কবিতার কালিমাটি ১১০ |
নবাবগঞ্জ ২
অবর্ণনীয় এই শহরের সন্ধের শরীর। বুনোঘাস ফুটে আছে, পেনসিলবাক্সে রাখা ফুরোনো সিসের মতো ক'রে। আমি চলেছি কোথায়। খুউব সুগন্ধ। ছাতিমের ফুল উথলেছে। দিকে দিকে। ধীরে ধীরে। আজ সারা শহরের গায়ে, কাহার আনন্দ লেগে আছে। গঙ্গার হাওয়া হাওয়া আজ। চোখের পাতারা কাঁপে। মন কাঁপে। এখনও এখানে কিছু পড়ে আছে পরিত্যক্ত। নদীঘাট। ছেঁড়া নৌকো। শীর্ণ মাঝি। জটলা করে। খৈনি ডলে। দাঁতে দেয় যন্ত্রণার বীজ। সংসারের প্রচুর অভিমান, তালি দিয়ে উড়িয়ে দেয়... উড়ে যায় দুঃখ! ব্যথা! ক্রোধ! খেতে না পাওয়ার রাতগুলো.....
আমাকে অবাক
করে সেইসব দোকান বাজার
পসরা সাজানো
আর কোন খদ্দের নেই কোথাও
টফি টফি ছেলেমেয়ে,
মুড়ি-ফুলুরির গাছে গাছে
কোথাও ফুটেছে
চোখ, কোথা যেন নয়ন ফুটেছে
লোকালয় থেকে
দূর, দূরে দূরে কিছু কিছু মুখ
খাটিয়া গল্প
শোনে, কবিতার মতো উৎসুক
পান ঠোঁটে দিয়ে
যেই চুন লাগিয়েছে ভীরু জিভে
রামনাম ক'রে
ওঠে, গেয়ে ওঠে রাখাল-নগর
আহা কী বিষাদ
গানে, ক্লান্তিতে মরে আসে দেহ
একা একা বসে
থাকে শনিঠাকুরের বিগ্রহ
ঠাকুরও গান
শোনেন, হাঁটু তার দুলে ওঠে তালে
শ্রীগুরু চরণ
ধ'রে সুরে সুরে প্রার্থনাকুল
সাধারণ ক'টি
হাত, হারমোনিয়ামে, ঢোলে বাজে
আজ রাতে ঈশ্বর
নেমে এসেছেন সমাজে!
আমি তোকে দেখতে
পাই
বিশ্বাস কর,
তোকে দেখি
নীলজল... পরিঅলা
বাড়ির কিশোর
ছাতিমের দুলদুলে,
তুলতুলে সাঁঝের আকাশ
নবাবগঞ্জ যেন
জগদ্ধাত্রী হয়ে আছে...
আলো
আলো
কয়েকটি মেয়ের
কলপাড়
গঙ্গার জলে
দেয় রাত্রির আঁধার আঁধার
সে আঁধারে তুই
সই, ওলো মোর চান্দের পিঠা
মিষ্টি গুড়ের
গায়ে তুই যেন নক্ষত্র
মুখে দিই
নেশা হয়
আতুর সজল হয়ে
উঠি
প'ড়ে থাকে সারাপথ,
প'ড়ে থাকে বটগাছের ঝুরি
ঘরে ফিরে আসে
দেহ, তোকে ছেড়ে আমি কভু, ফিরে আসতে পারি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন