কবিতার কালিমাটি ১১১ |
অতীত ও নীলাভ পাতার ভূগোল
সাদা জবার ঝাপটা লাগল মাথার উপর। পথটাকে ছেয়ে ফেলতে চায় ফুলেল উষ্ণতা।
বেলতলার বুক চিরে নরম রঙের সত্যিরা নির্জন — সরু রাস্তায় এগিয়ে যায় ঝিমঝিম দুপুর, নাবাল
ভরায় কিছু ভিটে; সুখ গড়া চলছে ধারে ধারে —
সহজেই পথ পেতে চায় সবাই; এভাবেই সুমিতা ম্যাডামের বাড়ির চারপাশে ভুগোল গড়ে কানাই
আর হরিপদ, মুক্ত বাতাসে উজ্জ্বল হতে থাকে বাবলা কাঁটার মূক বাঁশি —
দূরত্ব পার
হওয়াই কঠিন। আলুথালু ছায়ায় ভাঙা ডালপালার সাথে পাখির শিস্ শুনেছি মাত্র — কত কাজ বাকি,
রাধি পিসি কোমরের বাঁক নিয়ে প্রবহমান হয়ে যায়, সুধাকৃষ্ণ ঝরে যাওয়া কৃষ্ণচূড়ার নিচে
বসে থাকে ফ্যাল ফ্যাল — ছেড়ে গেছে তার সমূহ
অতীত, নীলাভ পাতার গায়ে নীলটুকু ঢেলে আগাছায় বয়ে যায় নীরব বাতাস —
ধূসর মোহের দোয়েল পাখিটি
মৌমাছির গুনগুন শব্দে ভেঙে যায় নিঃশব্দ। ঝরে যাওয়া কদম পাপড়ির যাপিত
জীবন জানে কয়েক মহূর্তের নিঃস্ব উড়াল, তার নিচে হামা দেওয়া শিশুটি মাটি খায় — মুখে
অমলিন চাঁদেরা আড়াল করে সূর্যের উজ্জ্বলতা — উড়িয়ে দেয় ধূসর মোহ, গৌতম ও তার বউ মাথা
থেকে মাথায় চালান করে মাটি ভর্তি ঝুড়ি — তাদের নিমেষ ছুঁয়ে ঘট ডুবানি পুকুরে ভেসে উঠে
সাঁতারু খড়হাঁস
কে আছে আমার
অপেক্ষায়? ঝড়ে ঝুঁকে পড়া বাসনাগাছে ঝুলন্ত ফোঁটাজল — ছায়ায় ছায়ায় এঁটেল মাটির নাছোড়
সম্পর্ক, কেউ কি এখানে ঠিকানাহীন হয়ে যায়? অথবা খৎকুড়ের কাছ দিয়ে ভাস্বতীও হেঁটে চলে
পথে পথে। সবুজ পাতার ফাঁকে কীভাবে ডাকছে ওই দোয়েল পাখিটি — তার অশ্রু তাপ একমাত্র ছুঁয়েছে
আলপথের দীর্ঘকাল।
মেঘ ভুলে আছি পুকুর পাড়ায়
মেঘ ভুলে আছি ভর দুপুর। অন্ধকার ভেদ করতে চায় পোকামাকড়ের উল্লাস–
ছুটাছুটি
করছে রেণুবালা আর তার তিন ছেলের বউ, জ্বালানি ভিজে যাওয়ার আগেই অস্থিরতা মিশিয়ে দেয়
রান্নাঘরে, রোদলাগা মাটির বুকেকাঁপন; পাখি উড়ে, অশান্ত হয়ে ওঠে নিকানো পথ - গায়ে গায়ে
মোমাছির বিষাদ – থমথমে বাতাসে নড়ছে না গাছের পাতা
প্রার্থিত আলোরা ঋতুবদলের সাথে সাথে মুখ ফিরিয়েছে মিলন শেষের আঁচলে-
হাঁসের সঙ্গম থেকে জলফোঁটা ঝরে পড়ে পুকুর পাড়ায়, প্রকাশ খুড়োর ভিটে থেকে ধীরে ধীরে
নেমে যায় সমুদ্রচোখ – সে চোখে আত্ম-নিবেদনের সন্ধ্যাতারা; কতদিন কেটে যায়, মাছের কাঁপনে
জলের ইতিহাস আর হেরে যাওয়া অতিক্রান্ত পথ মিশে যায় ছায়ার দীর্ঘতায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন