কবিতার কালিমাটি ১০৯ |
মৃতের
মাতৃমঙ্গল
(৯)
আমি জেগে থাকি
কাটা-হাতখানা
অন্য-হাতে নিয়ে সারারাত জাগি
অনন্ত ভোরের
দিকে হাতের গহীনে জ্বলে ওঠে হাতের চিতা
হাড়-গলা গরম
ঘন হয়ে এলে কেবল শীত শীত লাগে… ঘুম লাগে
এইসব মুনিরা
ঘুমের ঘোরে কোথাও কোনো জানালা নেই; সই সই নয় দরজার বাতাস…
(১০)
ছায়া ছায়া,
অন্ধকারে ডুবে হাওয়া, মুখ দেখা যাচ্ছে না কিছুতেই
ছায়ার ভেতর
মিশে যাওয়া দু’টি আবছা ছায়ামূর্তি
একই রকম অথচ
কত আলাদা
একটি শরীর নিষ্ক্রিয়,
নির্দোষ, নিস্পৃহা আর চরম উদাসীনতা নিয়ে চলছে মাটির ওপর…
আর
অন্যটি সামান্য
ঝুঁকে, আবর্জনা আর ঝোপঝাড়ের ওপর দিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টায় হাঁপাচ্ছে…
মাঝে-মধ্যে
থেমে থেমে নি:শ্বাস নেয়ার চেষ্টা
তারপর আবার
আরো ঝুঁকে টেনে টেনে চলে তার বোঝাখানি
হতচকিত হয়ে
দেখতে পেলো কী সামান্য পথই না পের হয়েছে!
ছায়া ডুবে
গেলে
ঘরের ভেতরে
ঘর আর চোখের ভেতরে চোখ ঘুমিয়ে পড়ে
হয়তো জোনাকী
পোকার ভেতর পৃথিবীর অবশিষ্ট আলো জেগে আছে!
(১১)
পাতার পরত বেয়ে
বেয়ে ঝরে-পড়া ঝর্ণার আওয়াজ
হাড় হতে হাড়ের
ভেতরে…
গাছের বুক হতে
পাখিদের বুক বেয়ে ধাবমান, বৃষ্টির বিলাপ।
বিক্ষুদ্ধ
বাতাসের গান…
বাতাসের হাত-পা-আঙুল
আমাদের কাঁচের জানালায় ডুবে ডুবে যায়
গ্রীষ্মের এই
গহীন সন্ধ্যায়
অগ্নিকালো আকাশের
নিচে দীর্ঘ দাঁড়াই
আমি আর আমার
ছোটবোন আত্নহত্যা
এখন কি পরিস্কার
হলো তোমাদের আয়নার কুয়াশার আবরণ!
(১২)
চোখ জোড়া যেনো
ঘুমের মধ্যে গলে যায়…
উঁচু উঁচু বিশাল
ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে নৌকা চালাই
নৌকায় আমার
মৃত ঠাকুরমা আর মহাশূন্যের একটি পিঙ্কি বিড়াল
চোখবিহীন ঘুমের
সর্বত্র শুধু ঘুম
কপালের দু’পাশে
সাগরের ঢেউয়ের মতই নাড়ি টিপটিপ করে
মনে হয় দুই
খন্ড ভাবনার সমুদ্র
এরপর কি হলো?
না, এর আগে
কি হয়েছিলো?
অবশ্য আগে-পরে
বলে কিছু নেই
যাত্রা সবসময়ই
বর্তমানের
নৌকা, মৃত ঠাকুরমা
আর পিঙ্কি
সবকিছুই বর্তমান
মুহূর্তের অস্তিত্বশীল
সবকিছুই স্থিরীকৃত
স্থির আবার
চলমান
ঘুমের বিপুল
ননীর মধ্যে সবকিছু দোলে…
মুখে চোখ নেই,
চোখের তারা নেই
আছে কেবল সর্বব্যাপী
ঘুম
দুই চোখের পাতা
জুড়ে ঘুমের প্রপাত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন