বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬


স্টেশনের চড়ুইপাখি

বাড়ির কাছেই নাইন্থ আ্যাভেনিউ মেট্রো স্টেশন। ছোট স্টেশন। শুধু ডি লাইনের গাড়ি চলে। ম্যনহাটনের দিকে যাব বলে দাঁড়িয়েছিলাম। মিনিট দশেক আছে। দুজন একজন করে যাত্রী জমছে - বেঞ্চিতে বসছে, প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করছে। এরা প্রায় সকলেই কাজে যাচ্ছে আপিস পাড়ার দিকে। কেউ চাকরি করে, কেউ ব্যবসা। রোজ যাতায়াতের সূত্রে এদের অনেকেই দেখলাম একে অন্যকে চেনে – হাই, হ্যালো করছে। দু-একটা জটলাও তৈরি হয়েছে।

আমি তো দুদিনের অতিথি। স্রেফ শহরটা দেখা ছাড়া আমার কোনো কাজ নেই। এদের কথাবার্তায় কান পাততে বেশ লাগছিল। মনে হলো এরা কথা বলতে ভালোবাসে আর এমনিতে সকলে বন্ধু-ভাবাপন্ন। কিন্তু বেশিক্ষণ এরকম কান পেতে থাকা যায় না। তাই একটু ফাঁকায় এসে প্ল্যাটফর্মের সামনের লাইনটা দেখতে লাগলাম।

লাইনের পাশে লোহার বেড়া আর সেই বেড়ার ধারে ধারে কতগুলো ম্যাপেল গাছ। পাতাগুলো শীতের হাওয়া পেয়ে হলদে হয়ে খসে পড়ছে। লাইনের ধারে ঝরা পাতার মোটা আস্তরণ। বেড়া আর গাছে একঝাঁক চড়ুইপাখি কিচির-মিচির করছে। দেখে মনে হয় এদের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব আছে। কখনো কখনো তারা আল্হাদে কিংবা হয়তো পীরিত করে পাতার বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে।

একটা ব্যাপার কিন্তু নজরে পড়ল। প্ল্যটফর্মের ওপরে বা বেড়ার ওধারে দুএকটা ঢাকাবন্ধ আস্তাকুঁড় রয়েছে। দু-একটা পাখি মাঝেসাঝে ঢাকনার ফাঁক থেকে খাবারের টুকরো পেয়ে যাচ্ছে। যেমন স্যান্ডুইচের ছোট্ট টুকরো, আলুভাজার ভগ্নাংশ এইসব। যখনই কোনো একটা পাখি খাবারের টুকরো পেয়ে যাচ্ছে সে আর তার ঝাঁকের বন্ধুদের কাছে ফিরছে না। ফুড়ুৎ করে উড়ে দূরে গিয়ে বসছে –  পাছে অন্য পাখিকে ভাগ দিতে হয়। সেখানে একলা বসে পুরোটা সাবার করছে। আগে নিজের পেট, তারপর বন্ধুত্ব।  

ময়না মানুষের স্বর হুবহু নকল করতে পারে। এই চড়াইগুলো কি মানুষের স্বভাব নকল করছে! কে জানে!  

ট্রেন এসে পড়ল শব্দ করে। পাখির ঝাঁক উড়ে গেল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন