কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৯ |
মহেশ-কমলা-কথা
তু মুস্কুরাতী রহে হ্যায় য়ে আরজু মেরী
ম্যাঁয় তেরী আখোঁ কো বরসাত দে নহীঁ সকতা।
––অম্বর বসীম ইলাহাবাদী
ভাবাবেগ ছেড়ে বাস্তবতায় ফেরে মহেশ। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কমলা। দুজনেই গ্রামের স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছিল। পৌষ মাসের কোনো এক হিমেল ভোরে ওরা দুজন একসঙ্গে ডিঙি নৌকা চড়ে পাড়ি জমিয়েছিল। চরম হতাশায় মাঝে মাঝে কোনো কাজে মন বসে না তাদের। ইদানীং অবশ্য কামাইটা একটু বেড়েছে। ভোর ভোর সবজিমান্ডি থেকে শাক সবজি ফল নিয়ে আসে ওরা। ঠেলাগাড়ি উপছে পড়ে। তখন মনের মধ্যে কোথাও একটা আশা জেগে ওঠে।
অবসরে মহেশ
কমলাকে হাসায়, মজা করে। কমলার লুপ্তপ্রায় যৌবন লুকোচুরি খেলে। মহেশ তল্লাশি চালায়,
শেষ পর্যন্ত নিজের কাছে হেরে যেতে থাকে। কমলা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বিব্রত বোধ
করে। হঠাৎ সে হাঁটু মুড়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, ‘মহেশ, আমাকে ক্ষমা করে দিস।’
মহেশের গলা বুজে
আসে, ‘আগামী প্রজন্ম কোনোদিন দেখতে পাবো না, ভাবলেই মনটা হু হু করে ওঠে রে,
কমলা!’
কমলা লজ্জার
মাথা খেয়ে বলেই ফেলে, ‘উপযুক্ত জমিতেই ফলন ভালো হয় রে’
-‘বীজের
কী ঘাটতি হচ্ছে?’
মহেশ ঠেলা দেয় কমলার পিঠে।
বেলা পড়ে আসছে। সবজির ঠেলাগাড়ির উপর বিকেলের রোদ পড়ে বেশ রঙিন হয়ে উঠছে ঝরতি-পড়তি ক্যাপসিকাম, পটল, লাউ, কুমড়ো, চিচিঙ্গা। মহেশ মোবাইলে কমলার ফটো তুলতে থাকে। সকাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে শহরের এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্তে এসে পড়েছে তারা। গ্রামের বাড়ির মহুয়া হরিতকী শাল গাছের জঙ্গলে নাচগানের কথা বার বার মনে পড়ে। সবজিওয়ালা মহেশ আর কমলার আটকে থাকা কথাগুলো অন্ধকারের গলিতে শোনা গেল ‘আমরা কোনো জমিজমার মালিক নই রে!’
দূরে ট্রেনের
হুইশেল শুনে, ওরা দুজন দ্রুত রেললাইনের দিকে হাঁটতে থাকল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন