কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৭ |
মালা
চোখের সামনে চলন্ত গাড়ি থেকে প্যাকেটটা রাস্তায় পড়ল। মোহন হাঁক-ডাক করেও সেটাকে থামাতে পারল না, সাঁ করে চলে গেল। তার মস্তিস্কে ঠোঁটে খুশীর বুদবুদ। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিষ এক্কেবারে নিজের। পেন, ঘড়ি, টাকার নোট, কয়েন মাঝে মাঝেই পায়। একবার বাজার ফেরত এক দিদিমণির হাত গলে পিস করা মুরগীর থলে সটান রাস্তায়। তার রিক্সার পিছনে ছুটেও ধরতে পারেনি। চোলাই আর মুরগী কষা, উফফ সে কি রাত ছিল! তখনো শম্পাকে বিয়ে করেনি মোহন। একশ দিনের খাটিয়ে অনন্ত ফোটো তোলা মোবাইল হাতে যে ফুটুনি মারে সেটাও তো কুড়িয়ে পাওয়া।
শিকারীর ক্ষিপ্রতায় এগোল মোহন। নুয়ে পড়ার আগেই দেখে নিল স্বচ্ছ প্লাস্টিকে গোলপাকানো রজনীগন্ধার মালা। এবার কী করবে সে! ফুল দোকানীকে বেচতে গেলে ভাববে মরার গা থেকে খুলে পয়সা কামানোর ধান্ধা করছে। ওর মতো গতর খাটানো মানুষরা বিয়েতেও ফুল কেনে না। শখ করে কেউ কেউ সরু লিকলিকে একছড়া মালা কেনে বটে। মোহন নিশ্চিত, গোলাপ-জড়ি লাগানো এত চড়া দামের মালা কিনে কেউ বাজে খরচ করবে না। বাড়ি নিয়ে যাবে? মাস সাতেক হল তার বিয়ে হয়েছে। বইতে দেখেছে শাহরুখ-অজয়রা গাদা গাদা ফুল কেনে। পিরিতের মানুষকে দেয়। মোহনও আজ বিনি খরচায় হিরো হবে? একেই লকডাউনের বাজারে রোজগারপাতি নেই। বউটা সারাদিন খিঁচিয়ে থাকে। সোহাগ করে এই মালা ধরালে ঝাঁটা, লাঠি ফেলে খুনোখুনি ও হয়ে যেতে পারে।
মাঝ রাস্তায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে মোহন। ভাবনারা ঘোঁট পাকাচ্ছে। পড়ে থাকা কোনো কিছু টুক করে তুলে নিতে না পারার মতো এমন মোচড় দেওয়া কষ্ট আগে পায়নি সে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন