কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬ |
অশান্ত ঘাসজমি
‘বরসাত কা বাদল তো দীওয়ানা হ্যায় ক্যায়া জানে
কিস রাহ্ সে বচনা হ্যায় কিস ছত কো ভিগোনা হ্যায়’
–– নিদা ফাজলী
রিনা কড়া গলায় বরুণকে সাবধান করল, ‘তুমি আর ড্রিঙ্ক করতে পারো না!’ কিন্তু কে কার কথা শোনে। এই তো দু’বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে গেট টুগেদার, এরা ঘনিষ্ঠ প্রপার্টি ডিলার পরিবার। প্যানডেমিক ... পর পর ফার্স্ট ওয়েভ, সেকেন্ড ওয়েভ ডেল্টা, থার্ড ওয়েভ ওমিক্রন।
‘এখনও প্যানডেমিক শেষ হয়নি কিন্তু!’ রিনা শাসনের সুরে বলে। অরুণ ড্রিঙ্ক করে টলমল পায়ে কাছ ঘেঁষে বসল। সঙ্গে ওর স্ত্রী শুভা-ও। শিখা আর সুনীল-ও।
এসব দেখে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ
রিনার শরীরটা কেমন পাক মেরে উঠল যেন। দমবন্ধ ভাব একটা। পার্কের প্রাচীন
অশ্বত্থগাছটার নিচে সতরঞ্জি বিছিয়ে ওরা ছ’জনে বসেছে।
ঘুটঘুটে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। দূরে দূরে ল্যাম্পপোস্টের টিমটিমে আলো। রাত হয়ে
যাচ্ছে ক্রমশ। প্রচন্ড মশার উপদ্রব।
‘দুর্নীতির চক্র ফাঁস হয়ে যাবে, দেখে নিও!’ শুভা উঁচু গলায় বলে ওঠে।
অরুণ বরুণ সুনীল একে অপরের সঙ্গে বাজি ধরতে শুরু করল। পার্টনার- এক্সচেঞ্জ-খেলা। ওরা আদিম হয়ে উঠতে চাইলো। রাতের অন্ধকারে নির্জন পার্কের
ঘাসজমি উন্মত্ত নাচগানে মেতে উঠল।
রিনা ভাবল, ‘কী করি! বরুণকে আটকাবো?’
‘পুলিশ এলে বলতে এসো না যেন!’ শিখা মোবাইল ঘাঁটতে থাকল। বাড়িতে মেয়েকে ফোনে ধরার চেষ্টা করল। পেল না।
পার্কের গেট পেরিয়ে হঠাৎ প্রবল
বেগে ধাক্কা মারলো একটা অনিয়ন্ত্রিত টাটা সুমো, ঠিক ঐ অশ্বত্থগাছের গুঁড়িতেই। কান ফাটানো শব্দে ভেঙে পড়তে থাকল অশ্বত্থ গাছের ঝুরি ডালপালা। সদলবলে ওরা ছ’জন ছিটকে চতুর্দিকে আছড়ে পড়ল। হুইস্কির বোতলগুলো
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে হারিয়ে গেল। বর্ষার মেঘগর্জন শুরু হয়ে গেছে তখন। আহত রিনা শুভা
শিখা তিনজনে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে মাত্র। অরুণ বরুণ সুনীল বেশ ভালোই ঘায়েল
হয়েছে মনে হয়। একটানা গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে।
টাটা সুমো-র তুবড়ে যাওয়া দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসছে তখন একজন রক্তাক্ত পুরুষ ও একজন রক্তাক্ত নারী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন