কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৭ |
বিকলাঙ্গ মানুষ
লেথরে লেথরে চলছে কিছু বিকলাঙ্গ মানুষ।
ঘড়ির
কাঁটা পিছিয়ে গেলো কয়েকশো বছর আগে।
সে যুগে বেপাড়ার একদল লোক একটা বিশাল বটবৃক্ষের নীচে বসেছিলো। সেখানেই তারা হাঁক দিচ্ছিলো – ‘জয় হো রাম! জয় রাম!’ তাদের সেইসব হাঁকগুলো আটকে রইলো গাছের বাদামী বাকলে, সবুজ পাতায়। মানুষগুলো চলে যেতেই আরেকদল লোক এলো দূষিত গাছটাকে কাটতে। তারা মেশিন-করাত এনে রাম-নাম মাখা গাছটাকে কেটে মাটিতে শুইয়ে দিলো!
পুরনো দিনের কথা! মসজিদের পাশে বিশাল জলাশয়। কিছু মানুষ জলের দিকে মুখ করে হাঁক দিচ্ছিলো –‘আল্লা হো আকবর! আল্লা হো আকবর!’ এই আওয়াজ অন্য কিছু মানুষের কাছে আপত্তিকর এবং বিধর্মীয় মনে হলো! মানুষেরা ভাবলো মসজিদের পাশের ওই জলাশয়টা অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রোমোটার ডেকে রসুলের নামাঙ্কিত ওই জলাশয়টাকে রাবিশ ঢেলে ভরাট করে দেয়া হলো।
সে সব দিনে এই গ্রহে ধর্মীয় উস্কানি আর রাজনৈতিক খবরদারি লেগেই ছিলো।
হেলিকপ্টার থেকে দিন দুপুরে একটা চার্চের উপর কারা যেন বোমা ফেলে গেলো। হাজারো মানুষের চীৎকার! চার্চ আর আশপাশের বাড়িঘরগুলো চুরচুর হয়ে মাটিতে গুঁড়িয়ে গেলো। এতো ধূলো উড়লো, আকাশটা অন্ধকার; সূর্যটাকে আর দেখা যাচ্ছিল না!
এমনি ভাবে, কয়েকশো বছরের মধ্যে এই পৃথিবীটা হয়ে গেলো নির্জন, প্রায় জনমানব শূন্য! কোনো গাছ নেই, জলাশয় নেই, বিল্ডিং নেই, এয়ারপোর্ট নেই!
রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে কয়েকটা রোবট! আর কেউ কি আছে? আছে! আছে!
ধোয়া-ধূলোয়
ঢাকা সূর্যটা। মাটিতে, খাদে, কবরস্থানে চোরাগোপ্তা লুকিয়ে আছে কয়েকটা বিকলাঙ্গ মানুষ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন