প্রতিবেশী সাহিত্য
ডি.এম. এড্রিবিগবে’র কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতি : নাইজেরিয়ার কবি
ডি.এম.এড্রিবিগবে (A.D.Aderibigbe) জন্মগ্রহণ করেন নাইজেরিয়ার লাগোসে। তিনি বর্তমান
সময়ের খ্যাতনামা কৃষ্ণকবি। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও ফেলোশিপ পেয়েছেন।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে গবেষণারত।
দি বয়(ফর ডরসেন) (ছেলেটি)
কখনো
তাকে স্কুল ইউনিফর্মে
দেখা
যায়নি। বরং
সময়ের
ছাপ মারা জীর্ণ পোশাকে
প্রতিদিন
সে দেখা দিত...
সবুজ
ঝোপঝাড়ের নীচে
ঢাকা
পরে যেত তার মাথা!
আমার
হস্টেলের পেছনের বারান্দা
থেকে
রোজই ওকে দেখতাম।
তার ছোট্ট
হাত দুখানার সাথে
গাঁইতিটির
যেন অচ্ছেদ্য বন্ধন!
সেটা
ওঠে নামে… ওঠে নামে…
যেন অক্লান্ত
এক মুষ্ঠিযোদ্বা!
আমি ভাবি
তার মা
হয়তো হবে অথবা
মায়ের
মতো কেউ দ্রুত এসে বলে
'তাড়াতাড়ি
শেষ করো -- যাতে খাবার
খেতে
পারো, সেটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!'
আমার
মনে ভাবনা আসে
খাদ্য
যেন ঐ আট বছরের ছেলেটির কাছে
এক আশ্চর্য
সুখ!
আমি দ্রুত
ক্লাসে চলে যাই
ছেলেটির
ছোট্ট হাত ওঠানামা
করতে
থাকে!
(ডরসেন নামের আট বছরের ছেলেটি আই ফোনের কার্বন প্রডাকশনের জন্য কয়লা খনিতে কাজ করে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমগ্র আফ্রিকান মহাদেশে উত্তাল প্রতিবাদ শুরু হয় ২০১৭ সালে)
Mirror (ভাঙা আয়না)
যখন মা
আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নিল
এবং আকাশছোঁয়া মন্তব্য করতেন
আমরা
তার দাঁতের ফাঁক লক্ষ্য করতাম!
একদিন
ওরা এলো...
আমাদের
টেলিভিশন, ভিডিও, চেয়ার
কার্পেট
সব সরিয়ে নিলো!
এমনকি
ম্যান্ডেলার ছবিখানাও
দেয়াল
থেকে খুলে ভেতরে রাখলো।
ছোট ছেলের
রাকসাকও সাথে ছিলো।
তারা
থামেনি... যতক্ষণ না আমাদের
স্মৃতিগুলো ট্রাকে বোঝাই হ'য়ে পিষ্ট
হয়ে যায়!
ওরা দরোজা
তালা খোলা রেখে
চলে গেলো...
আমি চকিত দৃষ্টি বুলিয়ে
ঘরের
ভেতর একখানা ভাঙা আয়না
খুঁজে
পেলাম... তার সামনে বসে
পরিষ্কার
দেখতে পেলাম
আমার
ভাঙাচোরা অতীত!
আমার
যা কিছু এসেছে বা গেছে।
খেলনা
উড়োজাহাজটি প্রতিবেশীর
রান্নাঘরে
দুমড়ে পড়ে গেছে,
আমার
জল-কামানটি ভেঙেছে
বোনের
বয়ফ্রেন্ড। আর আর...
আমার
বাবা... যাকে এই
ভাঙা
আয়নায় আবার দেখতে পাচ্ছি!
To be my father (বাবা হ'তে হ'লে)
মায়ের
বটুয়াটি শব্দ করেছিলো।
তাড়াতাড়ি
কানে হাত দিতেই
বাবার
ভয় পাওয়ানো বজ্রের মতো আওয়াজ!
মা খুব
দ্রুত জরুরি কিছু স্টোররুমে তালাবন্ধ
করে সেই
সন্ধ্যায় বড় প্যাডলকটি নিয়ে
আমার
হাতধরে সিটি বাসে সোজা
হসপিটাল!
পার্স-টি আমার কোলে দিয়ে
একজন
ডাক্তার ও দুজন নার্সের সাথে
ভেতরে
চলে যায়...
নার্সেরা
এসে আমার কাছে পুরনো কথা
জানতে
চাইলে সেই রুমে ঢুকে পড়ি
যেখানে
মা বেডে শুয়ে রয়েছে।
বন্ধ
চোখে তাকে মৃত মনে হচ্ছে!
নিচের
ঠোঁট দাঁতের মাঝে আটকে রয়েছে।
শার্ট
একটা হুক দিয়ে ধরা এবং
তার স্কার্ট
থেকে রক্ত গড়িয়ে আসছে
চোখের
জলের মতো
সারা
পা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আমি তখন
দশ বছরের...
কিন্তু
জেনে গিয়েছিলাম
কারো
বাবা হতে হলে একজন নারীকে
কতটা
কষ্ট করতে হয়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন