অশোক তাঁতী : স্মরণে ও মননে
“মানুষ যখন এ জীবন থেকে ও জীবনে যায় / ফেলে যায় কত কিছু…
সে চলে যায়, পিছু ফিরে দেখে না, পিছু ডাকও শোনে না”। - শিখা সামন্ত
“মৃত্যু যখন মনের চারিদিকে হঠাৎ একটা ‘নাই’-অন্ধকারের বেড়া তুলিয়া দেয়, তখন সমস্ত মন প্রাণ অহোরাত্র তাহারই ভিতর দিয়া কেবলই ‘আছে’ আলোকের মধ্যে বাহির হইতে চায়। কিন্তু সেই অন্ধকারকে অতিক্রম করিবার পথ দেখা যায় না। সংসারের অতি বিপুল ভার জীবনমৃত্যুর হরণ পূরণে সহজেই প্রবাহিত হইয়া চলিয়াছে”। – রবীন্দ্রনাথ
আসা যাওয়া জীবনের অঙ্গ, এ যেন চলতে গিয়ে পা ফেলা আর পা তোলার মত সহজ স্বাভাবিক ঘটনা। মৃত্যু এক অমোঘ অলঙ্ঘনীয় সত্য, তবু যখন সে আকস্মিকতায় আবরণ সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় তখন তাকে মেনে নেওয়া বড্ড কষ্ট্কর। বিশেষ করে সে জন যদি হয় বয়োকনিষ্ঠ তবে সে বড় নিষ্ঠুর ঘটনা। আমাদের সবার চেনা, সবার প্রিয় অনিকেত পাত্র যখন আকস্মিকভাবে চলে গিয়েছিল (১১ই নভেম্বর ২০১৩) তখন তার স্মরণ সভায় এই কথাই বলেছিলাম। আজ আবার বয়োকনিষ্ঠ ভাতৃসম অশোক তাঁতীর কথা বলতে গিয়েও প্রকৃতির নির্মম খেয়ালে স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রমের কথা বলতে হচ্ছে। দুর্গাপুরের সাহিত্য জগতে পরিচিত গল্পকার, মৃদু্ভাষী, একটু নিরালাচারী, শক্তিশালী লেখনীর অধিকারী অশোক তাঁতী। লেখক হিসেবে অশোক কেমন, তার গল্পের বিষয় ভাবনা, ভাষা, শৈলী এসব নিয়ে হয়ত, হয়ত কেন, অবশ্যই অন্যরা বলবেন। আমার মনের মধ্যে অন্য কথাদের আনাগোনা। মানুষ যখন শুধুই স্মৃতি হয়ে যায়, বর্তমান যখন তার কাছ থেকে আর কোনো নতুনত্বের দাবি রাখে না তখন স্মৃতির অ্যালবামে বন্দী পুরনো ছবিগুলো, ঘটনাগুলোর মধ্যেই তাকে খোঁজা।
অশোকের সঙ্গে আমার পরিচয় ‘আরবিকা’র সূত্রে ২০০৫ সালে। আলাপ থেকে পরিচয় চেনাজানা। তারপর সাহিত্যের নিয়মিত আড্ডায় গল্পপাঠ, খাওয়া দাওয়া, হাসি গল্প, রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের প্রস্তুতি- তার রিহার্সাল- এসবের মধ্যে দিয়ে চেনাশোনার পরিধি বৃহত্তর হয়।
আরবিকার আড্ডায় নিয়মিত স্বরচিত লেখা পাঠ ও তার আলোচনা হত। সেই আসরে আমার লেখা গল্প নিয়ে আলোচনায় অশোকও অংশ নিয়েছে। আলোচনা মানে যে নিছক আলোচনাই, সেটা যে অকারণ পান্ডিত্য ফলানো বা লেখাটিকে কণ্টকাকীর্ণ করা নয়, তা অশোক জানত। ২০১৫ সালে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে, সেবার আলেখ্য লিখলাম আমি ‘হাস্য রসিক রবীন্দ্রনাথ’- আরবিকার সদস্যরা অংশগ্রহণ করল- অশোকও। রচনা অংশ থেকে পাঠ এমনকি টুকরো নাট্যাংশেও অংশ নিল অশোক। সেই সূত্রে রিহার্সালের সময় নানান টুকরো টুকরো মজার ঘটনার কথা মনে পড়ে। অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৭ই মে ২০১৫।
ওর নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশের সেই ছোট্ট জমজমাট অনুষ্ঠানের কথাও মনে পড়ে- গান, কবিতা সঙ্গে দেদার হাসি গল্প আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া।
সেবার ২০১৬ সালে আমাদের নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, দুর্গাপুর শাখার পক্ষ থেকে সেরা গল্পকারের বিশেষ সম্মান প্রাপক অশোক তাঁতী। ২৭শে মার্চ ২০১৬- নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, দুর্গাপুর শাখার বার্ষিক অনুষ্ঠানে পুরষ্কার প্রদান করা হয় অশোককে। অনুষ্ঠান মঞ্চে মানপত্রটি পাঠ করে আমার কন্যা অম্বালিকা।
অশোকের ছোটগল্প সংকলন ‘ঝড় ও ষাঁড়’ বইটি (প্রকাশকাল- জানুয়ারি ২০১০) নিজের হাতে নাম লিখে আমাকে দিয়েছিল। লেখকের বই তার হাত থেকে পেলে আমি সব সময়ই চাই তাতে তার নিজের হাতের লেখাটি থাকুক- আমার কাছে এর মূল্য অনেক। ওই বইয়ে প্রকাশিত কোনো কোনো গল্প নিয়ে কখনও সখনও ফোনে কথা হয়েছে- সেই সব সময় অশোকের স্বভাবসিদ্ধ মৃদুস্বর, অনুচ্চ হাসির সঙ্গে বলা অনেক কথা মনে পড়ে। আমি তখন নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, দুর্গাপুর শাখার পত্রিকা ‘অদ্বিতীয়া’র সম্পাদক। অশোকের কাছে পত্রিকার জন্য লেখা চাইলাম (ছোটগল্প)- বার্ষিক সংখ্যা ১৪২১ (ইং ২০১৫) ‘ডালিয়ার মুখের সেই সব ব্রণ’ গল্পটি প্রকাশিত হয় (জানি না সে গল্প আর কোথাও ছাপা আছে কিনা)। পরের বছর ২০১৬ সালের বার্ষিক সংখ্যায় আর গল্প নয়, প্রকাশিত হয় অশোকের আলোচনা মৃণাল বণিকের ‘রাডার - সবুজতা ও বিফলতা’। জানি না রাডারের সেই আলোচনা আর কোথাও আছে কিনা, এখানে সেই আলোচনার বিষয়ে কিছু বলা হয়ত বা খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ‘নিম সাহিত্যে’র অগ্রগণ্য পথিক মৃণাল বণিকের ‘রাডার’ এক গল্পগ্রন্থ (সম্ভবত এক মাত্র গল্পগ্রন্থ তাঁর) যেটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে- মৃণাল বণিকের বয়স তখন ২৬। এই বইয়ে গদ্য পদ্যের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই ।‘রাডার’ গ্রন্থের আলোচনায় অশোক লিখেছে- ছোটো গল্পের সংজ্ঞা এখনো নির্দিষ্ট করে নির্ধারণ করা যায়নি – ‘ছোটো প্রাণ, ছোট ব্যথা… শেষ হয়ে হইল না শেষ’( রবীন্দ্রনাথ), ‘প্রতীতিজাত একটি সংক্ষিপ্ত গদ্য কাহিনী’(নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়), ‘রচয়িতার অন্তর্মগ্ন প্রতীতি’ (ভূদেব চৌধুরী), ‘সামান্য কোনো ঘটনার বিন্যাস,হয়ত একটা মনস্তাত্বিক মুহূর্ত’ (শুদ্ধসত্ব বসু), ‘ঘরের সামনে বেড়া দেওয়া একটুখানি জঙ্গল’ (উজ্জ্বলকুমার মজুমদার)… মৃণাল বনিকের রাডার বইতে গ্রন্থিত আখ্যানের সংখ্যা ১২। এই বইতে প্রকাশিত কোনো আখ্যানকেই সমকালীন সংজ্ঞাতে ছোট গল্প বলা যায় না। তিনি ছোটগল্পের প্রচলিত ক্যানন, সংজ্ঞা আর সামঞ্জস্যকে ভেঙেছেন। বিস্তৃত করেছেন ছোটগল্পের সীমা। মানসিক জিনিসকে সাহিত্যিক করে তোলার জন্য তাঁর ন্যারেটিভে কবিতা, বিদ্রুপ, কষ্ট, আত্মজীবনীর খসড়া, প্রবন্ধ, অঘটমান ঘটনা আর অনিশ্চয়তাবোধ। এখানে আখ্যান এসেছে অবলম্বনের জন্য। সেই আখ্যানের সাঁকো বরাবর থাকে মনের জটিল অন্তর্ধান। লেখার দুটো দিক আছে – লেখক আর যে পৃথিবীকে তিনি দেখছেন। আত্ম ও পর। লেখার মধ্যে এই দুটো দিক পরস্পরের সাপেক্ষে অর্জিত হয়। … রাডার বইতে প্রকাশিত কোনো লেখার মধ্যে এই দুটো দিককে সঠিক ও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় না।
ন্যারেটিভের সংজ্ঞা হল এক বা একাধিক event বা ঘটনার বর্ণনা। … মৃণা্লের গল্পে প্রধানত একটিই ইভেন্ট থাকে যা শেষ হয় অনিশ্চয়তা বোধে। ‘অমীমাংসিত উৎকণ্ঠা’ আখ্যানে লিখেছেন, ‘রুমাল নেই / কাঁচ মোছার জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখল / রুমাল নেই / রুমাল / আমার রুমাল!’ এইভাবে রুমাল না পাওয়া জনিত এক উৎকণ্ঠা থেকে ন্যারেটিভের নির্মাণ। ভাবনা চিন্তার অসংখ্য স্তর। তাঁর আখ্যানে থাকে গল্প সম্পর্কিত গল্প, যাকে ইহাব হাসান বলেছেন, মেটা-ন্যারেটিভ। যেখানে টেক্সটের মধ্যে তিনি স্বচ্ছন্দে অন্য গল্পকারদেরও চরিত্র হিসেবে এনেছেন। …
আগের পৃথিবী ছিল সুসংহত, অবিচ্ছিন্ন, দ্ব্যর্থহীন। পৃথিবীর এই ভাব মূর্তির বদল হচ্ছে ভেঙে যাচ্ছে সেই জগতের ধারণা যার সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার অসম্ভব। জীবনের জটিলতার স্থানাংক যত বেড়েছে পৃথিবী ততই হয়ে উঠেছে অসঙ্গত, বিচ্ছিন্ন আর দ্ব্যর্থতাবোধক। … মানুষের চিন্তার এই পুনরুথ্থাপনা চেতনাপ্রবাহ রীতির বৈশিষ্ট্য। উইলিয়াম জেমস প্রিন্সিপাল অফ সাইকোলজি বইতে এই শব্দ ব্যবহার করেন। ডরোথি রিচার্ডসনের উপন্যাস আলোচনা প্রসঙ্গে মে সিনক্লেয়ার প্রথম সাহিত্য আলোচনাতে এই কথাটা ব্যবহার করেন। মানুষের মনের অধিকাংশই অবচেতন। এমনকি সচেতনতার পেছনে অনুক্ষণ কাজ করে অবচেতন। … রাডার–এ প্রকাশিত সমস্ত আখ্যানই অল্প সময়ের, প্রায় তাৎক্ষণিক। আমাদের মনের অন্ধকার আর যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে অনস্তিত্ব আর অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রতি মুহূর্তে দীর্ণ হই, মৃত্যুমুখে পতিত হই। ‘সূর্যমৃতপিতা’ গল্পের নামকরণ থেকেই ভয়াবহ অসংলগ্নতা। আসলে এই শব্দ বন্ধ বেঁচে থাকা, টিকে থাকা দুর্বোধ্য জীবনে অস্তিত্ববান হওয়ার কথা। এই আখ্যানের প্রত্যেক মুহূর্তে আলো ও অন্ধকার, সবুজতা ও বিফলতা।
অশোক তাঁতীর নিজের গল্পগ্রন্থ ‘ঝড় ও ষাঁড়’এর প্রথম গল্প ‘গাছ’এর সূচনা হয় এইভাবে – ‘শেকড় যে মাটির কত ভেতর পর্যন্ত যায় তা কি মানুষ জানে, না ভাবে? গাচ বড় হলে টের পায় কোতায় তার টান। মানুষগুলো সব শুকনো বিচি, জল গড়ালো তো জলের সাতে সাতে তাল মেলালো, ঝোপঝাড় এল তো লুইকে পড়ল’। – এক মায়াচ্ছন্ন অথচ কঠিন বাস্তবের অথবা পরা-বাস্তবের মধ্যে গিরিবুড়োর অদ্ভূদ জীবন দর্শন অথবা নৈর্ব্যক্তিক জীবন ভাবনা। গাছের পাতা ফিসফিস করে পড়তে থাকে।
…বুড়ো নিশ্চল। গাছটা ক্রমশ উদ্দাম হয়ে ধুলোর ঝড় বইয়ে দেয়। আকাশের এদিক থেকে ওদিক পর্যন্ত জ্বলে ওঠে। সমস্ত প্রকৃ্তির মধ্যে বুড়োকে স্পষ্ট করে দেখা যায় গায়ের কাদা শুকিয়ে এসেছে। পোড়া শবের মত -। প্রচন্ড বৃষ্টি নামে। গাছটা ফোঁটা ফোঁটা জল দিয়ে বুড়োকে ধুয়ে দেয়। কাদা গড়িয়ে মাটিতে মেশে। বুড়োর চামড়া ক্রমশ গাছের মত খসখসে হয়ে আসে। পা যায় মাটির গভীরে। উর্দ্ধবাহু গিরিবুড়োর হাত দুটো ডাল হয়ে যায়।
গাছ আর গিরিবুড়ো, প্রকৃ্তি আর মানুষ যেন স্বভূমিকায় থেকেও চরিত্র বদলাতে থাকে – একসময় আদিম প্রকৃ্তির মধ্যেই বিলীন হয়ে যায়।
এইভাবেই অশোকের গল্প, গল্পের পর গল্পের পথ পেরিয়ে জীবনের পরতে পরতে আবিষ্কার করতে শেখায় জানা জগত আর অজানা জগতের নানান চিত্রকে, অনুভবকে। কখনো কোনো গল্পে ক্ষণিকের জন্য ছায়া ফেলে যায় বিখ্যাত কোনো বিদেশী লেখক সত্ত্বা অথবা আমাদের কোনো পরিচিত গল্পের বা গল্পকারের ছাঁচ – কিন্তু তবু শেষ পর্যন্ত সব গল্পই আদ্যন্ত অশোকেরই – তারই লেখক সত্ত্বার অভিব্যক্তি বা প্রকাশ। কখনো তার সঙ্গে তার ব্যক্তিসত্ত্বা সংপৃক্ত কখনো দূরগামী। এই গ্রন্থের শেষ গল্প ‘হাত দুটো আর ডাকবে না’ শেষ হয় – ‘হঠাৎ ডানহাতটা চিতা থেকে বেরিয়ে আসে। হাতটা নড়তে নড়তে আমাকে ডাকছে – খোকন আয় হাত ধর, বেড়াতে যাব। হারু সেদিকে তাকিয়ে ক্ষ্যাপার মত ছুটতে থাকে। ডোমের হাত থেকে বাঁশ কেড়ে নিয়ে পিটিয়ে হাতটাকে চিতার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় … চিতা থেকে এক ঝলক আগুন দপ করে উঠে হারুর মুখের দিকে এগিয়ে ভেঙে যায়।
‘হাত দুটো আর কোনোদিন আমাকে ডাকবে না’ গল্প শেষ করে চুপ করে ভাবতে হয়। ভাবনার হাতে ভর দিয়ে, ভাবনাগুলো সাথে নিয়ে। জীবন, তার আপাত কঠিন শিহরণ জাগানো বীভৎসতা শেষ পর্যন্ত আমাদের বাস্তবের মুখোমুখিই দাঁড় করায়।
অশোকের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ১১ই অগাস্ট ২০১৯ আরবিকার এক অনুষ্ঠানে। বসেছিলাম, কিছুক্ষণ পর স্বভাবসিদ্ধ নীরবতায় কখন পাশে এসে বসেছে টেরই পাইনি। দেখা হাসি ও দু চারটে কুশল বিনিময় প্রশ্ন- একসময় কেন জানি না আমি বলে বসলাম- আজ একটাও ছবি তোলা হল না। অশোক হাতের ইশারায় অঞ্জনকে ডাকল- ‘দিদির একটা ছবি তুলে দাও’- অশোকের সাথে তুললাম ছবি। সেই শেষ, আগামীতে আর কখোনই এই অবকাশ আসবে না। দেখা হবে না কোনো অনুষ্ঠানে, এমন কোনো শক্তিশালী দূরভাষ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি যার মাধ্যমে হতে পারে বার্তা্লাপ। অশোকের জীবন কাহিনী, তার লেখনী স্তব্ধ, অসমাপ্ত রয়ে গেল – নতুন কিছু নয়, তার এযাবৎ কালের রচনার মধ্যেই সমকাল বা আগামীকাল আবিষ্কার করবে তাকে।
‘কোনোদিন জাগিবে না আর / জানিবার গাঢ় বেদনার / অবিরাম অবিরাম ভার সহিবে না আর’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন