বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

মুনিরা চৌধুরী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৫


মৃতের মাতৃমঙ্গল

 

(১)

 

দু’চোখের পাথর ছিদ্র করে গড়িয়ে পড়ে জল

পৃথিবীর প্রাচীন কবরে

হায়! এ-আনন্দধারায় আমিও জেনে যাই- বর্ষা এসেছে, তাজা জলে ডুব দেবে কঠিন কাছিম…

 

পাতিহাড়ে পড়ে বৃষ্টির ফুল, চকিত হরিণ ভয় নেই তোমার

আদি বর্ষায় জল আর গহীন জঙ্গলে আমরা ছিলাম আদি ভাই বোন…

সর্বদা মানুষ থাকি না তাই

অর্ধেক চাতক, চাতকিনী…

প্রতিঅঙ্গে বৃষ্টির গজল মাখি আমি আর মৃত ঠাকুরমা (সঙ্গে তাঁর ধর্মান্তরিত প্রেমিক)

 

হায় বর্ষা! জীবিত আর মৃতের

অনন্ত মাতৃমঙ্গল…

 

(২)

 

পৃথিবীর জানালায় ভর দিয়ে দেখছি

গাছের পাতাগুলো কাঁপছে, পাতার আড়ালে স্বর্গের ফল ঝুলে আছে

নদীতে নেমে-যাওয়া সেই রাস্তাটায় ঝিরঝির হাওয়ার মুখ ভেসে ভেসে ডুবে যায়

অনেকটা ডুবন্ত মানুষের চোখে দ্রুত সরে যাচ্ছে জলের প্রবাহ

 

এভাবেই

রোকমচিন্তাহীন, ভাবেই এক জীবন…

আবছা গোধূলির আলো ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই কেউ প্রথম বাতিটি জ্বালিয়ে দিলো

সে আলো জ্বলজ্বল করছে আয়নায়

যেন মহারাত্রির অপেক্ষায় একটি জোনাকিপোকা।

 

(৩)

 

এবার সত্যি সত্যি বিদ্যুত চমকায়

খাঁচা থেকে পাখিগুলো বেরিয়ে আসে

 

বিদ্যুতের ছিদ্রে পাখিগুলো ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে ওঠে।

ক্রমে পালক ঝরছে, পাতা ঝরছে, শিশির ঝরছে…

কতিপয় মানুষ পাখির শরীরে প্লাস্টিকের পালক লাগিয়ে দিয়ে যায়

পৃথিবীতে আবার ঝড় আসে

আর প্রতিটি ঝড়ের শেষে ভোরবেলা দেখি

 

ধর্মবিদ্যালয়ের আলখাল্লা পরা সেই ছাত্রদের মত পাখিগুলো আমার উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে

 

(৪)

 

ফ্লাক্সের মধ্যে তরল চা-বাগান লুকিয়ে রেখেছিলাম

এখন আফিমের গন্ধ পাচ্ছি; পান করছি পরমায়ু…

বারান্দার মাথায় রঙিন কাচের স্কাইলাইট

ছায়াচিত্রটি ক্রমে মুছে যায়

টবে-ঝোলানো বারান্দা স্থায়ী হয়ে যায় ধূসর দেয়ালে দেয়ালে

ঘরের মধ্যভাগ ছিদ্র করে এক বাটি আলো স্থির পড়ে থাকে মেঝেতে।

বেতের চেয়ারে তুমি বসে আছো, স্বর্গ পলাতক

বাদামি চুলে যেনো পুরনো এক ফটোগ্রাফের পূর্ণিমা, পরিষ্কার হাওয়ার কোলাহল…

 

আর আমি হতে চাই সেইজন

যে তোমার অভিনয় আর গলার স্বরের ওপারে যেতে পারে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন