বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

তমাল রায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯


বাঘের গল্প

*বাঘেদের আস্তানা সচরাচর জল আর জঙ্গলের মাঝেই কোথাও হয় হরিচরণের অবশ্যই পাতি মফস্বল শহরের একপ্রান্তে

*বাঘেরা  গুরগুর করে কখনোই  ডাকে না, ওগুলো ভুল ধারণা মাত্র কেবল মাত্র স্বজাতির মধ্যে তর্ক-বিতর্কে বা কখনও সখনও সহমত জানাতে গুরগুর করে উঠলেও উঠতে পারে হরিচরণ অবশ্য সেটা করার লোকও নয় যা সিদ্ধান্ত নেবার, একাই নেয় কারও মতের তোয়াক্কাও কোনোদিন করেনি

*বাঘেদের জিহ্বা নিসৃত লালারস আসলেই এন্টিসেপ্টিক কাটা জায়গায় জিভ ঘষে নিলেই কেল্লা ফতে! এদিকে হরিচরণের ফিবছর রোগ-নাড়া লেগেই থাকে কিছুদিন হল প্রস্টেটটাও ভোগাচ্ছে টপ টপ করে জল পড়ে লুঙ্গি ভিজে থাকে

*উত্তেজনায় লিঙ্গ উত্থিত হলেই যে সিমেন নিসৃত হবে, বাঘেদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয় স্পেশাল প্রোটেকশন কাভার থাকে লাইক কণ্ডোম। যা কখনোই ছিল না বলে মা ষষ্ঠির কৃপায় হরিচরণের ছয় সন্তান সন্ততি যাদের মধ্যে কখনোই তেমন মিলমিশ ছিল না

প্রসঙ্গত জানানো যাক, সংসার বড় হলেও সুখের নয়, ছোট হলেও আজ ভোর রাতে একলা হরিচরণ চলে গেলেন সব কিছু ছেড়েছুড়ে যমরাজের স্পেশশিপে চড়ার আগে হরিচরণ কৈশোরে হারিয়ে ফেলা নিভারাণির হাত ধরে ফুলের বাগানে ঘুরছিলেন বলাবাহুল্য হরিচরণের স্ত্রী কেতকীবালা তখন তার বাপের বাসায় টিভির সামনে বসে করুণাময়ী রাণি রাসমণি দেখছেন...

হরিচরণের দেহ বার করে আনে অনাদি হোমসার্ভিসের ডেলিভারি বয় বন্ধ ঘরে নীল করুণ আলো নাইটল্যাম্প তখনও মৃদু হয়ে জ্বলছিল

বাঘের সাথে এই কাহিনীর তেমন কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনার শিরোনাম হতেই পারত, ডেথ অব টাইগার কারণ ব্যাঘ্র শিশুরা অর্ধেকের  বেশিই জীবিত থাকে না কারণ তারা জন্মের সময়ে অন্ধ হয় এবং শৈশব পার করার আগেই এদিক ওদিক নিরাপত্তাহীন ঘোরাঘুরি, এবং অকাল মৃত্যু। যেমন  হরিচরণেরও দুই সন্তান জীবিত দুজন নেই আর যারা রয়েছেন তারাও বিচ্ছিন্ন কারণ বা অকারণে যেমন হরিচরণও!

কিছু আগে মফঃস্বলের শ্মশানে চিতাকাঠে পুড়ে যাবার সময় হরিচরণের  দেহটা প্রতিবাদে উঠে বসেছিল কথিত, তখনই নাকি ব্যাঘ্রগর্জন শোনা যায় এসব অবশ্য মফঃস্বলী সংস্কার হতেও পারে গুজবে কান না দেওয়াই  ভালো, কারণ  হরিচরণ ও বাঘ এক নয়। আর, একা হওয়া এবং বাঘ হওয়াও এক, এমন কথা ইতিহাসে কখনো লিখিত হয়নি!

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন