কালিমাটি
অনলাইন / ৯৪
আক্ষরিক অর্থে আমরা অর্থাৎ এই বিশ্বে বসবাসকারী মানুষেরা এখন বসবাস করছি এক পরিবর্তিত বিশ্বে। বিগত ২০১৯ থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলশ্রুতিতে এক অপ্রত্যাশিত ও অভাবিত অবস্থা এবং পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক জীবনযাপন হয়েছে বিপর্যস্ত। আগের মতো আমরা কেউ আর সাধারণ শারীরিক পদ্ধতিতে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ ও বর্জন করতে পারছি না। সামাজিক ভাবে কেউ কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে পারছি না। এমনকি সংক্রমণের আশঙ্কার দরুণ কেউ কারও সুখে দুঃখে অংশগ্রহণও করতে পারছি না। তাহলে মনে মনে উদ্বেগ ছড়াতেই পারে, আমরা কি ক্রমে ক্রমে অসামাজিক প্রাণীতে রূপান্তরিত হচ্ছি? ছেলেবেলা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বইতে পড়া ‘মানুষ এক সামাজিক প্রাণী’ এই ধারণা থেকে ক্রমশ বিচ্যুত হচ্ছি? বস্তুত পক্ষে যাঁরা এই করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এই ধারণা মনে মনে পোষণ করেই পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় গ্রহণ করেছেন। তাঁরা অন্তত পৃথিবী ভবিষ্যতে কোনো একদিন আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, এই ভাবনার রূপায়ণ দেখে যেতে পারেননি। স্বপ্ন দেখার অবকাশ পাননি, ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে’।
অনেকেই তর্ক বিতর্কে অংশগ্রহণ করে প্রশ্ন তোলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের দরুণ সারা পৃথিবী জুড়ে যে মৃত্যুতান্ডব চলেছে, তা অস্বীকার করছি না, কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও তো বাস্তব যে, পৃথিবীতে আরও অনেক অনেক ভাইরাসের সংক্রমণে এবং অন্যান্য রোগে বা অসুখে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দুর্ঘটনায় কত কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষত এমন কিছু অসুখ আছে, যার নিরাময়ের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। আর তাই, মৃত্যুর জন্য আতঙ্কিত না হয়ে বরং আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি, যাতে আমরা মৃত্যুকে যতদিন সম্ভব ঠেকিয়ে রাখতে পারি।
হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে আসল কথা। এটাই হচ্ছে যুক্তিপূর্ণ কথা। আমরা ছেলেবেলায় সামাজিক বিজ্ঞানের বইতে যেমন পড়েছি, ‘মানুষ এক সামাজিক প্রাণী’, ঠিক তেমনি প্রাণী বিজ্ঞানের বইতে পড়েছি, ‘মানুষ মরণশীল প্রাণী’। না, এসব আদৌ কোনো নতুন কথা নয়, আমরা সবাই এসব কথা জানি। এবং শুধুমাত্র মানুষ কেন, পৃথিবীতে যতরকম প্রাণী আছে, পশুপাখি-কীটপতঙ্গ-ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস, সবারই মৃত্যু আছে। আবার শুধু প্রাণেরই বা কথা কেন, বিজ্ঞানীদের মতে, জড় ও অজড়, সব কিছুই পরিবর্তনশীল এবং তাদের বিনাশ ঘটে। সুতরাং যাবতীয় প্রাণ ও অপ্রাণের জন্ম-মৃত্যু একটা প্রক্রিয়ার দুটি দিক। তবে যেহেতু প্রাণীদের মধ্যে মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছে মানুষের, তাই একমাত্র মানুষেরই মৃত্যুচিন্তার পাশাপাশি আছে মৃত্যুচেতনা। আর এই মৃত্যুচেতনাই বিভিন্ন বিষম পরিস্থিতিতে মানুষকে বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত করে তোলে। এবং তারই পরিণামে আমরা প্রায়শই ভুলে যাই জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম ও সমীকরণ। বেঁচে থাকার আনন্দের স্বাদই আমরা বিস্মৃত হই মৃত্যুচেতনার প্রেক্ষিতে।
সুতরাং পরিশেষে এইটুকুই বলা যেতে পারে, মৃত্যুর ভাবনা মুলতুবি রেখে সবাই বাঁচার আনন্দ উপভোগ করুন এবং ভালো থাকুন। সবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের বর্তমান সংখ্যায় স্লাইড শো’তে যে পাঁচটি ছবি আছে, সেই পাঁচটি ছবি আমাদের অত্যন্ত স্নেহের ও ভালোবাসার চিত্রশিল্পী রূপক কুন্ডুর সৃষ্টি। এবং রূপক শুধু চিত্রশিল্প নয়, বরং মননশীল কবিও। রূপকের কবিতা ও চিত্রশিল্পের একটি সংকলন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘বৈভাষিক প্রকাশনী’ থেকে। বইটির শিরোনাম ‘রূপকধর্মী’। আগ্রহী পাঠক ও চিত্রশিল্পীরা বইটি সংগ্রহ করতে পারেন প্রকাশনী থেকে।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :Kajal Sen, Flat 301, Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur
831002, Jharkhand, India.
মনোজ্ঞ প্রস্তাবনা
উত্তরমুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত
"মৃত্যুর ভাবনা মুলতুবি রেখে সবাই বাঁচার আনন্দ উপভোগ করুন এবং ভালো থাকুন" - স্বাগত জানাই এই আহ্বানকে!
উত্তরমুছুন