সমকালীন ছোটগল্প |
দৃষ্টিদান
-আমি
বিনুনিটা বেঁধে দিই!
উত্তরের
অপেক্ষা না করেই একটা শীর্ণ অপটু হাত নীলার কাঁচাপাকা চুল বেয়ে নেমে আসছে।
-তুমি
আর কত...
শেষ
হওয়ার আগেই সেই শীর্ণহাত নীলার ঠোঁটে বসে থামিয়ে দেয় কথা।
-সব একটু স্বাভাবিক হলেই আমরা তোমার লেখা নিয়ে বসবো।
সেই শীর্ণ হাতকে নিজের হাতে রেখে নীলা বলে। নীলা জানে, ওপাশের মানুষটা কোনো উত্তর দেবে না। সত্যিই উত্তর নেই। গ্লকোমা একটা চোখের দৃষ্টিশক্তি খানিকটা কেড়ে নিয়েছে। তবুও শীর্ণহাত লিখে চলত অপর চোখের ভরসায়। কখনো পড়ে শোনাত নীলাকে। নীলার কখনো দেখা হয়নি সেই সব শব্দমালা। এবার হয়তো দেখবে।
নীলার চোখ জুড়ে ব্যান্ডেজ। তবুও ও দেখতে পাচ্ছে। একটা হাত অনবরত ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। হাসপাতালের বেডের পাশে চেয়ারটাও নিশ্চয়ই এতদিনে আকাশের গন্ধটা চিনে ফেলেছে। যেমনভাবে নীলা চিনতে পারে। ওর কেবিনের দরজা খুললেই একটা শীতলগন্ধ ভেসে আসে। গন্ধের কোন রং হয়? হলে আকাশের গন্ধের রং কী হতো? নিশ্চয়ই নীল। হাসপাতালে সারাদিন এসব হিজিবিজি চিন্তা করে নীলা।
নীল
শার্টকে দুই বেণী দুলিয়ে কিশোরী প্রশ্ন করে।
একছুট্টে নীলা সেদিন পালিয়েছিল রাস্তা থেকে। বুকের ভেতরে ধুকপুক। স্কুলের বাইরে নীলশার্ট বা নীলগেঞ্জি পরা ছেলেটা রোজ দাঁড়িয়ে থাকে। বেশিরভাগ দিন ফুচকা খাওয়ার ভান করে। নীলাও আড়চোখে তাকায়।
তারপর কথা চালাচালি। একই কোচিংসেন্টার। হাতের নাগালে হাত। সুযোগে আলতো ছোঁয়া। একদিন মেঘ মাখানো বিকেলে আকাশ জানালো মনের কথা। তারপর সেদিন মেঘ-চিরে বৃষ্টি নেমেছিল। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি। বৃষ্টি মাখানো সন্ধ্যেতে নীলা জানালো কথাটা। ওর বাবার বদলির কারণে রাজ্য ছাড়তে হচ্ছে ওকে। সেদিন বৃষ্টি বন্ধ হল। তবে দুই কিশোর-কিশোরীর মন জুড়ে শুধুই কুয়াশা।
রাজ্য ছাড়া হয়ে ওঠেনি নীলার। বিভীষিকাময় ট্রেন দুর্ঘটনা। হাসপাতালে কয়েকটা দিন ঘোরের মধ্যে কেটেছিল। প্রথম যেদিন চোখ মেলল, সামনে শুধুই অন্ধকার। একটা গন্ধ পাচ্ছে। আর একটা কিশোরের হাতের ছোঁয়া। বাবা-মাকে হারিয়ে নীলা আশ্রয় পেয়েছিল আকাশদের বাড়ি।
দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারানো কিশোরীকে আশ্রয় দিলেও নিজেদের হবু পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে পারেনি কেউই। পরে আকাশ কলকাতায় নিয়ে এসেছে নীলাকে। চোখের বদলে চোখ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কখনো অর্থ, কখনো নীলার শরীর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। সব গুছিয়ে উঠতে সময় লেগে গেছে অনেকগুলো বছর। সারাদিন নীলাকে দেখভাল করতে গিয়ে চাকরি করা হয়ে ওঠেনি আকাশের। বয়স থেমে থাকেনি। আকাশ সযত্নে রক্ষা করেছে নিজের চোখ। নীলার জন্যে। নিজের জীবনের কথা গেঁথেছে শব্দমালায়। সারাদিন টিউশনি, লেখালিখি। অবশেষে আকাশ পেরেছে নিজের চোখ দিয়ে নীলার অন্ধকার দূরে সরাতে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে নীলা। টেবিলে সাদা কাগজের মেলা। আকাশ বলছে। কাঁপা কাঁপা হাতে নীলা লিখছে। নীলা স্বপ্ন দেখছে, একদিন আকাশের শব্দমালারা পাতায় সাদাকালো অক্ষর হয় ঘুরে বেড়াবে সারা পৃথিবী জুড়ে।
অপূর্ব। তবে এই গভীর বিশ্বাস আর ভালবাসা বিরল হয়ে আসছে পৃথিবীতে।
উত্তরমুছুনসিনেমার মত লাগছিল পড়ার সময়
উত্তরমুছুনপুরোটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো যেন , খুব ভালো লাগলো পড়ে। আরো পড়বার অপেক্ষায় রইলাম
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর একটি অনুভূতি সমৃদ্ধ লেখা পড়লাম। এগিয়ে যাবার শুভেচ্ছা রইল।
উত্তরমুছুন