কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫ |
একার
ভিড়ে একা
তুষার ঝড় হবার কথা ছিল নাকি? তবে এই তুষার আলোয়ান গায়ে সে উপভোগ করছে। হেডফোনে গান শুনছে যখন ডুবিয়া গিয়াছে শহরের ৬৪ গলি।
বেকার লকডাউন জীবনে হেডফোনে গান শোনার এক প্রাক বিকাল সৌন্দর্য আছে।
ভেতরে বসে গানের আলো, বাইরে নির্বাক ডুবন্ত তুষার শহর। কান কেবলই গান সুর কথায়।
একটু আগে ঘুমের প্রতিমন্ত্রী এসেছিল। বিদায় করেছে সে ঘুম মন্ত্রণালয়
না দিয়েই। যে গানটায় সে ডুবে যেতে চাইছে সেটা ভাবছে, সে আয়নার ওপাশে বেতের চেয়ারে বসে
আছে চুপচাপ, একাকী সে ভিড় করে আছে একাকীত্ব দখল করে।
কোনো কাজে মন সরে না।
তৃষার ডুবন্ত শহরে বেরিয়ে পড়ে সে। রাস্তা ধরে হাঁটার সময় আকাশ দেখে। আকাশকে দেখতে হয় তাকিয়ে যোগ্য করে। হঠাৎ কানে এলো কে যেন গান গাইছে। আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে কান পেতে দিলো গানের উৎসে।
ছেলেটার দিকে চোখ পড়ল। এগিয়ে আসা দেখে গান থামল তার। পরিচয় হলো। বাংলাদেশের
একজন বিখ্যাত শিল্পীর ছেলে। এই নামটা খুব কম শোনা যায়। এই শিল্পী গতবছর মারা গেছেন।
বুকটা আবার মুচড়ে উঠল তার।
কিছুক্ষণ ঝিম মেরে ছেলেটা বলল;
: চলুন না একটু হাঁটি
হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটা বলল; আপনি কি ‘এ পরবাসে রবে কে হায়! কে রবে এ
সংশয়ে সন্তাপে শোকে’ গানটা জানেন?
সে বলল: গানটা কঠিন।
তার এই ভঙ্গি যেন সে গান গাইতে পারে। তারপর আচানক প্রশ্ন;
: আপনি শব্দ করে কাঁদেন?
এই তুষার যাযাবরী সন্ধ্যায় শোক মিছিল যেন মৃদু হেঁটে যাচ্ছে। কী জানি কোথায় বাষ্প উড়ে যাচ্ছে কোন আকাশে। ছেলেটা গাইছে…
তোমার শেষ নাহি তাই শূন্য সে যে শেষ করে দাও আপনাকে যে
শেষ নাহি তাই
শূন্য সে যে শেষ করে দাও আপনাকে যে
হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, তবু ওরা হাঁটছে। সেকেন্ড কাপের সামনে এসে সে ওকে বলল, কফি পান করবেন?
হেসে দিলো ছেলেটা। বলল; আমি পান করি না, খাই।
কফি নেবার জন্য ভেতরে ঢুকতে যাবে, ছেলেটা তার হাতে এক টুকরা কাগজ ধরিয়ে
দিলো। কফি নিয়ে বাইরে এসে দেখে ছেলেটা নেই। নেই মানে নেই।
আশ্চর্য! না বলে চলে গেল?
জ্যাকেটের পকেট থেকে কাগজের টুকরাটা বের করে পড়ল সে:
ক. কোন মানুষ যদি নিজেকে কষ্ট দেয়, সেটা থেকে তাকে বের করে আনবার উপায় কি?
খ. কেউ যদি
কাউকে মিস করে সেটা সে তাকে যথার্থ বোঝাবে কী করে?
গ. মানুষের
বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে সহজ উপায় কী? ভুল জিনিস চিন্তা করা বন্ধের উপায়? কাউকে ভুল না বোঝার উপায় কী? কাউকে বিশ্বাস করার পন্থা কী?
ঘ. পজিটিভ কিছুকে
পজিটিভ ভাবার ক্ষমতা কীভাবে গ্রো করে?
পড়া শেষ করে থমকে দাঁড়িয়ে রইল। কখনও কখনও সময় তীব্র তুষারের মন্দ মন্থরে জমাট বেঁধে যায়।
নড়াচড়া করা যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন