রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ৯৭


বয়স নিয়ে সেদিন বন্ধুমহলে নিছকই আড্ডা হচ্ছিল। বয়স সম্পর্কে এক একজন এক একরকম অভিমত পেশ করছিল। যেমন একজন বন্ধু বলল, ইদানীং আমার বয়সটা আমাকে খুব জ্বালাতন করছে। কেন? কেন? বাকি বন্ধুরা রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল। জ্বালাতন করছে কেন? কীভাবে জ্বালাতন করছে? বন্ধুটি এবার রীতিমতো বিরক্ত হলো যেন। বলল, আরে বাবা বয়সটা যে বেড়ে গেল! সত্তরের গন্ডি অতিক্রম করলাম! কেন তোদের বয়সও তো বসে নেই! সবাই কম বেশি সত্তর। এই বয়সেও তোরা সবাই কি খুব ভালো আছিস? বাকি বন্ধুদের এবার চট করে কোনো উত্তর আর যোগালো না। আসলে প্রথম বন্ধুটি বয়সের প্রসঙ্গে ভালো থাকা বা না থাকার যে ব্যাপারটা বোঝাতে চাইছে, তা  সবার বোধগম্য হচ্ছে না। ভালো থাকা বা না থাকার সঙ্গে বয়সের কী সম্পর্ক? যে কোনো বয়সেই তো ভালো থাকা যায় অথবা যায় না! তাহলে? এবার বন্ধুটিকে তার বক্তব্য নিতান্তই সরল করে বলতে হলো, আরে বাবা, এটা কেন তোদের মাথায় ঢুকছে না যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরটা যে পুরনো হয়ে যাচ্ছে, শরীরের কলকব্জাগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে, মেরামতের চেষ্টা করেও কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না! বাকি বন্ধুরা এবার যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, ও এই কথা! তা শরীরের আর দোষ কী বল! সব কিছুরই তো একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে! শরীরেরও আছে। তাছাড়া শরীরের কোনো ওয়ারেন্টি পিরিয়ডও নেই। তাই ওসব ভেবে লাভ নেই। শরীরকে তার নিজের মতো চলতে দে। খবরদারি করতে গেলে সে আরও বিগড়ে যাবে, বেগরবাঁই করবে। কেন, মধুকবির সেই কবিতার লাইন মনে নেই, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’! আসলে কি জানিস, বেশি বয়সের যে সব রোগ, প্রকৃত বিচারে সেই সব রোগ বেশি বয়সের অলঙ্করণ। রক্তচাপ, সুগার, থাইরয়েড, হার্টের গন্ডগোল, অস্টিও বা রিউমেটিক আর্থারাইটিস, ঘন ঘন পেচ্ছাপ, চোখে ছানি, মাথায় টাক – মানে যতরকমের উটকো ব্যাপার-স্যাপার আছে, তা সবই তুই যে সিনিয়র সিটিজেন পদমর্যাদায় উন্নীত হয়েছিস (যদিও এখন আর রেলের রিজার্ভেশনে ছাড় বন্ধ করে দিয়েছে মহামান্য কেন্দ্রীয় সরকার) তারই সদম্ভ ঘোষণা। তাই বলি কী, শরীরের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের যাবতীয় উৎপাতকে পাত্তা না দিয়ে, মনকে নিয়ে চিন্তাভাবনা কর, মনের বয়স যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখ, মনটাকে সেই কৈশোর তথা যুবাবয়সের মনের মতো তাজা রাখার চেষ্টা কর।  প্রথম বন্ধুটি এবার রীতিমতো তেড়েমেড়ে উঠে বলল, ওসব লেকচার মারা বন্ধ কর তো! যত্তসব জ্ঞান দেবার চেষ্টা! এবার আর একজন বন্ধু, দ্বিতীয় বন্ধু, মৌনতা ভেঙে  বলল, আসলে যেটা শুনতে আমাদের ভালো লাগে না, সেটাকেই আমরা ফালতু লেকচার বলে মনে করি। কিন্তু ভেবে দেখ, এটাই হচ্ছে জীবনের সার কথা। আমাদের জন্মের আগে আমাদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আমাদের মৃত্যুর পরেও আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং এই জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী যে সময়টুকু আমরা অতিবাহিত করি, তাকেই আমরা জীবন বলি। আর এই জীবনকালের মধ্যেই আমাদের যাবতীয় কাজকর্ম, দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য, বিভিন্ন রকম প্রতিকূল ঘটনাপ্রবাহ ও সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই, মানবসমাজকে উন্নততর পর্যায়ে উত্তীর্ণ করার জন্য সংগ্রাম, সবকিছুই করে যেতে হয়। এবং তার জন্য শরীর ও মনের বিরাট ভূমিকা আছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, প্রকৃতির নিয়মে শরীরের বয়স বেড়ে যায়, তার কার্যক্ষমতাও হ্রাস পায়, আর তাই একান্ত জরুরি মনের বয়সকে বৃদ্ধ হতে না দেওয়া। এবং সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত ও সমাজগত জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে সঠিক ধ্যান-ধারণা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ, বৃহত্তর মানবসমাজের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনকালের প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দসন্ধানের ওপর।  বলা বাহুল্য, সেদিনের  বন্ধুমহলের নিছক আড্ডাটা কিন্তু দারুণ জমে উঠেছিল। আরও অনেক বন্ধুর আরও অনেক অভিমত ও বক্তব্যও আমাদের সবাইকে সমৃদ্ধ করেছিল। আর আড্ডাটি ছিল পরম উপভোগ্য।

২০২১ সালের এটাই শেষ সংখ্যা। বড়দিন ও খৃষ্টমাসের শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে।   

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


1 টি মন্তব্য:

  1. দুরন্ত আড্ডা।
    সকলের জন্য রইল প্রীতি, শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।

    উত্তরমুছুন