প্রতিবেশী সাহিত্য
মালিনী গৌতম’এর কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাশ)
লেখক
পরিচিতিঃ জন্মস্থান মধ্যপ্রদেশ। ইংরেজির
অধ্যাপক। তিনি কবিতা, উপন্যাস, গজল এবং গল্প লেখেন, পাশাপাশি গুজরাটি থেকে
হিন্দিতেও অনুবাদ করেন। তিনি এ পর্যন্ত চারটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন। গুজরাটি
দলিত কবিতা এবং সমসাময়িক গুজরাটি গল্পের অনুবাদ দুটি বই প্রকাশের অপেক্ষায়
রয়েছে। তিনি ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে গুজরাট সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়া
মধ্যপ্রদেশের সম্মানিত বগীশ্বরী পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বনসাই
মেয়েদের ভাগ্যে জোটে না
এক মুঠো মাটি
সার, জল ও বাতাস...
ওরা জন্মালেই পুঁতে দেয়া হয়
মিহি-মোটা, ছোট-বড়,
সাদা-কালো, মৃসণ-তীক্ষ্ন পাথরের তলায়,
নিজেদের সব প্রচেষ্টার পরেও
গভীরে যেতে পারে না ওদের শিকড়-বাকড়
আর বেশ মোটাসোটা হয়েও গজায় না
ওদের শাখা-প্রশাখা,
উপবাস-উৎসব, রীতি-রেওয়াজ
আর সংস্কারের কাঁচি দিয়ে
কাঁটাছাঁটা হয়
শেষমেষ তার পরিণত হয়ে যায়
একটা সুন্দর নিখুঁত বনসাই-এ
আর কাটিয়ে দেয় গোটা জীবন
একমুঠো নিজের ভাগের
মাটির খোঁজে।
একটি অপরাধের শাস্তি
ক্ষেতে তৈরি ফসলের মত
মেয়েদের কাটা হয় ও
ওদের খাটতেও হয়
মেশিনের যন্ত্রপাতির মত
কাঁচা সুতোর মত
কাটাও হয় চরকায়
কাঁচা হাঁড়ির মত
চাপানো হয় আগুনের আঁচে
শাখা থেকে ছড়িয়ে পড়ে
ও চাপা পড়ে দাফন হয়ে থাকে মাটির তলে
ওরা মালগাড়ির মত ছুটতে থাকে
এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের মাঝে
হাত মোছার ন্যাপকিনের মত
ফেলে দেয়া হয় ডাস্টবিনে
আর এইভাবেই মেয়েদের
পেতে হয় শাস্তি
মেয়ে হয়ে জন্মাবার অঘোষিত অপরাধে।
কিছুই ভোলানো গেলো না
কারো স্মৃতি
কিছুদিনের সঙ্গ
একমনে থাকা ও
স্থির চোখে চোখ
বাতাসে উড়ন্ত চুম্বন
যুগল মনের ছোঁয়া
কিছুই ভোলানো গেলো না
কিছু টক মিষ্টি স্বাদ
কিছু নিমতিতা কথা
কিছু মনে গাঁথা রাগ
অল্প সত্যবাদী যাযাবর মন
অল্প ঝঞ্ঝাট
অল্প স্পষ্টীকরণ
অল্প অসহায় বোধ
অল্প প্রাণহীনতা
অল্প মান অপমান
কিছু বিশ্বাস অবিশ্বাস
সব আঁটসাঁট ভাবে থাকে
জর্জরিত মন কিন্ত
এক কোণায় পড়ে থাকে।
মন ভর্তি বোঝার চাপে দেহ
যখন টানতে পারে না নিজেকে
দেহপাতা ঝরার মৌসুমে
নিজেকে হালকা করে
সে হয়ে উঠতে চায় শিমুল।
জলের কথা
জল শুকিয়ে যাচ্ছে
মাটির খুঁড়িতে
এক চুমুক জলের জন্য
সুদূরে উড়ে যায় পাখি।
সুন্দর ও ভব্য বাড়ির বাইরে
দেখতে পাওয়া যায় না
জলে ভরা ভাঙাঘড়া, গামলা
কুকুর বেড়াল গরু ছাগলদের
বেশ ঘুরতে হয় দূরে দূরে
এক চুমুক জলের তাগিদে।
গ্রামের শেষ সীমানায়ও
রোদ পোড়া গনগনে জলন্ত পথে
এক আঁজলা তেষ্টা নিয়ে
শীতল জলে ভরাঘড়া ও এক টুকরো গুড়
খুঁজে মরে পথিক।
পুকুর, জলাশয়, কুঁয়া, সিঁড়ি বাঁধানো কুঁয়া
একটু রাগী রাগী ভাব নিয়ে
একটু সংকুচিত হয়ে
নেমে এলো গভীরে আরো গভীরে
মেয়ে মানুষেরা মাইলের পর মাইল হাঁটে
কলসি নিয়ে জলের সন্ধানে।
মন্দির মসজিদে
এখন জল খাওয়াবার আগে
জিজ্ঞাসা করা হয় জাত।
এখন যখন জলের কথা হচ্ছে
আমি ভাবি
জল প্রত্যেক জায়গায় ঘাটতি,
যেমন চোখের জল
যেন কোনো শতাব্দীর কথা
এখন কেউ আর খোঁজ করে না
এক আঁজলা জল ও
ডুবে মরার জন্য।
প্রতিটি কবিতার খুব সুন্দর অনুবাদ করেছেন মিতা দাশ। মালিনী গৌতম খুব সুন্দর কবিতা লেখেন। আমি ওনার হিন্দি কবিতা ও পড়েছি। 🌷🌷
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ 💐💐💐💐💐
মুছুন