শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

তৈমুর খান

 

কবিতার কালিমাটি ১০৬


এই কুয়াশায়

 

ভোরবেলায় কুয়াশা এল

                       তোমার মতন কুয়াশারা

দ্বিধাদ্বন্দ্বে রাস্তা হারাচ্ছি আমি

রাস্তায় সীমাহীন ষাঁড়

যদিও নরম শিং, ধরা যায় না

                                মাথা নাড়ে ভয়

 

শীতের বারান্দায় ঘুমভাঙা সকাল

অস্পষ্ট চিঠি নিয়ে অপেক্ষায় আছে

আমারই ঠিকানা লেখা তাতে

যদিও ঠিকানা নেই আমার

                     হৃদয় উদ্বাস্তু বহুদিন

 

 একটি শরীর শুধু, শরীরে অবরুদ্ধ কাম

                                   সব ব্যর্থ কৌশলী

কুয়াশার পাঠশালায় স্বপ্নের বালিকারা ওড়ে

তাদের ডানার কোনো ধারণা নেই

শুধু ইঙ্গিতে ভরা জাগরণ

কোথাও নিলাম হচ্ছে সেসব সুদূরিকা

তাদের ঘ্রাণে আড়ষ্ট হই

মাটির জাতক বলে

আমিও বিষণ্ণ আর ক্লান্ত ভঙ্গুর...

 

আমাদের আত্মহত্যার ভেতর

 

কলঙ্কিত জ্যোৎস্নায় আমরা বেড়ে উঠলাম

আমাদের জ্যোৎস্নাশরীরে বাজনা বাজল

আমরা মৈথুনের দেশে খুঁজছিলাম নিগূঢ় সংগম

 

কত ঝরনার পাশে রাতজাগা পড়ে ছিল

পরিস্থিতি তৈরি করছিল সময়ের পাঠশালা

আমরা দীক্ষা নিচ্ছিলাম

সারারাত যাওয়া-আসা করছিল ইহকাল পরকাল

 

কয়েকটি চোখের ইশারা উড়ছিল বাতাসে

প্রৌঢ় আলোকে ছুটোছুটি করছিল বাল্যকাল

আমাদের আত্মহত্যার ভেতর আমরা বেঁচে উঠছিলাম

 

চরিত্র আসলে কিছু নয়

 

এখন আলোর ঘুম তুলে রাখি

আর পেছন ফিরে

মৃত্তিকার সন্নিধি ছড়িয়ে পড়তে দেখি

পার্থিব চেতনার গান গাইতে থাকে পাখি

উত্তেজনার দম ফুরিয়ে এলে

আবার নতুন উত্তেজনার খোঁজে

মাঠ পেরিয়ে যাই

 

বিরামহীন মানুষ শুধু

সেও পেয়েছে মানব হবার দায়

 

কলঙ্কিত খোঁপা খুলে গেলে

নষ্ট রাত, ভ্রষ্ট পথে

চরিত্রগুলি হাঁটতে থাকে

 

চরিত্র আসলে কিছু নয়

পারিবারিক কুয়োর জলে

বালতি নামায়, বালতি তোলে

উত্তরাধিকার...

 

মানুষেরা ভেসে যাচ্ছে একে একে

 

ওরা ডেকেছিল, আমি যাইনি

সারাদিন কান্নার সমুদ্রে ঢেউ গুনছি

মানুষেরা ভেসে যাচ্ছে একে একে

আমিও ভেসে যাব

 

সন্ধ্যার পাখি উড়ে যাচ্ছে দূরে

ম্লান আলোয় আকাশ কোনও অপার্থিব নির্নিমেষ

নিজের কথাও আর শুনতে পাই না নিজে

বৃক্ষের অন্তরালে ঘুমায় স্মৃতিফুল

 

আমার অন্তর বাহিরে তীব্র স্রোত

অন্ধ এবং ভাসমান চোখ

দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেতে চায়

কথারা তবুও কথা, অনেক অনেক পৃথিবী, অনন্ত সময়

 

দেশ

 

আমাকে দেখাও দেশ

দেশের ভেতর মানব।

মানবের বাইরে আর কী থাকে?

কী থাকে গৌরব?

 

মুঠো মুঠো মাটির পিপাসা

যৌবনের রক্তে ডুবে যায়

নিয়তি তবুও কেন ঈশ্বর?

কেন অসহিষ্ণু সব ভাষা?

 

ভাষা তবুও শেকড়

প্রাণের নিরন্তর উচ্চারণ থেকে

তার পুষ্প পাতা কল্লোলিত হতে জানে

অনেক স্বপ্নের জ্যোতিষ্ক কণা তাতে

 

দেশ। অভিমুখে অনন্ত বাসনা

তীব্র উচ্ছ্বাসের ঘোর নামে

পূর্বপুরুষের আত্মাগুলি

জ্বলে ওঠে, প্রাণ পায় নীরব মহিমায়।

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন