কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪ |
বাঘ নাকি অশরীরী?
‘নয়ী-নয়ী আখেঁ হোঁ তো হর মন্জর অচ্ছা লগতা হ্যায় / কুছ দিন শহর মেঁ ঘুমে লেকিন, অব ঘর অচ্ছা
লগতা হ্যায়’ (নিদা ফাজলী)
মুখখানা সুচন্দ্রার গভীর ব্যথায় ভরে গেল। একটু ইতস্তত করে সে বলে ফেলল, ‘কিছু মানুষের মধ্যে এত স্বার্থপরতা, এত অন্যায়, এত নিষ্ঠুরতা যে বিশ্বাস করা কঠিন।’
মিউজিক বাজছে। নদীর ধারে শীতের পিকনিক বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠছে। হালকা হিন্দি গানের তালে তালে চলছে মদ্যপান। নেশা জড়ানো গলায় অনেকে মিলে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। নিজেদের মধ্যে হালকা ইয়ার্কি-ফাজলামো চলছে। অস্থির হয়ে উঠছে সুচন্দ্রা। এরকমটা জানলে সে এতদূর আসতো না।
মোবাইলে স্বপনের মেসেজ, ‘পিকনিক কেমন উপভোগ করছো,
ম্যাম?’
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিন শেষের অন্ধকার। প্রথম চাকরী পেয়েছে সে। সুতরাং কলিগদের সঙ্গে বেশ সাহস করেই বেরিয়ে পড়েছে সুচন্দ্রা। কিন্তু এই ফ্রি মিক্সিং-এর ছলে যখন শুধু শরীরী খেলা এসে যাচ্ছে তখন সে শুকনো পাতা ঝরার শব্দ শুনছে। সে তো খুব সহজভাবেই জীবনকে মেনে নেয়। কিন্তু এসব বাঁদরামো কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সকালে নিকটবর্তী পুলিশথানায় যেতে হবে তাকে। সুচন্দ্রা ভাবছে।
স্বপনের মেসেজ বার-বার আসছে। সুচন্দ্রার জন্য বেশ উদ্বিগ্ন সে। পাড়ায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে তার। হাসি খুশি ছেলে, তবে তথাকথিত স্ট্যাটাস বলে তার কিছু নেই।
সুচন্দ্রা তার মেসেজের উত্তর পাঠায়, ‘আমি পাতাবাহার গাছ, ছাব্বিশ বছরের। আমার তরতাজা ডালপালায় অসংখ্য পাখি কাঠবেড়ালি ছুটোছুটি করে খেলা করে রোজ। আজ কয়েকটা জংলি কুকুর হামলে পড়েছে। আমি বেঁচে থাকবো কিনা জানি না। এই বাংলোয় রাতটা কাটিয়ে, ...’
মোবাইল অফ্ করে সুচন্দ্রা একদৃষ্টে চেয়ে থাকে অন্ধকারের দিকে। দূরে কোথাও টিমটিম করে বাতি জ্বলতে দেখা যায়।
রাত যত গভীর হতে থাকে, রাতচরা পাখির কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। বাংলোর কাছাকাছি ঘন জংগল। জংলি হাতির গম গম আওয়াজ, বাঘের গর্জন ভেসে আসছে। আবার শিকার-শিকারীর সেই আদিমখেলা শুরু হয়ে গেছে। ছিঁড়ে ফালা ফালা হয়ে গেছে শালোয়ার কামিজ। অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে জোড়ায়-জোড়ায় চোখ! বাঘ? নাকি অশরীরী?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন