কবিতার কালিমাটি ১১৭ |
গড়পরতা গোধূলিবেলা – ২
(১)
ফাঁকা কাঁধঝোলা দেয়ালের পেরেকে।
পেরেক কেন্দ্রিক কিছুটা পলেস্তরা খসা। পেরেক আর কাঁধের মধ্যে ব্রিজটির নাম ঝোলা। শান্তিনিকেতনের
অনেক দোকানে এমন অজস্র তাদের শরীর মেলে রাখে খদ্দেরের জন্য। একবার শান্তিনিকেতনে…
একই দেয়ালের বাইরে গজাল। লম্বা
নাইলন-দড়ি গজাল থেকে শুপারিকাণ্ড পর্যন্ত। বাস-অন্তর্বাস, রঙ-রঙিন, স্ত্রীলিঙ্গ-পুংলিঙ্গ
রোদ খায়, বাতাস চোষে, শুকোয়। গজাল ও গাছের সর্বনিম্ন দূরত্ব সমান দড়ি। দোকানে গুটিয়ে
থাকে। বাড়িতে লম্বা। একদিন রং নির্বাচন করে…
খাড়া দুটো খুঁটি মস্তিষ্কে। অবয়বহীন, তবু টের পাই। গভীরে
ঢুকে আছে পায়া; মাথাও ঠেকে আছে পরিধিতে। দুই সাঙাৎ। দূরত্ব বাড়ে, কমে, কখনো স্থির ক্ষণকাল।
এক কল্পব্রিজ গড়ে ওঠে, ধ্বসে পড়ে, রেখারূপ, উধাও কর্পূর। কাঁধঝোলা ঝোলানো যায় না; জামাকাপড়
মেলা যায় না। এক্স-রে, ইউএসজি, স্ক্যান-প্লেট ক্লিপে আঁটকে রাখা যায় না। একটা বল শুধু
ড্রপ খেতে খেতে এক খুঁটি থেকে অন্য খুঁটিতে। শব্দ যেন হার্ট-বিটে মেশে…
১২-১২-২১
(২)
সুনয়ন ঝাপসা দেখে কার্যকারিতা
ক্ষয়ে। কুয়াশামাখা রোদের রোদটুকু হারায়। আক্ষেপ চেষ্টা করে সামনে ঝোলানো অবিন্যস্ত
চুলগুলো সরাতে। পারে না। সরালেও বিক্ষিপ্ত ঝরনা হয়ে ফিরে আসে। নয়ন অয়ন পায় না খুঁজে।
হারিয়ে যায় না; থেকেও না-থাকা
পথের ডাক ড্রাম বাজায়। বিউগল বাজায়। লেফট-রাইট করে তালে তালে। ওঠে-নামে সুনয়নের পাতা।
আক্ষেপের পা-দুটো লম্বা হতে হতে রণ-পা। কেন্দ্রে স্থির চুম্বকডানা অস্থির, বিক্ষিপ্ত
থির-থির।
আলোর ভাগ কমলে অন্ধকারের জোত-জমি বাড়ে। ফসল ফলায়; মরাইমাঠ
কালো শস্যে ভরে তোলে। সবুজ ও সোনালি অভ্যাস ফেলে-ফেলে এসেছে সুনয়ন। স্মৃতির শক্তপোক্ত
বাঁধ ভেঙে হুহু দৃশ্যের ঝলক হায়-হায় মানুষের উঠোন ভাসিয়ে দেয়। ক্ষয়াটে সুনয়ন বন্যারোধকল্পে
আড়াল খোঁজে। কিন্তু আব্রু হারায়…
১৩-১২-২১
(৩)
এখন আর ভুলি না। জানিও না, কেন
ভুলে যেতাম! কেন যে মনে পড়ে হুহু দিনের ভেতর, তাও জানি না। পানকৌড়ি সেদিনও ডুবত ভাসত।
আজও। কাছে থাকা ও দূরে যাওয়ার এই তফাৎ আড়াল তুলে স্মৃতি পালিশ করে হয়তো। দখিনাবাতাস
সমান বয়ে যায় বার্তা স্থির।
দেখা দাও, বলি না। কাছে থাকো,
বলি না। অদেখা মিশে থেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচায়। অপরাধবোধ থেকে খুঁতখুতেমি খতম। আহা,
রাত আর বিস্তৃত হয় না। অভিমানের পারা নেমেই থাকে। রজনীগন্ধার সুবাস থেকে ছুটি পাওয়া
মন উদাস হতে হতে সরলরেখা।
খুশি থাকার তরিকা নিজেকে বানিয়ে নিতে হয়। অন্ধকার থেকে যেভাবেই
হোক ছুটি পেতে চাওয়া পায়ে কত যে ড্রামবিট! কত কত বাঁশি-শিস মনে! আলো ছাড়া বস্তু আর
বস্তুজড়িত ঘটনা চোখের পাতা ফেলতে দেয় না। জেগে থাকো, আরও জাগো। জাগতে রহো আমৃত্যু।
১৪-১২-২১
খুব ভাল লাগল।প্রথমটা লাজবাব।আরেকটা জার্নি মনে হচ্ছে শুরু হল।চলতে থাকুক বন্ধু।-স্বপন রায়।
উত্তরমুছুন