শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ১০৫

 

সম্প্রতি কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটের ইন্ডিয়ান কফিহাউসের তিনতলায় ‘বই-চিত্র’ সভাঘরে একটি আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছিল। সভার আয়োজন করেছিল  ‘আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি সমিতি’। এই সংস্থার কেন্দ্রীয় অফিস দিল্লিতে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় শাখা অফিস আছে। বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি বর্তমানে এই সংস্থা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করে চলেছে। আমরা বাংলাভাষী রূপে সাধারণভাবে জানি যে, আমাদের ভাষা বাংলা একটি নতুনতর ভাষা, যার জন্ম হয়েছে হাজার বছর আগে। এবং এই ভাষায় রচিত প্রথম সাহিত্য নিদর্শন রূপে পাই ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ বা ‘চর্যাপদাবলী’। যাঁরা ভাষাতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা জানেন, কীভাবে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বিবর্তিত হয়ে নব্য ভারতীয় আর্যভাষায় রূপান্তরিত হয়ে বাংলা, ওড়িয়া, ভোজপুরি, মৈথিলী, মগহী, অসমীয়া ইত্যাদি আধুনিক বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ এইসব আধুনিক ভাষা মোটামুটি প্রায় একই সময়ে সৃষ্ট হয়েছে, এবং প্রত্যেক ভাষারই বর্তমান বয়স কম-বেশি হাজার বছর। বিশেষত ‘চর্যাপদাবলী’কে এই সব ভাষাই তাদের প্রথম সাহিত্য-নিদর্শন হিসেবেই দাবি করে থাকে। কিন্তু সেদিনের সেই আলোচনাসভার বিষয় ছিল একটু আলাদা বা ভিন্ন। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার ভারতে প্রচলিত অসংখ্য ভাষা ও উপভাষার মধ্যে এর আগে মাত্র পাঁচটি ভাষায়  রচিত সাহিত্যকে ধ্রুপদী ভাষার সাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছিল। এই ভাষাগুলি হলো সংস্কৃত, তামিল, তেলগু, কানাড়ী ও মালয়ালাম। এই মর্যাদার পেছনে যে শর্তগুলির উল্লেখ করা হয়েছিল, তা হচ্ছে, সেই ভাষাকে প্রাচীন হতে হবে, অন্তত ১৫০০ থেকে ২০০০ বছরের পুরনো ভাষা হতে হবে, সেই প্রাচীন কাল থেকে তার সাহিত্যের বহমান ধারা থাকতে হবে, এবং সেই ভাষার সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ হতে হবে। আর এই শর্তগুলি পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ভাষার প্রাচীনত্বের ঐতিহাসিক নিদর্শন, লিপি, মুদ্রা, পুঁথি ও পুস্তকাদির তথ্য সম্বলিত যাবতীয় কিছু ভারত সরকারের সংস্কৃতি দফতরে পেশ করতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যে পাঁচটি ভাষাকে এর আগে ধ্রুপদী মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তাদের  প্রাচীনত্ব সম্পর্কে আদৌ কোনো তর্ক-বিতর্কের অবকাশ নেই। বিশেষত যাঁরা ভাষাতত্ব চর্চা করেন, তাঁরা জানেন, এই ভাষাগুলি যথেষ্ট প্রাচীন, কয়েক হাজার বছরের পুরনো অত্যন্ত সমৃদ্ধ ভাষা। এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু অল্প কিছুদিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যখন ষষ্ঠ ধ্রুপদী ভাষার সাহিত্য  হিসেবে ওড়িয়াকে মর্যাদা দান করে, তখনই বাংলাভাষী হিসেবে আমরা আলোড়িত হই। কেননা, এতদিন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, নব্য ভারতীয়  আর্যভাষা থেকে উদ্ভূত আধুনিক সব ভাষাই সমবয়সী। কম-বেশি হাজার বছর বয়স। কিন্তু ওড়িয়া ভাষা ও সাহিত্যের তাত্ত্বিক গবেষকরা গভীর গবেষণায়  আবিষ্কার করেছেন, ওড়িয়া ভাষা ও সাহিত্য আরও প্রাচীনকালে সৃষ্ট। এবং যথেষ্ট সমৃদ্ধও। সুতরাং ধ্রুপদী ভাষা ও সাহিত্যের মর্যাদালাভের অধিকারী।  

সেদিনের সেই আলোচনাসভায় আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল, এতদিনের প্রচলিত  ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ওড়িয়া ভাষা-সাহিত্য যদি তার প্রাচীনত্বের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন আরও নিবিড় গবেষণা, প্রাচীন শিলালেখ, পুঁথিপত্র ইত্যাদির সন্ধান এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের খোঁজখবর। যেসব বাংলাভাষী মানুষজন তাঁদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, তাঁদের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে, শ্রমদান করতে হবে, সময়দান করতে হবে। এমনিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধুমাত্র যদি তার আরও প্রাচীনত্ব প্রমাণ করা যায়, তাহলে সপ্তম ধ্রুপদী ভাষার সাহিত্য হিসেবে বাংলা ভাষাও মর্যাদালাভ করবে।

সবার সুস্থতা কামনা করি।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


২টি মন্তব্য: