কবিতার কালিমাটি ১১৭ |
প্রতি-জন্মের কথা
(১)
প্রতিটি জন্মের একটি প্রতি-জন্ম থাকা উচিৎ
যে ঠিক মৃত্যু থেকে জন্মের দিকে যাবে, ছেঁড়া চিঠি, অর্ধজীবন,
স্কুল থেকে ফেরার পথে
অচেনা ভয়, মানুষটা বারবার স্বপ্নে এসে ডাকে কিন্তু মুখ
দেখায় না
সেবার ক্যাম্প ফায়ারে যে আগুনে ভিজেছিল তোমার অস্তিত্ব
তা আত্মার বন্দিশালা থেকে লিখেছে বেনামে
আমি একটি বিমা কোম্পানির থেকে বলছি সূর্য তোর নামে যে টাকা
জমা দেওয়ার কথা ছিল
তা ভুল বসত বাবার ব্রেন স্ট্রোকে --
যাইহোক বুঝতেই তো পারছিস
প্রায়োরিটি অফ লাইফ
(২)
একটা পিটিশন দে সূর্য
আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় থেকে পাঁচ হাত গিয়ে যে রাস্তা তার
ফুটপাত কে বর্জন করেছে
তা আমাদের সাবেকী ইস্তেহারে জন্য কতটা জরুরী
কতটা জরুরী সে পথের পাদপদ্মে উজাড় করা প্রাণ
ওই এলো ওই এলো সোনার তরী কাঁখে করে
যে প্রথমে জ্ঞান হারাবে সেই পাবে সঞ্জীবনী
হসপিটাল কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ দীর্ঘ অপেক্ষায় যেভাবে
মনে হয়েছে
কখন যে ডেকে বলবে সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে আর
মিথ থেকে উঠে এসে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছে এক প্রাণ ভোলানো
হাসি
সে কি মৃত্যু, জানি না সূর্য
(৩)
এখানে আর কোনো ভিত্তি-প্রস্থর নেই
সবকটি ভার্চুয়াল মুখ সীমারেখায় এসে দেখছে
এক টুকরো রুটির গায়ে কালো দাগ লেগে রয়েছে
এই তাহলে যুদ্ধের বাজার
যে মাঠময় বিছিয়ে রেখেছে হাতছানি
ধর্মের কল বাতাসে লিখেছে আমি তোমার জন্য যখন বিছানা
সাজাচ্ছি দেখলাম
অস্তগামী এগিয়ে আসছে একটু একটু করে দিনের সময় কমে আসছে
সূর্য তোর প্রতিজন্ম আমার হাতেই শুরু হল
মাধব রেখে গেল দীর্ঘ শীত রাত
(৪)
নাহয় দুটো ফুলের কাছে মূক হয়ে বসেছে সমাধি
তার পাশ দিয়ে আমি হেঁটে গিয়ে দেখেছি
যেটুকু পরমান্ন ছিল খেয়ে ফেলে শেষ মুহূর্তে, নিজেকে খাচ্ছি
সূর্য দেখছে পাচ্ছিস
নিষিক্ত শিশিরের কাছে আমাদের আজন্ম পরাজয়
সে আর তেমন কিছু নয়, যখন তুই দূরে গেলি আমি চুপি চুপি তোর
ঘরে এসে
এক মৃত শহর পেয়েছি
মেলে দেওয়া আকাশটুকু নিয়ে এতদূর যে কেউ আসতে পারে ভাবতেই
পারিনি
মায়ের চির বিষণ্ণ চোখের দিকে তাকিয়েও তো সেই
জন্ম থেকে ফিরে আসার আখ্যান পেয়েছি
(৫)
আর লিখবো না সূর্য আর হয়তো লেখা ঠিক নয়
তোর ছেড়ে আসা সংকেত ধরে ধরে যখন এই মধুশালায়
সমুদ্র পারে মাতাল জীবন ঠেকেছে
খোলা মুখ ফার্নেসের প্রাণান্ত ডাকে উঠে এসেছে এক ঠিকা
শ্রমিক
সে কি সাক্ষী চাইবে কারও?
অথচ সেও জানে বা অন্য সকলে একমাত্র সূর্যই আছে যে নিরাসক্ত
আলোর দিকে থাকে
হাতে করে সামান্য কিছু নিয়ে যখন সে ছেলের কাছে যায়
খানিকটা আত্মা গলে পড়ে মৃত্যুর দিকে
আর তাছাড়া রয়েছেই বা কি কাজ তো একে একে শেষ হয়ে এলো
বাবাও যেদিন মাকে ডেকে বলল আমি শুধু ঋণ রেখে যাচ্ছি
একটি দরিদ্র হাসি জানিস তাকিয়ে দেখলাম অন্তহীন মাঠের পার
দিয়ে কিছু মানুষ
গঙ্গা স্নানে এগিয়ে যাচ্ছে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন