পিটকেয়ার্ন আইল্যান্ডস
চতুর্দিকে মাইল-মাইল মুগ্ধকারিতা, মাঝে একফালি সবুজ। সুদূর সময়ে অগ্ন্যুৎপাতবশত জেগে ওঠা দ্বীপপুঞ্জ আজকাল মহাসমুদ্রে দিনের বেলা আদিত্যের ও রাত্রি জুড়ে সপ্তর্ষির ধ্যান করে। তিনমাস ছাড়া ছাড়া জাহাজ মারফৎ পিটকেয়ার্ন আজকের নব সভ্যতার সাথে যুক্ত হয় – যদিও এখন স্যাটেলাইটের যুগে ইন্টারনেট এই প্রশান্তমহাসাগরলীন সভ্যতাকে ছুঁয়ে রয়েছে। তাহিতি সবচেয়ে নিকটবর্তী – সেখান থেকে ১৩৪০ মাইলের ফারাক। অর্থাৎ পিটকেয়ার্ন সর্বাধিক দূরবর্তী মনুষ্য অধ্যুষিত অঞ্চল এই গ্রহের। যেই গ্রহটি গোল ও ঘূর্ণায়মান। এই দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি মাত্র দ্বীপ অধ্যুষিত – জনসংখ্যা ৫০। এই ৫০ জন এত দূরে মানববসতি থেকে নিজেদের সফলভাবে লুক্কায়িত রেখেও খাতায় কলমে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্গত। যেহেতু আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ব্রিটিশ জাহাজ H.M.S Bounty-র বিদ্রোহকারীরা তাহিতি থেকে পলিনেশিয়ান সুন্দরীদের সঙ্গে করে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে এসে উপস্থিত হন এই দ্বীপপুঞ্জে। এখনকার বাসিন্দারা তাঁদেরই সপ্তম-অষ্টম প্রজন্ম। শঙ্করাচার্যের মতে এই দৃশ্য জগত চিত্তবিক্ষেপগত ভ্রান্তি, সুতরাং কল্পনা। মনের চাঞ্চল্যবশত জগত প্রতিভাত হয় ও স্থান-কাল যেহেতু জগদতীত নয় সেহেতু কাল্পনিক। মনের চিন্তাস্রোত নিরুদ্ধ হলে এই দৃশ্য জগতের লয় হয় ও মানুষ সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পূর্বে সকলই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও মনোগোচর – বৃথা আড়ম্বর। দেহ-মন-বুদ্ধি-অহঙ্কারের নেতিসাধনের পর যা থাকে তাই সকল কিছুর উৎস ও শাস্ত্রে ‘ব্রহ্ম’ নামে অভিহিত। হে পাঠক, আপনি সেই ব্রহ্ম হতে অভিন্ন। শ্বেতকেতু যখন নিজেকে ব্রহ্ম হতে ভিন্ন প্রতিপন্ন করেছিলেন তখনই তাঁর প্রতি ভেসে এসেছিল গুরুবাক্য – “তত্ত্বমসি, শ্বেতকেতো!” পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জের সৌন্দর্য ও নিসর্গ না বললেও সহজেই অনুমেয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী নগরসভ্যতার ছোঁয়াচ এড়িয়ে থেকেও এরা সুশিক্ষিত। যৌবনে কিছু বছর করে নিউজিল্যান্ডে কাটিয়ে আসে। এদের ভাষা পিটকার্ন – ইংরেজীর সাথে মিল আছে ও রোমান হরফ প্রচলিত। সম্প্রতি সেই ভাষার একটি বইও বেরিয়েছে। এদের অর্থনীতি longboat ও canoe মারফৎ হালকা বাণিজ্য, ও ইদানীং ধনীরা এসে থাকেন পর্যটক হিসেবে। নিখিল ভুবন ও গহন অরণ্য এদের অগাধ যৌনতার প্রতি আস্থাশীল করেছে। পলিনেশিয়ান রক্তের মিশ্রণ জুগিয়েছে সাহস। শরীরে যৌবন আসার সময়েই এরা যৌনক্রিয়ায় রত হয়, তাই কিছু বছর পূর্বে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিন্দিত হয়েছে। কয়েকজনকে তো নিউজিল্যান্ডে জেল খাটতেও যেতে হয়েছিল। স্বীকৃতিহীনভাবে মারা যাচ্ছিলেন আবেল – বিখ্যাত গণিতজ্ঞ। তাঁর নাম তখন ইউরোপ জুড়ে চর্চিত – বার্লিনে অঙ্কের চেয়ারটি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সুদূর নরওয়েতে বসে তিনি এসবের কিছুই জানতেন না – বরঞ্চ তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন টিবির কাছে। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়স। স্থানের বিস্তার ও কালক্ষেপ মানুষের নিয়তি গড়ে দেয়। সূর্যের পাশ দিয়ে আসার কালে তির্যগগতি লাভ করে দূরবর্তী নীহারিকাপুঞ্জের আলো। একটা শান্ত অনুভূতি হয় প্রখর দাবদাহের পর বৃষ্টিতে, আর এক শান্তি নিহিত প্রেমিকার ক্ষমাশীল অন্তঃকরণে। আরেক শান্তি বিশ্বশ্রী, সে কারও ধার ধারে না। তুমুল ধনী হলেই একমাত্র ছুটি কাটাতে যাওয়া যেতে পারে পিটকেয়ার্ন-এ। নিজের সুদৃশ্য ইয়াট থাকলে তো আর কথাই নেই। তা না হলে তিনমাস সময়ে একবারই বৃহত্তর দুনিয়ার সাথে সংযুক্ত হয় পিটকেয়ার্ন। দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা বাসিন্দাদের ঘরে-দোরে। খাবারে জুটবে পলিনেশীয় ফলমূল ও সামুদ্রিক মাছ। গহন নিসর্গ (তারামণ্ডল, সফেন বারি, হরিৎসম্পদ) উপভোগ করা ছাড়াও স্কুবা ডাইভিং-এ পারদর্শী হলে এক ডুবে গিয়ে ছুঁয়ে দেখে আসা যাবে H.M.S Bounty-র ধ্বংসাবশেষ। এই দ্বীপের এক মহিলা মেরাল্ডা ওয়্যারেন-এর সাথে আমার মেল মারফৎ কথা হয়েছিল ২০১৭ সালে। আমার প্রশ্নের উত্তরে উনি লিখেছিলেন-
Hi Abhishek,
Thank
you for your message.
We
are getting on with life and hoping that more young people will come home to
keep this island going. We are all getting older & the future if we are not
able to man the longboats & keep the island running is a bit bleak but we
have faith that some will return home.
Thank
you
Meralda
ভাবতে হয় মানব সমাজে বাণিজ্যের গুরুত্ব কী অপরিসীম! জ্যোতিষ, হোরাচক্র ইত্যাদি বিষয়ের প্রয়োগ কী যুতসই! ধরাধামে মানুষের কার্যকলাপের সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে লক্ষ যোজন দূরের নক্ষত্রেরা। পামিস্ট্রি বা হস্তরেখাবিদ্যাও নিয়তিকে বোঝার এক প্রাচীন শৈলী। গা ছমছম করে মানুষের আজকাল দূর অতীতের কথা ভাবলে। পেছনে বহু দূরে দেখা যায় যবনিকা। আবার সামনে অনেকটা গিয়ে যবনিকা। কে যেন বলে দেয় কানে-কানে যে এই দুই যবনিকার পরপারে আলোর উচ্ছ্বাস-ই সমস্ত কিছুর উপাদান। চরিত্রের ও চরিত্রহীনতারও।
অবাক হয়ে যাই তোমার রচনা শৈলিতে
উত্তরমুছুনআপনার মন্তব্য আমার মনে জোর বাড়াবে। নতুন শৈলী সব সময় বিপজ্জনক, কিন্তু তার মজ্জায় প্রাণের উৎসার। ভালো থাকবেন।
মুছুন