কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯ |
২০২২ রোদ্দুরে অমলকান্তি
ভরদুক্কুর বেলাও নয়, একেবারে এই পোড়া গ্রীষ্মের ছয় সক্কালে গভীর প্রেমে মগ্ন দুটিতে। বাৎস্যায়নের কাজকর্মের সঙ্গে ওদের কস্মিনকালেও পরিচয় নেই। তাতে কী? অত কলার জ্ঞান ছাড়াই ওরা ল্যাম্প পোস্টের তারের উপর জমিয়ে এ ওর কালো কালো মাথায় ঘোর কালো ঠোঁট দিয়ে বিলি কাটছে, গলার নিচে চুলকে দিচ্ছে। নিচু স্বরে পরিকল্পনাও করছে মনে হয়। মঙ্গলবার রোদ্দুর রায় গ্রেফতার হয়েছে গোয়া থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায়, মেন রোড, বাইলেনে তাকে নিয়ে পোস্টের ছড়াছড়ি। এর পোস্ট ও ঝেপে দিয়ে পোস্টাচ্ছে। মূল কথায় একই প্রকাশ - তাকে ছেড়ে দিতে হবে। কেননা সে তো শুধু প্রতিবাদ করেছে অসরকারি ভাষায়, তাছাড়া এবার সে রবিঠাকুরকেও খিস্তোয়নি। মাস্তানি স্রেফ চেয়ারের।
রোদ্দুর রায় অমলকান্তিকে চেনে। সামনে পেলে তাকেও বোধহয় ওর চিরাচরিত চার অক্ষরেই ভূষিত করতো সম্বোধনে। কারণ এই রোদ্দুর হতে নিশ্চিত দুঃস্বপ্নেও চাননি তিনি। তাঁর শেষমেশে ভাবতে ভাবতেই সারা হয়েছিলেন অমলকান্তি।
রোদ্দুর রায়ের এখানেই টেবিল ভাঙা আপত্তির শুরু। ধরো, আপলোড করা ভিডিয়োয় দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে চলেছে - এতগুলো বচর দেশ জ্বলচে মুলুক তালুক সব জ্বলচে আর তুমি তোমরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুদু আঁটি বেঁধে গ্যাচো বাঁ…? লাজুক রোদ্দুর চাই লাজুক! খ্যা খ্যা খ্যা...
পড়েচো ? মাল পয়মাল তোমরা রফিক আজাদ পড়েচো? সেই সময় থেকে হারামজাদা কাকে বলে চিনে নিতে ভুল হয় না। ভাত চোরগুলো কবে থেকে চুরি করে যাচ্চে তাদের ধরতে পাচ্চো না কেন উল্লুকসভা? কত ভাগ করে খাবে? গুয়ের ফুটোতেও জ্যায়গা খালি রাখবে না নাকি উদগান্ডু?
অন্য কোনোখানে পুরনো প্রেসঘরে কম্পোজ করতে করতে অমলকান্তি ভাবছেন, রোদ্দুর রায়ের কথাগুলো গালিগালাজে ভরা। রবিঠাকুরের গান নিয়ে যা করেছে তাতে কানে আঙুল দিতে হয়েছিল প্রমিত বাঙালির। কিন্তু সে যে কথাগুলো বলছে, গালাগালি বাদে, সেগুলো তো ফেলে দেওয়ার নয়! সে না হোক, তাই বলে রোদ্দুর রায়কে সমর্থন! ভাবা যায়!
রোদ্দুর রায়কে ছেড়ে দিতে হয়েছে। একটা চেয়ার কবেই বা আর রোদ্দুর বেঁধে রাখতে পারলো! মুক্তি পেয়েছে সে চেয়ারের মারপ্যাঁচ থেকে। অন্য কোনোখানে কোনো পুরনো প্রেসঘরে অমলকান্তি হাতে কম্পোজ করছিলেন একমনে। একবার বাইরের আকাশে চোখ রাখলেন। তারপর কম্পোজ করা প্যারাগ্রাফ এলোমেলো করে দিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন