রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

গিওকন্ডা বেলি

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

নিকারাগুয়ার কবি গিওকন্ডা বেলি’র কবিতা

 

(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)   




 কবি পরিচিতি জিওকন্ডা বেলি ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বরে নিকারাগুয়ার  মানাগুয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। স্পেন, মাদ্রিদ এবং ফিলাডেলফিয়াতে জার্নালিজম পড়া শেষ করে তিনি মানাগুয়াতে ফিরে আসেন। তাঁর স্বামী একজন  আমেরিকান জার্নালিস্ট। তিনি বর্তমান নিকারাগুয়ার একজন উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক।


বসন্ত

চুম্বনগুলো মালঞ্চ গাছের ফুলের মত

নীরস শুকনো নয়।

বীজের শক্ত খোলস আমার বাহুতে

অংকুরিত হয় না।

আমি সর্বদা পুস্পবতী থাকি

আমার অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিতে!

সতেজ সবুজ থাকি বসন্তের

প্রাঙ্গণের মত।

আমি খিলখিল হাসি...

কারণ মেঘ ও বাতাস ভালোবাসি!

ভালোবাসি সে পাখিগুলো

যারা গান গাইতে গাইতে

মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায়!

এমনকি তখনও -- যখন আমি

হাতির দাঁতের মত দেয়ালের ভেতরে

পুরনো স্মৃতি নিয়ে আবিষ্ট থাকি!

 

আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি

গোপন ফিসফাসকে, বন্য ঘোড়ার শক্তিকে

ও সামুদ্রিক পাখির ডানার সংকেতকে!

আমি বিশ্বাস করি...

আমার গানের ভেতর ছড়িয়ে থাকা

অজস্র শিকড়কে!

 

 

What r u Nicaragua? (কেমন তুমি?)

 

তুমি কেমন নিকারাগুয়া!

তুমি কি পৃথিবীর মাঝখানে লুকিয়ে থাকা

ছোট্ট একটা ত্রিকোণ! 

তুমি কী এক পাখির উড়ান...

হরবোলা, হামিংবার্ড অথবা ঐ আশ্চর্য

সুন্দর ফিরোজা মাথাওয়ালা পাখি!

 

তুমি কী লম্বা গভীর নদীর কুলুকুলু তান!

পাহাড়ের বুকে এঁকে দিচ্ছো পদচিহ্ন

বহন করে চলেছো সুন্দর মসৃণ চকমকে 

নুড়িপাথরের রাশি!

 

তুমি কেমন?

নারী বক্ষের মতো উত্তুঙ্গ, মসৃণ 

চেতাবনি দেয়া ভূখণ্ড? তুমি কী বিশাল

বনস্পতির সবুজ, জড়াজড়ি করা

গান গাওয়া অজস্র পাতার দল!

আর পায়রাদের আবাসস্থল?

 

তুমি কী ধুলো, ব্যথা... বিকেলের কান্না!

প্রসূতির প্রসব যন্ত্রণার মতো তাপিত!

ক্লিষ্ট মুঠি আর বুলেট ভরা বন্দুক?

তুমি কী নিকারাগুয়া...

আমায় এমন করে  কষ্ট দাও!

 

At night wife makes her points (নিশীথের উপকথা - স্ত্রীর উক্তি)

 

নাহ...

সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো পা

আমার নেই!

ফ্যাশন শো-এর রানওয়েতে হেঁটে 

জীবন অতিবাহিত করিনি।

ফটোগ্রাফারদের চোখ ধাঁধানো আলোতে

গ্ল্যামার গার্লও হয়ে উঠিনি...

আমার পা চওড়া নিতম্ব পর্যন্ত।

এরোবিকস করা, ঘাম ঝরানো ইত্যাদি

প্রচেষ্টার পরেও রুখতে  পারিনি

তাদের ক্রমাগত চওড়া হওয়া-কে!

এখন তারা স্তম্ভের মত হয়ে ঘরের

ছাদকে ধরে রেখেছে।

 

নাহ… আমার

সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো ক্ষীণ-কটি নেই

অথবা তার মত মসৃণ হালকা ঢেউ তলপেট

মাঝে নিখুঁত গভীর নাভিমূল কেন্দ্রে।

হয়তো কখনো এমন ছিলো আমার

গর্বিত ছিলাম শরীরের ও-ই অংশটুকুর জন্য।

সেসব  সন্তান জন্মের আগের কথা

ছেলে তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে এলো এবং

আমার তলপেটে রইলো কাঁচির চিহ্ন! 

 

নাহ... আমার

সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো হাত নেই।

ট্যান সুন্দর  ভাস্কর্য… সঠিক ব্যায়ামে

সুগঠিত মাংসপেশি, সঠিক সন্তুলিত ওজন।

আমার শীর্ণ বাহু দুটোতে কোনো

মাংসপেশি আর নেই... নেই সঠিক ওজন।

কিন্তু আমার চরিত্রের জন্য যা প্রয়োজন

তা আছে... শিশুদের বহন করার

নিজের চুল আঁচড়ানোর অথবা বন্ধুদের

আলিঙ্গন করার ক্ষমতা!

 

নাহ… আমার সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো 

বক্ষ-সৌন্দর্য নেই!

পর্যাপ্ত, সুডৌল... সি অথবা বি কাপ।

আমাকে লো-কাট পোশাকে অতটা

আবেদনময়ী লাগে না

আমার মায়ের ভরসা সত্বেও...

যে আমার বিভাজিকা-হীন স্তনের

সৌন্দর্য  ভেনাসের মতো ক্লাসিক!

 

ওহ! আর মুখাবয়ব! কেমন করে

বলি আমার সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো

চাঁদবদন আছে! মুখের সেই তিল

ঠোঁটের কোণে, বড় বড় চোখ, ধনুকের মতো ভ্রু যুগল, তিলফুল  নাসা…

অভ্যাস বশতঃ নিজের চেহারা ভালোই লাগে

হাতির মতো চোখ, স্ফীত নাসারন্ধ্র, মোটা ঠোঁট

কখনোই যৌন আবেদন আনে না... কিন্তু সব

ছেড়ে দেয়া যায় লম্বা চুলের জন্য! এ ব্যাপারে

আমি সিন্ডিকে টেক্কা দিয়েছি। আমি আশ্চর্য হবো না যদি এ ব্যাপারটা তোমাকে স্বান্ত্বনা দিতে সক্ষম হয়!

 

শেষতঃ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এটা সবচেয়ে মূল্যবান

সাক্ষ্য। সিন্ডি ক্র‍্যাফোর্ডের মতো নিতম্ব

আমার নেই... ছোট গোল দুটো ভাগই সুচারু

ভাবে  চিহ্নিত! আমার উদ্ধত বিশাল মাটির কলসির মতো। এটাকে লুকোনোর কোনো 

পথ নেই। তোমার পছন্দ বেছে নাও।

আমি এর জন্য লজ্জিত হই না বরং

এডভান্টেজ নিই... আরামদায়ক ভাবে বসে

লেখাপড়া করে লেখক হতে!

 

কিন্তু এবার বলো কতবার তুমি

সিন্ডিকে পায়ের কাছে পেয়েছো?

কত সকাল সে তোমায় মধুরতা দিয়েছে!

ঘুমন্ত কাঁধে চুম্বন! সুরসুরি… মজার কথা...

আইসক্রীম বিছানায়? একখানা সদ্য লেখা

কবিতা... অভিযানের আইডিয়া! কী

অভিজ্ঞতা সিন্ডি তোমাকে বলতে পারে

যা আমার সাথে তুলনা হয়!... কী বিপ্লব,

ষড়যন্ত্র, ঐতিহাসিক ঘটনা তার জানা আছে?

সে আনন্দ সে কোমলতা... সূর্য-বিহীন রাতের

সেই জ্ঞান, চাঁদ-বিহীন ভোরের আবিষ্কার

তোমার ভূগোলের চালচিত্র!

 

একবার ভাবো

আমার প্রস্তাব শোনো

সিন্ডির ছবিতে ভরা পত্রিকাটা ফেলে

বিছানায় চলে  এসো!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন