনেত্রীদের
নিয়ে আজ এই অব্ধিই। এদের সবার আত্মা শান্তিতে থাকুক। কিন্তু একটা রহস্য আমার কাছে আজো
রয়ে গেল। গ্রেটা গার্বো (১৯০৫-১৯৯০), সেতসুকো হারা, সুচিত্রা সেন (১৯৩১-২০১৪), তাতিয়ানা
সময়লোভা... নিজের সময়ে যারা তাদের জগতে সিনেমার মহারানী ছিলেন, তারা একে একে হঠাৎ কেন
নিজেদের গোটা পৃথিবী থেকে গুটিয়ে নিয়ে আড়ালে চলে গেছিলেন? কী কারণে?
(ক্রমশ)
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন যে সুচিত্রা সেনের শেষ ছবি 'প্রণয় পাশা'-র কাহিনী সম্ভবত Gaslight অনুপ্রাণিত। Roman Holiday-র, আমার কাছে ব্যর্থ রূপান্তর উত্তম-অপর্ণা অভিনীত 'রাতের রজনীগন্ধা'। একাধিক হিন্দী ছবির আছে।
উত্তরমুছুন