শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


কালিমাটি অনলাইন / ১০২


একথা হয়তো কারও কারও মনে হতে পারে যে, সময় যত এগোচ্ছে, সময় তত  জটিল ও কুটিল হয়ে উঠছে। বাড়ছে সমাজের জটিলতা ও কুটিলতা এবং একইসঙ্গে মানুষের মনন ও মানসিকতাও প্রভাবিত হচ্ছে তারই পরিণামে। না,  একথা কখনই মেনে নেওয়া যায় না যে, অতীত মানেই তার সবকিছু ভালো, অতীতের দিনগুলিই ভালো ছিল, সমাজ ভালো ছিল এবং মানুষের মনও ভালো ছিল। আসলে সময়ের ভালো মন্দ বলে কিছু হয় না। সময় তার নিজের নিয়মে গড়িয়ে যায়, তার কোনো শুরু নেই, শেষও নেই। কিন্তু সেই সময়ের গর্ভে যা  কিছুর অবস্থান, প্রকৃতি-সভ্যতা-সমাজ-মানুষ, সেই সবকিছুরই যেমন একটা শুরু আছে, তেমনি একটা শেষও আছে। আর তাই স্বাভাবিক কারণেই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রকৃতি-সভ্যতা-সমাজ-মানুষের ক্ষেত্রে একটা তুলনামূলক বিচার ও বিবেচনার প্রসঙ্গ থাকেই। বরং বলা যেতে পারে যে, তুলনামূলক বিচার ও বিবেচনায় সময়ের নিজস্ব কোনো ভূমিকা থাকে না, যদিও প্রকৃতি-সভ্যতা-সমাজ-মানুষের ভালো থাকা বা মন্দ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সময়কে ভালো বা মন্দের পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। আর তাই,  সময়কে জটিল ও কুটিল অভিধায় উল্লেখ না করে তার আওতায় নিয়ত বদলে যাওয়া প্রকৃতি-সভ্যতা-সমাজ-মানুষকে অভিযুক্ত করাই যুক্তিযুক্ত। অতীতেও যেমন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে বিভিন্ন জটিলতা ও কুটিলতা ছিল, আজকের চলমান জীবনযাত্রায় তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে, এবং তা আরও নোংরা ও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। সামগ্রীক পরিবেশ আরও দূষিত হয়ে উঠেছে।   

 

সম্প্রতি একটি সাহিত্য পুরস্কারকে কেন্দ্র করে যে তুমুল কোলাহল চলছে, তার প্রাসঙ্গিকতায় কিছু সাধারণ প্রশ্ন মনে আপনা আপনিই উঠে আসছে, যাঁদের কোনো একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত করার জন্য মনোনীত করা হয়, সেই মনোনয়নের কোনো নিরিখ আছে কি? সেই নিরিখের যৌক্তিকতা কতটা, বা আদৌ আছে কি? কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ বা অনুগত অথবা সেই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যাঁদের ক্ষমতাবৃত্তের অন্তর্গত, তাঁদেরই পুরস্কার প্রাপক রূপে বেছে নেওয়া হয়। বিশেষত যে সংস্থাগুলি বা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের অধীনস্থ, তাদের ক্ষেত্রে এই পাইয়ে দেওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। আবার একইসঙ্গে প্রশ্ন জাগে মনে, যাঁরা পুরস্কারের সিলেকশন কমিটিতে অবস্থান করেন, তাঁদের যোগ্যতা কতটা? তাঁদের মধ্যে কি আদৌ নিরপেক্ষতার মানসিকতা আছে? নাকি তাঁরাও সেই কাছের মানুষজনদের বা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মানুষজনদের প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারেন না? কেননা, এই পাইয়ে দেবার নীতি থেকে বিচ্যুত হলে তাঁদেরও আর পাওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু দুঃখ হয়, লজ্জাও হয়, এঁরা  এতটাই বধির হয়ে গেছেন যে, বাইরের কোলাহল তাঁদের কানে এলেও তা গ্রাহ্য করেন না। কেননা চাটুকারিতাবৃত্তি এমনভাবেই তাঁদের মনন ও মানসিকতা  অধিকার করে নিয়েছে যে, জ্ঞানপাপী হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ও ক্ষমতাকে ধরে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করছেন। আর এভাবেই যেমন একদিকে মনুষ্যসমাজের অধঃপতন ঘটে চলেছে, অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্র আরও আরও দূষিত ও কলুষিত হয়ে উঠছে। বলা বাহুল্য, এটা একটা খুব সামান্য উদাহরণ মাত্র। নাহলে একটু সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, সমাজ-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্রই কীভাবে জটিল ও কুটিল হয়ে চলেছে এক শ্রেণীর কায়েমীস্বার্থের মানুষজনের দৌলতে।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন