শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

দেবযানী বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬


বোকাদের ইনিংস

তোমার ঠিকানা দাও। অসম্ভব না থাক। কেন? তা হয় না। তাহলে আমারটা রাখো। দেবস্মিতা হাসল। কৌশলের হাত থেকে চিরকুটটা নিল - তাতে ঠিকানা লেখা জামসেদপুরের। এত দূরে চলে যাবে কৌশল!

দেবস্মিতা চারপাশে তাকাল। একটা ঢ্যাঙা পাজামা পরা টিকটিকি পায়চারি করার ছলে দেখছে ওদেরকে। এটা দেবস্মিতার বন্ধু অঞ্জনার ভাই বুদ্ধদেব। চারিদিকে ষড়যন্ত্র আর হিংসা। পিছনে দীলিপ চক্রবর্তীর বাড়ি। বাঁদর পুষেছে ওরা। বাঁদরটার পেটটা ফোলা। দারোয়ান বলেছিল পেটে নাকি চর্বি জমেছে। আর কিছুদিন আগে একটা চোদ্দ বছরের মেয়ে মারা গিয়েছিল। ফর্সা টেপফ্রক পরা মেয়েটার সুগোল মৃত স্তনের দিকে তাকিয়ে দেবস্মিতা কেঁদে ফেলেছিল।

ঘামে ভেজা কৌশল ওকে বকে যাচ্ছে। আকাশ বাতাস ফাটিয়ে কেউ চেঁচাচ্ছে চিঠি লিখো চিঠি লিখো। প্রচুর নির্দেশ দিচ্ছে। ডুজ এন্ড ডোন্ট ডুজ। খুব আবছা এসব ঘটনা মনে পড়ছে মরণ শিয়রে নিয়ে দেবস্মিতার। দেবস্মিতা চিরকাল জোকারের মতো হেসে গেল। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট ও খালি হেসে গেল।

এবারে মাছরাঙাটা জলের অনেক গভীরে ছোঁ মেরেছে। কি গভীর সবুজমায়ার জল। দাম্পত্য হামানদিস্তার ঠোকাঠুকিতে আওয়াজের জোর কত? গ্লাডিওলা ফুটে উঠলে হামিংবার্ডের ডানার গতি কত হতে পারে? মোরগের ঠোঁটের ধার ও শক্তি কত হলে যা জানতে চাইবে সব রক্তবমির মতো ভলকে ভলকে উঠে আসবে। বটপাতাটা রোদেজলে অত্যাচারিত হতে হতে সবুজকণা হারিয়ে ফেলেছে।

হাঙরের দাঁতে আটকানো মানুষের হৃৎস্পন্দন মাপছিল কৌশল নিজের দাঁত দিয়ে। একটা ডিভোর্স আক্রান্ত পরিবারের মেয়েকে কৌশল নিতে পারত আপন করে? অথচ এই দুর্ঘটনা মুখ ফুটে দেবস্মিতা বলতে পারে নি! কি বোকা! দেবস্মিতার আর নতুন করে পাহাড়ি ঈগলের মতো নখ ঠোঁট ডানা গজাবে না।

তুই কি নাকছাবি হারানো প্রেম করতে ভয় পাস? কতোবার কলসি ডোবালে মোহনায় মৃত নদী উতরোল হয়?

ভগবানের পাঁচিলে বাবা মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের ফ্রেস্কো আঁকা। প্রদর্শনী দেখতে এসেছে সবাই নাকে রুমাল দিয়ে। চব্বিশ বছরের সাইকেলটা গোলাপি বুগেনভিলিয়ায় ঢেকে দিয়েছিল দেবস্মিতা - টুকরো টুকরো চিঠি ঠিকানা। বুগেনভিলিয়া ফুল মানেই চিঠি।

কবিতা চেয়েছিল ভিখারির মতো কৌশল।

দেবস্মিতা আজ কবি‌। ঠিকানা নেই। কোথায় সে কবিতা পাঠাবে।

 

 


1 টি মন্তব্য: