বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪


রুমাল

 

-''চা খাবে তো?" মোবাইল থেকে চোখ না তুলেই রিমির প্রশ্নের জবাব দেয় শশাঙ্ক।

-''হ্যাঁ দাও! তোমার হাতের চা না হলে সকালটা জমেই না, জানো, আমার নতুন রুমালটা পাচ্ছি না।''

শশাঙ্কর কথায় রিমির মুখে একটা নিভু-নিভু আলো ফোটে। কোথাও কোন অসুবিধা নেই। সবটা নিখুঁত। রিমি চা তৈরি করতে যায় রান্নাঘরে। রান্নাঘরের টুকটাক শব্দ সারা বাড়িতে নুপূরের মত বাজতে থাকে। শশাঙ্ক চা খাবার সময় অদ্ভুত শব্দ করে মুখ দিয়ে। রিমি হাঁ করে গিলে নয় রীতিমতো। মুহূর্তটুকু শুষে নেয়। শশাঙ্কর তৃপ্তি মাখানো মুখটা এখনো কি আনন্দ দেয়! এরপর দৌড় শুরু হবে দুজনের। অফিস। কেরিয়ার। রিমি টিফিন গোছায়। শশাঙ্কর ব্যাগে ভরে দেয় ওর টিফিন-বাক্সটা। রিমির দেওয়া রুমাল উঁকি দেয় শশাঙ্কর ব্যাগ থেকে। রিমি একবার হাতে নিয়ে দেখে। গন্ধ শোঁকে। স্যাঁতস্যাঁতে, ঠান্ডা গন্ধ। শশাঙ্কর পায়ের আওয়াজে সাবধানী হয় রিমি। ‌সুন্দর গোছানো ব্যাগটা হাতে তুলে দেয় ওর। একটা আলগা টান হাতে। শশাঙ্ক।

-''কি হয়েছে বলো তো তোমার? এমন অন্যমনস্ক কেন?''

রিমির অস্বস্তি হয়। একটা নরম হাত ছাড়িয়ে দেয় একটা শক্ত পুরুষালী হাত।

-'ধুর! অফিস যাও তো, দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমার।''

রিমি নিজের ঘরে যায়। মেঘলা সকালের ম্লান আলো ওর মুখে এসে পড়েছে। হঠাৎ কী মনে হয়, বেরিয়ে আসে বাইরে।

-''ফ্ল্যাটের চাবিটা দিয়ে যাও তো আজ।''

শশাঙ্ক সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে থমকে যায়।

-''চাবি নিয়ে কি করবে, আমি তোমার আগে ফিরব তো।''

-''আজ এই আগে-পরেটা যদি বদলে যায়!''

শশাঙ্ক রিমির হাতে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে বেরিয়ে যায়। রিমি ফিরে ওর টেবিলের কাছে বসে। সাদা কাগজে বারবার চেষ্টা করে কথা ওগড়ানোর। মনের পাকদন্ডী  বেয়ে কথারা কোনদিকে বাঁক নিচ্ছে ঠাওর করতে পারে না রিমি। ও ফিরে যায় কোন এক বিকেলে। শশাঙ্কর সঙ্গে সবে আলাপ শুরু। দশ বছর আগে মৃণালকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে তখন কত অজুহাত দিয়েছে। তবে কোনটার জন্য তেমন কষ্ট করতে হয়নি। নিজে থেকেই সরে গিয়েছিল মৃণাল। রিমি শাড়ি বের করে আলমারি থেকে। শাড়ির ভাঁজে শশাঙ্কর রুমাল। সেই রুমালে রিমির প্রিয় শব্দ আঁকা। 'ভালোবাসা'। মৌমিতাকে শশাঙ্ক। প্রেমের চিহ্ন। রিমির বিষণ্ণ লাগে। রিমি  সব বোঝে। শশাঙ্কর নতুন আবেশ মৌমিতা।‌‌ ও পুরনো ট্রলিটা নামায় আলমারি থেকে। ওটার চারিদিকে মাকড়সার জাল, রিমি সব পুরনো জিনিস ভরে নেয় ট্রলির মধ্যে। শশাঙ্কর ফ্ল্যাটটাতে কেমন যেন অন্ধকারের গন্ধ পায় রিমি। ট্রলিটা নিয়ে এগিয়ে যায় রাস্তার দিকে।

 


1 টি মন্তব্য: