কবিতার কালিমাটি ১০৭ |
বিষাদমঙ্গল
(১)
ধীরে ধীরে নেমে
আসছে কালো যবনিকা
সবকিছু মলিন
হওয়া বিকেলে মেয়েটি
ঘরের দাওয়ায়
খুঁটিতে হেলান দিয়ে ভাবে
জীবনের উত্থান
ও পতনের কথা-
ঝরাপাতা ছুঁয়ে
যে সময় চলে গেছে দূরে
যার টুকরো চিহ্ন
বুকে উথাল পাথাল করে
তাই দিয়ে পথ
আঁকা লক্ষ্যহীন একাকীত্ব
স্হবির মুহূর্তে
বিবাগী করে তোলে মন,
প্রিয় মানুষের
জন্য খুব খুব মন খারাপ হয়
আকুল আকাশে
ছড়িয়ে যায় অক্ষয় বেদনা।
(২)
একদা যে পথে
ছেড়ে গেছিল সে বিষাদে
সেই থেকে শুরু
শুধু খুঁজে ফেরা-
জীবনের মধ্য
গগনে রবির আলোয় সুর
দেখা হবে তবু
বেঁকে গেছে রাস্তার সীমা
অজন্তা ইলোরা
আর বিমূর্ত ধারণা অর্জন,
কথা বলা, বাঁশিতে
মিলন গীত তবু স্হিরপ্রজ্ঞা
জনমানবশূন্য
মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা উটের
সারিতে নিস্তব্ধতা,
বিরহের সুর আদিবাসী যন্ত্রে
তবে কী বেহালার
তার জানে দুঃখকাহিনি।
(৩)
অসহায় দিনলিপিতে
লেখা রোগের প্রাদুর্ভাব
শ্বাস প্রশ্বাসের
মধ্যে লুকিয়ে ঢুকে যাওয়া বিষ
ক্রমাগত অগ্রসরমান
কখন যেন ফুসফুস ছিঁড়ে
বেড়িয়ে আসতে
চাওয়ার অভিপ্রায়-
করোনা মানব
সমাজকে পঙ্গু করে রুদ্ধ দ্বার করছে
বোবা গাছেদের
মত ক্রমশ একা একা হয়ে যাওয়া
যে ছিল নিকটজন,
মনের কাছের তারও
মৃত্যুর খবর
সচকিত করে নিরালা দুপুরে
ঘরের কোণে সময়
যাপনের ফাঁকে,
ব্যথা গুমরে
ওঠে পাঁজরে, রুদ্ধ কান্না দলা পাকিয়ে
উঠে আসতে থাকে
উঠে উঠে আসে...
(৪)
এই ক্ষয়িষ্ণু
সময়ের ইতিহাস রচিত হয় নিভৃতে
প্রকৃতির রোষ
আর জীবাণুর সংক্রমণ
তাড়িয়ে নিয়ে
বেড়াচ্ছে মানুষকে, কখনো দূরে
ফুটে ওঠে আত্মপ্রতিকৃতি
যা সূচিত করে-
বিষাদের বিবিক্ত
অভিব্যক্তি, মৃত্যুর হাতছানি
উপেক্ষা করে
প্রবলভাবে বাঁচতে চাওয়া লোক
এটা তো কোন
রঙ্গমঞ্চ নয় যেখানে মৃতের অভিনয়
শেষে আবারও
নতুন জীবনের চিত্রনাট্য লেখা হবে।
(৫)
দিকে দিকে ওই
শোনা যায় হাহাকারের ধ্বনি
আঃ জীবন আঁকড়ে
ধরো জোর হাতে-
বুকভরা অক্সিজেন
চাই, ওই শোনো কাছে কিংবা
দূরে কারা যেন
কান্নার সুরে ভিক্ষা চাইছে বিশুদ্ধ
অক্সিজেন, পূতিগন্ধময়
এই মৃতদেহ দাহের বাতাস।
যে নতুন করে
ডাক পাঠিয়েছে বারবার তাকেও
নিয়ে গেছে বিভীষিকাময়
মরণ-
মুক্তির বিষণ্ণতা
নদীর পাড়ে শালুক গাঁয়ে
যে তান ধরেছে
তা বিষাদমঙ্গল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন