শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০২


দরজার এপার-ওপার

 

দুনিয়া জিসে কহতে হ্যাঁয় জাদু কা খিলৌনা হ্যায়

মিল জায়ে তো মিটটী হ্যায় খো জায়ে তো সোনা হ্যায়”

                                                          -- নিদা ফাজলী

 

সব দিকে শুধু কনফিউশন। জোলো বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সব সময় টেনশন, বুক ধড়ফড়। গাঢ় নিশুতি রাতে, বাড়ির পথে এগিয়ে যায় মাধুরী। একটি প্রাইভেট নার্সিংহোমের নার্স সে। একটু উপরি টাকার জন্য ওভারটাইম করতে হয় তাকে। ঘরে অসুস্থ বাবা, মা। ছোটোবোনের স্কুলের খরচ। সবটা তাকেই সামলাতে হয়।

কী আশ্চর্য! আজ স্ট্রিট লাইটগুলো সব ফিউজ হয়ে গেছে। ভয়ার্ত চোখে মাধুরী ধীরে ধীরে পথ ধরে সামনের দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ হাতের উপর আর একটি শক্ত হাত চেপে ধরল। উঃ ... উঃ ... যন্ত্রণার স্মৃতির সরণি ধরে মাধুরী বুঝতে পারল পাড়ার সেই ভদ্রলোক স্বপন মাল। খ্যাঁকখেকে হাসি হেসে সে বলল, ‘মাধু, আজ তাহলে চল আমার ফ্ল্যাটে?’ আচমকা এই তথাকথিত ভদ্রলোকটির গালে সপাটে একটা থাপ্পড় কষালো মাধুরী।

‘আ হা, রাগ করিস কেন? জানিস তো তোকে কত ভালোবাসি।’

ছিটকে সরে যায় মাধুরী। তার মাথার ভেতরে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। সে কোনোরকমে হাত ছাড়িয়ে দৌড়োতে শুরু করে।

বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছে দেখে খোলা দরজায় ছোটোবোন দাঁড়িয়ে। আবছায়া আলোয় সেই অশুভ শক্তি গাছতলায় দাঁড়িয়ে থাকে।

‘দিদি, তুই এত রাতে বাড়ি ফিরলি?’

হাঁপাতে হাঁপাতে মাধুরী দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে। বাবার কাশিটা বেড়েছে। মায়ের সুগার। সাইড ব্যাগ থেকে ওষুধগুলো বের করে সে।

‘রোজ রোজ ঐ মাতাল লোকটার সঙ্গে ঘরে ফিরিস, লজ্জা করে না তোর?’ মায়ের চোখেমুখে আগুন ঝরে পড়ছে।

‘মা, লোকটাকে তো কোনো পাত্তা দিই না আমি, বিশ্বাস করো’!

‘ঘর থেকে বেরিয়ে যা মুখপুড়ি। মরে যাবো আমরা, তবুও তোর আয় করা টাকায় খাবো না।’

বাবা মা-র দুর্বল হাতগুলি ঠেলতে থাকলো তাকে দরজার বাইরে। বোন মল্লিকা দরজার কপাট সপাটে বন্ধ করে দিল।

মেঘের অন্ধকারকে সাক্ষী রেখে মাধুরী চলন্ত অটো-য় চড়ে বসলো। চারদিকে তখন বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।     

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন