ধারাবাহিক উপন্যাস
দূরত্ব
(তিন)
আমাদের
এই শহর এক শিল্পনগরী। যা তার এই শিল্পনগরী তকমা থেকে সরে আসতে পারেনি এখনও। কবে যে
সে বহুরূপী হয়ে উঠে আসবে আমাদের কাছে কে জানে? আমরা এক থেকে অনেকের দিকে হাঁটতে পারবো।
কারখানা থেকে কোম্পানি কোয়াটারের মাঝে যে খানিকটা রাস্তা সেখানেই দেখতে পাবো এমন অনেক
মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কোলে বাচ্চা, হাতে সেই যা দিয়ে শুরু করেছিলাম লেখার প্রয়োজনীয়তা।
বাস কন্ডাক্টার ছোকরার সেই বিখ্যাত কথা ‘আস্তে লেডিস কোলে বাচ্চা ‘আমাদের মনে শুধু
কিছুটা হিউমার নয়, এক অন্য বোধ তৈরি করবে।
এরা এখানে এলো কোথা থেকে, কোনো উদ্বাস্তু, না কি কোনো অভিবাসন? সমাজের পরিত্যক্ত না
কি নতুন সমাজ গড়ার জন্য তাদের পাঠানো হয়েছে
অন্য কোনো জনঅরণ্য থেকে? পুরুষগুলি শ্রম দেয়, মেয়েগুলি দেয় কিছুটা মুক্তির অনুভূতি। মেয়েগুলি তাদের স্বল্প
পরিসর ঘরগুলিকে সাজিয়ে রাখে তাদের পুরুষগুলির ঘরে আসার ঠিক আগে। অন্তত দেখে যেন তাদের
আপন মনে হয়। অবশ্য আপন বলতে কিছুই নেই বা ছিল না কোনোকালে। আপন তো শুধু মাটি। যা মানুষকে
কাছে টেনে রাখে। আবার বুকে ছুরির কারণও সেই হয়। তা সেই মাটি ছেড়ে যখন চলে আসতে হয়েছে,
তখন আর নিজস্ব বলে কী থাকে! থাকে শুধু বেতনের
সামান্য কয়েকটি পয়সা। তা দিয়ে কিছুই কেনা যায় না, বরং বন্ধক রাখা যায় সুখ শান্তি ভালোবাসা।
আর স্বপ্ন, কী করে বলি আমি ‘কোথায় পাবো তারে’। আছে, স্বপ্ন
যে নেই তা কিন্তু নয়। পুরুষগুলির চোখে আজীবন
স্বপ্ন আছে, একটি পার্মানেন্ট ঠিকানা বানাতে হবে কোথাও। তাদের মধ্যে কেউ দেশে টাকা
পাঠায়, কেউ দেশের বাড়িতে জমি কেনে। কিন্তু আজীবনের এই কেনা বেচার পরেও দেখে ঝোলা খালি
রয়ে গেছে। কিছুই ভরা হয়ে উঠলো না। পেট খালি মন ভার। কেননা এদের আর সেই দেশের বাড়ি নেই।
সেখানে তারা দেশছাড়া, এখানে তারা দেশহীন। আর মাঝখানে তাদের নারী, তারা সাধ্যমত চিৎ
হয়েছিল কিন্তু বিশেষ কিছু স্বপ্ন দেখেনি। এটাই হল চাবিকাঠি। টিকে থাকার জন্য, সারভাইভ
করার জন্য এমনই কিছু বিকল্প চাই যা প্রথম চাহিদা বিকল হলে, সামলে নেওয়ার জন্য সময় দেবে।
আমিও এমনই এক বিকল্প চাহিদা থেকেই এসে দাঁড়িয়েছি। যেখানে আমার বাবা আমার অন্য ভাই বোনেদের
সাথে আমাকে তেমনই এক পথ দেখিয়েছিল। তবে একে বিকল্প স্বপ্ন বলতে কিন্তু আমি একদমই রাজি
নই। কেননা স্বপ্নের কোনো বিকল্প হয় না। স্বপ্ন যা স্বপ্ন তাই। যাকে স্বপ্নে দেখি শুধু
তাকেই দেখি আমি স্বপ্নে। তাকে বাদ দিয়েও অন্য কাউকে দেখি মানে, আমি কাউকেই সঠিক চাইতে
পারিনি। না নিজেকে ততটা ভালবাসতে পেরেছি না দিতে পেরেছি ভালোবাসা। না কস্তূরী আমার
জীবনে ততখানি সুগন্ধ ছড়াতে পেরেছে। না আমি তার কাছ থেকে অন্য হরিণীর দিকে ছুটে যেতে
পেরেছি। হ্যাঁ এক অভ্যাসবসত থেকে গেছি তার কাছে। সেও আমার কাছে তেমনই কিছু পেয়েছে কি
না! অবশ্য চায়নি আমি লক্ষ করে দেখেছি, সে কিছু
চায় কিনা আমার কাছে। না সে চায়নি কোনোদিন। কস্তূরী আমার কাছে কিছুই চায়নি। বাবা টিচার,
মা সরকারি হসপিটালের মেট্রন নার্স ছিলেন। তাদের মেয়েকে এতটাই স্বাবলম্বী করেছিলেন যে
তার কোনো চাহিদাই আর অবশিষ্ট থাকেনি। তবে সে আমার সাথে থাকলো কেন? এও এক প্রশ্ন।
যেভাবে
আমারও ভিতরে এক প্রশ্ন গুমরে গুমরে উঠছে, কেন সে মেয়ে আমাকে গ্রাম দেখে ফিরে আসার কথা
বলেছে। কেন, কী আছে সে গ্রামে? সে আর পাঁচটা
সাধারণ গ্রামের মতো কোনো গ্রাম নয়। ঘরের পিছনে ঘর তার পিছনে আবার ঘর। একে কি
পাড়া বলা যাবে? এর ঘর হয়ে, তার ঘরের উঠোন দিয়ে হেঁটে গেলে ওখানের মাঠে যাওয়া যাবে।
তাহলে ও মাঠে কী আছে এমন! ধান ঝাড়ছে দুজন পুরুষ চারজন নারী। ধান ঝাড়াইয়ের মেশিন রয়েছে
তাদের সামনে। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি আমি তাদের কাজের ছন্দ, এক লয়ে এক তালে, একের পরে
একজন যেন সুতোয় বাঁধা জপের মালা। এগিয়ে যাব? তারা যদি জানতে চায় কে আমি কোথা থেকে এসেছি?
কী উত্তর দেবো? সামান্য সংকোচ সামান্য ভয় ভয়
ভাব। তাও যেন যন্ত্রচালিত আমি এগিয়ে গেলাম কিছুটা। অবশ্য একেবারে সামনেও নয়, যতটা তারা
আমাকে দেখে চিনতে পারবে। দেখি তাদের মুখে হাসির ভাব, সকলেই একবার একবার তাদের কাজের
মাঝে যখন হাত খালি হচ্ছে ঘুরে তাকাচ্ছে আমার দিকে। চোখে চোখে যেন প্রশ্ন, কখন এলে বাড়িতে?
তাহলে আমাকে এরাও চিনতে ভুল করছে। হতে পারে দূর থেকে দেখছে হয়তো তাই। কিছুটা আরও এগিয়ে গেলাম প্রায় কাছাকাছি।
একজন জানতে চাইল, ওখানে কি খাওয়া দাওয়া একেবারে ছেড়ে দিয়েছিলে নাকি? নাকি বউয়ের চিন্তায়
চিন্তায় একেবারে কাহিল? তাদের মুখে আঞ্চলিক কথ্যভাষা, আমি কিছুটা হোঁচট খেলাম। কেননা
উত্তর দিতে গেলে তারা বুঝতে পেরে যাবে। আমি তাদের পাশ কাটিয়ে খেত পার হয়ে যে রাস্তা
পুকুরের পাশ দিয়ে গিয়েছে তার দিকে পা বাড়ালাম।
আমারও
চোখে সেই একই প্রশ্ন যা সেই নিশ্চুপ মেয়েটির চোখে দেখেছি। যা আমি এতকাল কারখানা থেকে
বাড়ি আসার পথে দেখেছি বহুবার। প্রতিটি মেয়েই যেন আমার দিকে তার চিরচেনা মানুষ দেখার
ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তা অবশ্য একেবারে অন্তরলীন। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে
যেন অবজ্ঞার দৃষ্টি। কিন্তু বাস্তবে তা একেবারে বিপরীত। ইচ্ছে করেছে একবার দাঁড়াই তাদের
ঘরগুলির সামনে। তাদের কোল থেকে বাচ্চা চেয়ে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তাদের একটানা সারি দিয়ে লম্বা ঘরগুলির
সামনে যেখানে সেই মেয়েগুলি তাদের ঘরের বুড়ি থুড়িদের সাথে বসে আছে। হিন্দুস্থানি কেউ,
কেউ বা প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলা থেকে আসা প্রায় সর্বহারা মানুষের দল। এই হল প্রায় পঞ্চাশ
শতাংশ মানুষ। বাকি পঞ্চাশ হল ওপার বাংলা থেকে উঠে আসা শেকড়হীন মানুষ। আসলে যার খালি
হাত পা ছাড়া আর কিছু পুঁজি ছিল না সেই এখানে বসে গিয়েছিল। বাস্তবেও হয় কি, জগতের সব
থেকে অস্থির কোনো কিছু যদি থাকে, সে হল দেশ বা রাজ্যের সীমারেখা। যা নিরন্তর পরিবর্তনশীল।
এখন সমস্যায় পড়ে তারা, যারা এই সীমারেখায় বসবাস করে।
আমিও
ঠিক এমুহূর্তে যেন এক সীমারেখায় এসে উপস্থিত হয়েছি। ফিরে যাব, কিন্তু কোথায়? মেয়েটি
আমাকে গ্রাম ঘুরে দেখার আদেশ দিয়েছে। হ্যাঁ আদেশই বলবো কেননা, তাকে অমান্য করে কি আমি
চলে যেতে পারছি? আমি আবার সেই পুকুরের পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করেছি। এ পাড়া থেকে অন্য
পাড়া হয়ে যা স্কুল বাড়ির দিকে চলে গেছে। তাহলে এ পুকুরের রাস্তা মোটামুটি এক ব্যস্ত
রাস্তা ধরা যেতে পেরে। তার উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
(চার)
-কস্তূরী
তুমি এখনও জেগে আছো কেন। ঘুমোতে যাবে না?
-তোমার
কি কালকে কিছুক্ষণ সময় হবে, মানে বাবার কাছে একবার যেতে ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ভাবছিলাম ভাইকে সাথে করে নিয়ে যাবো।
ও বলেছিল যেদিন আমি যাব, সেদিন যেন তাকের সাথে নিয়ে যাই। নাহলে ওর যেতে খুব সংকোচ হয়।
-ঠিকাছে
কিন্তু আমাকে কী দরকার?
-তুমি
থাকলে বাবার হয়তো ভাল লাগবে আরও, তাই।
-বাবার
তার নিজের ছেলেকে দেখে বেশি ভালো লাগবে, আমার অন্তত যা মনে হয়।
বাস্তবে
এ হল মানুষের এক আত্মগ্লানি, যা তার ভেতরে এক দহন তৈরি করে। মানুষ আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কারণ
বেরোনোর সব রাস্তা যে সে নিজে হাতে বন্ধ করে এসেছে। কীভাবে সে দাঁড়াবে মুখোমুখি? সে
তখন নিজেকে খুন করে। যেটুকু কষ্ট পায় সেটুকুই তার মুক্তির অনুভূতি। সে ভাবে, সে বুকের
উপর এক পাহাড় নিয়ে ভাবতে থাকে। আমি কি সত্যি বেঁচে আছি? আমি কি সত্যি বাবাকে ঐ ওলডেজ
হোমে রেখে এসে ভালো আছি? কিন্তু আমি তো চলে যেতে বলিনি! বাবা তো নিজেই একদিন খবর দিলেন
বাবার পুরনো কোনো সাথী থাকেন ওখানে, তাই। দিদিও
তো কিছু বলেনি, সে তো নিজের কাছে নিয়ে রাখতে পারতো? মেয়ে হওয়ার এত বড় সুযোগ। অথচ অস্বাভাবিক
শান্তি। জামাইদা তুমি কি থাকো ও বাড়িতে?
আমি
হ্যাঁ, আমি থাকি তো। দেখনি, আমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকি ওখানে। মা আমাকে ছোটবেলায় এক
বিষণ্ণ রাজার গল্প বলেছিল, যার কোনো মায়া ছিল না। মায়া তাকে ছুঁতে পারেনি। না রাজ্য,
না ক্ষমতা, না সোনাদানা, না অমরত্ব, না মৃত্যু। কেউ না, এমন কি কোনো নারী, যে তাকে
সামান্য ক্ষণ আনন্দ দিতে পারবে। তার পরবর্তী
প্রজন্মকে আনতে পারবে তার কোলে। অথচ হল তাই যা সবার চাহিদার একেবারে বিপরীতে দাঁড়িয়ে
ছিল। সে রাজা যখন পরিণত বয়সে এসে দাঁড়ালেন, অদ্ভুত রকম একা। সত্যি কোনো মায়া নেই কোথাও।
এমন কি তার অস্তিত্ব বা অনস্তিত্বের সার্থকতা,
সেটুকু বলার পর্যন্ত কেউ নেই।
কস্তূরীকে
অবশ্য গল্পটা বলিনি। গল্প বলার জন্য কিছুটা সময় নষ্ট না হয়ে যায়। সেটুকু বরং বেঁচে
থাক চারিদিকে ছড়ানো নশ্বর বাহবা আর হাত তালির মধ্যে।
দিন
গেল তো সন্ধ্যা এলো, সন্ধ্যা গেলো তো রাত্রি। আমার টেবিলের উপর যেটুকু পৃথিবী রাখা
যায় তার দিকে তাকিয়ে খানিকটা সান্তনা, কিছুটা হলেও যে আমার মধ্যে মায়া রয়েছে। জড়িয়ে
আছে বুকের তন্তুগুলি, নাড়া দেয় ভিতরে ভিত্রে। কস্তূরীর বাবার কথা মনে পড়ে, শান্ত ধীর
মানুষটি। মাস্টারমশাই ছিলেন, আমাকে দেখেছিলেন
সেভাবেই, সবাই যেন তার স্নেহের ছাত্র। তিনি মানুষ করবেন সবাইকেই। কিন্তু ছাত্ররা কি
মানুষ হতে চায়? বা সবাই কি ছাত্র হতেই চায় তার কাছে? পাশে বসিয়েছেন, কথা বলেছেন অনেক।
অনেক কথা শুনে গেছি। অনেক অবান্তর কথা যা জানি
আমি বিশ্বাস করি না, তাও শুনে গেছি। কেননা তিনি বলছেন আর আমার তাঁকে সন্মান করার কথা।
যদিও প্রাচীন বলে শ্রদ্ধার সাথেই সরিয়ে রেখেছি
একপাশে। তাঁর মেয়ে, তাঁর ছেলে, তাঁর স্কুল, তাঁর ছাত্রজগৎ। তাঁর স্ত্রী যিনি বাস্তবিক
অনন্য, সকল নারী থেকে আলাদা। আমি শুনে গেছি তাও নিজেকে সে কথায় ধরে রাখার মতো কোনো
কথাই বলিনি কোনোদিন। তারপর একটু একটু করে দেখতে দেখতে, আমিও নতুন জামাই থেকে সরে এসে
নির্লিপ্ত জামাই হয়ে গেছি। যার কোনো চাহিদা নেই, এটুকুই তার গুণ। কেননা আর বাকি সব
গুণ মেয়ের কাছে ফিকে। ছেলের কাছে তো কোনো তুলনাই করা যাবে না হয়তো। তাই যতটা হয় চুপ
থাকা যায়। কিন্তু চুপ করে কি থাকা যায়, মুখ কথা না বললেও চোখের কথা ঢেকে রাখে কার সাধ্য
এতটা! লজ্জা সত্যি, লজ্জাই বড় ভার। তাও আমি বলেছিলাম, কস্তূরী তোমারও কিছুটা দায়িত্ব থাকে মেয়ে হিসেবে। যেমন আমার দিদিরা
করে মায়ের জন্য, যেমন আমি করেই আসছি, দেখতে
পাচ্ছ।
আমরা
সকলেই আমাদের ভিতরে এক অবচেতন ব্যর্থতাকে পোষণ করি। যা সময়ের সাথে সাথে নিজের শাখা
প্রশাখা ছড়াতে থাকে মনের ভিতরে। মনের পরিবর্তন আসে। বলি বা না বলি তার বিস্তার কিন্তু
থামে না। আবার অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, সেই আবার পাহাড়ের খাদের পাশে দাঁড়াবার সাহস
যোগায়। কী আর হবে, খুব বেশি হয়তো পড়ে যাব এখান থেকে। বেঁচে থেকেই বা কী করে চলেছি। মনের মানুষ, সখের পাশে বসা, একই
লয়ে একই তালে বৈঠায় হাত দেওয়া। আরে পাগল এসব
কিছু প্রাগৈতিহাসিক। অন্তত যে বাড়িতে অতিথি আসলে সে বাড়ির মানুষ অসন্তুষ্ট হয়। সে বাড়ি
এতটাই বাস্তব যে তার কাঁচের মতো মেঝে দেখে নিজের যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। যে বোঝে সে বোঝে।
বাস্তবে সকলেই কিন্তু বোঝে। আমি তাই সোফায় বসে কস্তূরীর বাবার কথা শুনতাম। আর খুব সংকোচে
আমার পা মেঝেতে রাখতাম, কেননা কারখানায় নোংরা
বড়। আর ঘরে ফিরে যাওয়ার পথে কস্তূরীকে না নিয়ে গেলে মা একটু অসন্তুষ্ট হয়। সেই তো একই
রাস্তা, আবার কেন ফিরে যাবি? ফিরে যাওয়া যদি
সম্ভব হত কেউ কি ফিরে যেত? কস্তূরীর বাবাও হয়তো ফিরে যেতে চাইতেন না। কেননা ততদিনে, সেই যে বলেছিলাম না ব্যর্থতাকে জাগিয়ে
রাখা, তেমনই কিছু করে চলেছেন। আমাকে বলেছেন, জানো তো শৈলেশ খুব ভালো ছেলে। একটু গম্ভীর,
সে তার চরিত্রগুণ, তা আর কি বলবো। কিন্তু যখন কথা বলে তখন সে কথার অন্যথা করার সাধ্য
কার বাবার আছে?
-শৈলেশের
নিজের বাবার আছে হয়তো।
-না
না তার বাবার তা নেই। কত ছেলেই তো মানুষ করলাম, কত ছেলেই দেখলাম জীবনে। কিন্তু যে হবার সে তো নিজের থেকে
হবেই। একটা ছেলে ছিল জানো আমার ছাত্র সেই প্রথম দিকের কথা…
আমি
জানি, এবার একটা গল্প শুরু হবে যার একটা নীতি কথা আছে। যে নীতি কথা আবার আমাকেই খুঁজে
বার করতে হবে। তারপর নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে তাকে। তাই আমি শুনে যাচ্ছি, তাঁর
গল্পকথা শুনে যাচ্ছি। তিনিও বলে যাচ্ছেন তাঁর অভিজ্ঞতা। বুঝতে পারছেন, তাঁর ছাত্র যাদের
তিনি মানুষ করতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর ছেলে যে
মানুষকে তিনি ছাত্র বানাবেন বলে বিছিয়ে ছিলেন
জাল। সে নদীর ভাঙন ডেকে আনছে।
আমিও
তাই একটু একটু করে সরে আসছি সে নদীর পার থেকে, কেননা আমিও তো পড়ে যেতে পারি! আর আমি
পড়ে যাই তো আমার মায়ের কী হবে? আমার সেই গ্রামের মেয়েটির কী হবে, যে আমাকে পাঠিয়েছে
তার গ্রাম দেখতে?
(ক্রমশ)
বিন্যাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে আরও গভীরে লেখকের নিটোল গদ্যের মুন্সিয়ানায়। অমোঘ বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। আগামী পর্বের অপেক্ষায়।
উত্তরমুছুন