সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শাহনাজ নাসরীন

 


কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০০


মনোলগ

 

একটা স্থির বর্তমানে দাঁড়িয়ে শুধু নিঃসঙ্গতা দেখি। তাকের ওপর থেকে ডিপ্রেশনের  ওষুধগুলো চেয়ে আছে। এক, দুই, তিন করে চারটি প্রতিদিন; পঞ্চমও আছে  একটি, ওটা অপশনাল। বাকী চারটিতে না কুলোলে এটা খেতে হবে। বিষণ্নতা নয় উদ্বেগ রোগটি হয়েছে, বললেন ডাক্তার। সাবধান না হলে বিষণ্ণতা থেকে সিজোফ্রেনিয়া বা আরও কঠিন কিছু হতে পারে, নামগুলো বলেছেন ডাক্তার। রাত  আটটা বাজতেই হুড়োহুড়ি কিছু খেয়ে ওষুধগুলো গিলে শুয়ে পড়তে হবে।  

শিথিল শরীরে হাত-পা ছড়িয়ে বেহুঁশ ঘুমানোর সময় কেমন দেখায়, ভাবি। ঘুম  থেকে জেগে গ্রেগরির মতো গুবরে পোকা হয়ে যাবো না তো? আর কিছু জীব বা পতঙ্গ আছে নাকি, এমন ঘুমোয়? জানা আছে কুম্ভকর্ণ নকি ছ’মাস ঘুমোয় বাকি   ছ’মাস খাটে দ্বিগুনের বেশি।  কোনোদিন ঘুম ভেঙে তার মতো সক্রিয় হবারও আশা দেখি না।

বটের শিশু রাক্ষসের মতো কার্নিশ খেয়ে উঠে গেছে ছাদে, দেয়াল ফুঁড়ে আমার  ঘরেও ঢুকিয়েছে দুরন্ত পা। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি, ওপড়ানোর কথা মনে আনি  না। ওষুধ খেয়ে খেয়ে মনের ক্লান্তি ছড়িয়েছে শরীরে। ঘুম ভাঙলেও শরীর জাগে না,  মাথাটি নিরেট, ভালোলাগা-মন্দলাগা, আনন্দ-বাসনা কিছু নেই যেন!

প্রাচীন গুহায় জমে থাকা ভারী বাতাসের মতো বিষণ্ণতা বুকে নিয়ে পথ হাঁটি। অর্ধেক জীবিত বা অর্ধেক মৃত এক সত্তা... কোথায় কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে ডিপ্রেশনের সাপ? যাপনের যত ক্লেদ, যত বিষ তাকে জন্ম দিয়েছিল? এত এত  ওষুধের তাড়নায় সে কি ঘুমিয়ে গেছে? নাকি বিদ্রোহী হয়ে ছোবলে ছোবলে বিনাশ  করছে জীবনের আনন্দলোকের সকল উপাচার?

আজকাল ওষুধ খাবার আগে একটি স্পৃহা উল্কার মতো দেখা দেয়। কী হবে যদি  সব ওষুধগুলো গিলে নিই একবারে একসাথে...

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন