প্রতিবেশী
সাহিত্য
মেহিকো-মার্কিন উত্তরঔপনিবেশিক কবি নাটালি সেন্টার্স-জাপিকো-র কবিতা
(অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী)
একজনের বেশি পুরুষ আমার স্কার্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে
আমি জিগ্যেস করা বন্ধ করলুম:
কেন?
আমি একজন লোককে সিটি মারার
অনুমতি দিয়েছি
টেবিলে বসে আরও বিয়ার অর্ডার করার
জন্য,
আর তার কাছে এনে দিয়েছি
এক গাল হেসে। আমি থাপ্পড় মেরেছি
একজন লোককে আর ছুটেছি
লোকটা ততক্ষণ
হেসেছে--
বেশ সাহসী খুকি।
আমার একবার গর্ভপাত হয়েছিল। আমি একটা লোককে
আমায় চুমু খাবার অনুমতি দিয়েছিলুম
গর্ভপাতের পর
লোকটার
গরম চোখের জলকে সান্ত্বনা দিয়েছি।
আমি এসব কাণ্ড করেছি,
যখন অন্য
যুবতীরা
চাকরি
করেছে
জুড়েছে
নানা অংশ
ডেল কমপিউটার বোর্ডে,
যখন
কিনা অন্য যুবতীরা
বেশ্যালয়ে কাজ করেছে,
আর চোটজখম
খাওয়া বাহুতে
ফাউন্ডেশান ক্রিম মেখেছে
যখন কিনা
অন্য মেয়েরা
বাসে চেপে একা বাসায় ফিরেছে
রাতের
বেলায়, প্রতি রাতে,
যখন কিনা অন্য যুবতীদের পাওয়া যাবে
পোশাক পরে আছে
যা
তাদের নিজেদের নয়, কিংবা
কোনো পোশাকই পরে নেই। আমি এসব কিছুই করেছি
যখন কিনা অন্য যুবতীদের পাওয়া যাবে
দুশ্চরিত্রদের
সঙ্গে
রক্ত দিয়ে লেখা
তাদের ভাঙা তলপেটে।
আমার মা আমার
চোখ ঢেকে দিতেন
যখন
মেয়েদের পাশ দিয়ে যেতুম
কোণে দাঁড়িয়ে,
আর বলত:
দ্যাখো তোমাদের ভাগ্য কতো ভালো
কোনো কাজকর্ম নেই
কিই বা করে ওরা ? আমিও কাজ করেছি
কারখানায়
বলা হতো কর্মী
হ্যাঁ, আমি বলতুম, খুব ভালো ভাগ্য।
তুমি এক অন্ধকার দেহ
জলের যাতে তলদেশের পাথর দেখা যাচ্ছে না
তোমার ওপর থেকে। তুমি কেবল জলের একমাত্র অন্ধকার দেহ
মরুভূমিতে যেখানে চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তাক্ত ক্যাকটাস।
তোমার কন্ঠের হাড়ের কাছে তুমি বইছ একটা সংকীর্ণ গিরিখাত
একটা চুলে বাঁধা। তুমি দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াও নিজের থেকে জল
খেয়ে,
কেননা তুমি এই জমির একমাত্র অন্ধকার দেহ
জলের। দিগন্তরেখায় তুমি এক নারীকে খুঁজে পাও
বিছানায়, তার বুক লালায় ভিজে, তুমি লাথিয়ে তাকে বিছানা থেকে
ফেলে দাও, আর চাদরের তলায় তার জায়গা নাও। একজন লোক
তোমার পাশে শুয়ে আছে। সে তোমার অন্ধকার দেহ গিলে ফ্যালে
জলের আর তোমাকে নারীর দেহ দ্যায়, যে দেহের সঙ্গে তুমি
কখনও পরিচিত হওনি। নারী হিসাবে পুরুষ তোমাকে খোসপাঁচড়া দ্যায়
আর সেই খোস দিয়ে তুমি শ্বাস নাও, আর খোস সত্ত্বেও তুমি এক মৃত
শিশুর জন্ম দাও জলের অভাবে। তুমি শিশুটাকে লাথিয়ে
বিছানা থেকে ফেলে দাও, কিন্তু শিশুটি সেই নারীর কোলে ফিরে আসে
যার বিছানা তুমি চুরি করেছিলে। তুমি কাঁদো যাতে তোমাকে আবার
জলের অন্ধকার দেহ দেয়া হয়। লোকটা তোমাকে লাথিয়ে বিছানা থেকে
ফেলে দ্যায়, তোমাকে জঞ্জালে ঢেকে দ্যায়, আর তোমাকে মরুভূমিতে
পালটে দ্যায়। তুমি একটা বিছানার জন্যে কাঁদো যাতে লোকটা তোমাকে
আর কখনও শুতে দেবে না। তুমি তোমার দেহের পাথরের বিছানার জন্যে
কাঁদো যা জলের অভাবে মরুভূমি হয়ে গেছে।
আমার মুখের ভেতরে একটা পাখি আছে
আমি ওটা তোমার পেটে খুঁজে পেলুম, আর ধরলুম
দুই আঙুল দিয়ে। পাখিটাকে রাখলুম
আমার কানের পেছনে ছোটো দাঁড়ে।
পালকগুলো ছিঁড়ে নিলুম, তাদের পুরলুম
আমার ঠোঁটের তলায় তামাকের মতন,
আর কালো সুতোগুলো থুতুর সঙ্গে ফেললুম
একটা পলিথিন কাপে। এক রাতে
পাখিটা মরে গেল। পেষা ঠোঁট, চেরা
হাড় -- আমরাই করেছিলুম। তোমার হৃদয়
ঈর্ষায় ভরা, আমার দেহ বীজ আর
বাকলের স্বাদে উত্যক্ত
আমরা পাখিটাকে চাইনি।
রাতের খাবারের সময়ে আমরা করলুম,
তুমি আমার স্মৃতির ভেতরে ঢুকলে
একটা আঙুল আমার কানে রাখলে।
আমি আমার হাত তোমার মুখে
রাখলুম পাখিটা ধরার জন্য
আর আমরা পাখিটাকে দুজনে
থেঁতলে দিলুম। ব্যাপারটা সহজ,
আমরা করে ফেললুম আর বেশ
আরামে কথাবার্তা বললুম।
স্মৃতি ব্যবহার করে আমরা পাখিটাকে
মেরে ফেললুম যা কখনও আমাদের ছিল না।
এখন আমরা হয়ে গেছি
পাখির কসাই, তুমি বললে
আর পাখিটার নিস্তেজ দেহ
আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিলুম। আমি
তোমার মুখটা দুহাতে নিতে চাইলুম,
কিন্তু দু’হাতই হারিয়ে ফেলেছি।
প্রতিটি আঙুল তোমার চোখের মণিতে
হারিয়ে গেল, আমাদের ছোটো ছোটো
কালো বিতর্কের মূল বিষয়।
নব্যপৌরুষ
তুমি এখনও বেঁচে আছো কিনা দেখার জন্যে, একটা পাত্রে চিনির রস গরম করো যতক্ষণ
না তা তোমার বাহুতে গ্রহাণুর
থুতু ছিটোয়। তোমার পোড়া চামড়ার খেয়াল রেখো। তোমার দাগগুলো দুই বছরের বেশি থাকা উচিত
নয়। যন্ত্রণাকে খেলাবার জন্য একটা পরিষ্কার স্লেট চাই। একটা লাল রঙের পোশাক পরো আর
লোকজন তাকে সারারাত টানাটানি করুক। তোমার আকাঙ্ক্ষা : তোমার চুল ওপড়ানো হোক, রক্ত বেরোক, কুকুরের মতন গরমে নিজের
ক্ষত চাটো। বলো যে রেগে যাবার জন্য তুমি দুঃখিত।
বলো যে তুমি দুঃখিত কেননা তুমি রেগে গেছো। ক্রোধ হল পুরুষ মানুষের আবেগ। চিনি, পাতিলেবু
আর নুন মিশিয়ে তুমি ক্রোধকে দুঃখে পালটে ফেলতে পারো যেমন ভালো মহিলারা করেন। ফোঁপানি
বন্ধ করো, ব্যাপারটা কুৎসিত। তার বদলে, কুমারী মেয়েদের কাচ-অশ্রুর নকল করো যারা পুরুষদের
দয়া চায় যে পুরুষরা তাদের দেহকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তোমার পুরুষকে বলো : তুমি পৌরুষের জীবন্ত মূর্তি
। তাকে বলো এই কথা এচটিএমএল-এ তোমায় জানাতে। সিনেমায় যেমন হয়, তাপটা কেটে যাক, যতক্ষণ
না ও চিৎকার করে বলছে যে তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। পুরুষটা যখন হাসি
থামাতে পারছে না, তুমিও হাসো -- বিদেশি হয়ে যাও যে ভাষা বোঝে না : আমি দুঃখিত দুঃখিত!
লোলা ফ্লোরেস শোনো আর ইনটারনেটে তোমার চোখের মাঝে যন্ত্রণা সার্চ করো। মন খারাপ কোরো
না যদি তুমি একটা ঘরে বসে ফোঁপাও আর লোকটা পাশের ঘরে বসে ‘অসেতুসম্ভব’ বিষয়ে পড়াশোনা
করে। লোলা ফ্লোরেসের মতন, তোমার চুলও খুব সুন্দর; লোলার কথা বাদ দাও, ভাড়া মেটাবার জন্য চুল বিক্রি
করে দাও। হাসতে থাকো যখন লোকটা বলবে : তুমি একটি অকৃতজ্ঞ দুশ্চরিত্রা তবু তুমি আমার।
লোকটাকে বুঝিও যে নিজের বাবা হবার চেষ্টা কোরো না। যখন লোকটা বলবে যে তোমার জন্যেই
এসব ঘটছে, জবাব দিও না। লোকটার আঙুল নিজের মুখে পুরে নিও আর শ্বাস বন্ধ করে রেখো যখন
লোকটা জিগ্যেস করবে : কে তোমায় নিজেকে
ঘৃণা করতে শিখিয়েছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন