কবিতার কালিমাটি ১১০ |
যাত্রা
ফুলদানিতে ফুলগুলি
বিবর্ণ–
সপ্তাহখানেক
এভাবেই পড়ে ছিল
হয়তো বা। গ্লাসটপ
কফি টেবিলটাতে
ধুলোর মিহি
আস্তরণ; পর্দাগুলি ধুতে
দেয়ার সময়
হয়েছিল; মাসের শেষ,
অনেক জিনিসই
ফুরিয়ে যাওয়ার কথা,
লিস্ট করার
দরকার ছিল। দর্জি কি
জামাগুলি পৌঁছে
দিয়েছিল? পোষা কুকুরটা
বসে আছে দরোজার
কাছে, দৃষ্টি উদাসীন।
আকাশ মেঘলা,
সকাল থেকে বৃষ্টিও হয়েছে
কয়েক পশলা;
বারান্দার বাগানের টবে
গাছগুলি ভেজা
ভেজা। আমার ঘর, প্রাণাধিক
আত্মজা আত্মজ,
আমার বর; হাত বাড়িয়ে
শেষবারের মতো
আলতো ক'রে ছুঁয়ে দিলাম।
অলৌকিক মুহূর্তের অপেক্ষায়
সেতার আর সরোদের
অপূর্ব মিশেলে
আলো ছায়া ঘেরা
মোহন সন্ধ্যায় বড্ডো
বেমানান আমি;
খাপ খাওয়ানোর অদম্য
প্রয়াস, সপ্রতিভতার
ভান অতিমাত্রায়।
সযত্ন চর্চিত
অনুচ্চ সংলাপ, শুদ্ধ সংস্কৃত
আলাপ, যেন কিছুই
আমার নয়; আকাশ
আলো ক’রে হঠাৎ
বিদ্যুৎ চমকালো যেন
এক ঝলক সাদা
নিয়নের মতো; মুহূর্তেই
উদ্ভাসিত ঘর
বাড়ি, গাছপালা, মাঠ আর
মোরাম বিছানো
রাস্তাটা। আকাশ ভেঙে
কী তুমুল বৃষ্টি,
ঝোড়ো বাতাসে সব তছনছ!
সেই বৃষ্টির
জলে তুমি, আমি, আমাদের বন্ধুরা,
অতীত এবং বর্তমান,
সমস্ত কিছু মিলে মিশে
একাকার। বোধোদয়ের
প্রারম্ভে, ফিরে যাবার
তীব্র বাসনা
হয়; ফিরতে চাই নিখাদ, নিষ্কলুষ
আদিম আবেগের
উৎসমুখে। বিশাল জলরাশির
অবিশ্রান্ত
প্রবাহের কাছে আজ আমি ভীষণভাবে
নতজানু প্রার্থনায়,
একটি অলৌকিক মুহূর্তের
অপেক্ষায়।
মনে আশা নিরাশার তীব্র দোলাচল,
–
নদী
কি আদৌ ফিরবে উৎসের কাছে?
দ্বিধা
মগজের ভিতরে
দূর জলাশয় গান গায়
একই পংক্তি
বারবার। দৈববাণী ভেসে
আসে; কেবল এই
পথটুকু পেরোলেই পাওয়া
যাবে তৃষ্ণার
জল। আরো আছে সারি সারি
খেজুরের গাছ
আর দ্রাক্ষালতা; শোনা গেছে
সেখানে মানব
মানবীরা অতি সুখে বাস করে।
আর একটু, কেবল
আরেকটু পথ! হঠাৎ থমকে
দাঁড়াই; অদৃশ্য
একটি পর্দা দুলে উঠে, হাতছানি
দেয়; ভাবি,
হয়তো পৌঁছে গেছি গন্তব্যে, সামনে
অগাধ জলরাশি।
দ্বিধান্বিত আমি, দাঁড়িয়ে
থাকি; অদ্ভুত
এক নিরবতা যেন টুঁটি চেপে ধরে;
সঙ্গীতবিহীন,
কোলাহলহীন, বড় বেশি অপরিচিত,
বড় বেশি অন্যরকম!
বড় বেশি নিশ্চুপ চারপাশ।
দৈববাণী ভেসে
আসে, ‘এখানে প্রবেশ করো! এই
সেই স্থান!’
কুয়াশার মতো অবসাদ আর বিতৃষ্ণা
নেমে আসে হঠাৎ
সারা শরীর মন জুড়ে; ফেরার
প্রবল ইচ্ছে
হয়। ভাবছি, যদি ফিরে যাই কেমন হয়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন