বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ৮৯   


গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় এবিপি বাংলা চ্যানেলে সুমন দে সঞ্চালিত ‘মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান দেখতে বসেছিলাম। আলোচ্য বিষয় ছিল, সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা রাজ্যে যে অশান্তি অরাজকতা ও সন্ত্রাস ক্রমশই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে শান্তিস্থাপন করা যায় এবং কারা কারা সেই দায়িত্ব নিতে পারেন, তারই বহুমুখী আলাপ আলোচনা। এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা এবং কয়েকজন সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সবাই তাঁদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের প্রেক্ষিতে বক্তব্য উপস্থাপিত করেন। আমাদের এই সংখ্যার সম্পাদকীয়তে সেই বিতর্ক ও আলোচনা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন এখান লিখতে বসিনি। শুধুমাত্র একজন বক্তার কিছু বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতায় আমার সম্পাদকীয় অভিমত ব্যক্ত করছি।

সেদিনের আলোচনা সভায় অন্যতম আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। তিনি তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের উল্লেখ করে কীভাবে সাধারণ মানুষের মনে ক্রমশ ভীতির মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলেন। বস্তুতপক্ষে বর্তমানে এইসব সন্ত্রাসের আবহাওয়া যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিই তাদের দলের হীন স্বার্থে ও ব্যক্তিগত কায়েমী স্বার্থে সংঘটিত করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই ভয় ও সন্ত্রাসের ফলে একদিকে সাধারণ মানুষ যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে যারা সৃজনশিল্পী তাঁরাও তাঁদের সৃষ্টিতে অনেকটাই গুটিয়ে থাকছেন। প্রসঙ্গক্রমে  সমরেশ মজুমদার উল্লেখ করলেন, যেসময় তিনি ‘উত্তরাধিকার’ ও ‘কালবেলা’ উপন্যাস লিখেছিলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। সমরেশ তাঁর ‘উত্তরাধিকার’ উপন্যাসে উত্তরবঙ্গের পটভূমিকায় সেই সময়ের কম্যুনিস্ট পার্টির উত্থান ও তার বিস্তারের একটা সুন্দর আলেখ্য পরিবেশন করেছেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় ‘কালবেলা’ উপন্যাসে তিনি ব্যক্ত করেছেন সত্তর দশকের আন্দোলন বা নকশালবাড়ি আন্দোলনের একটা অনবদ্য কাহিনী। বলা বাহুল্য, ‘কালবেলা’ উপন্যাসে কম্যুনিস্ট আন্দোলনের যে রূপরেখা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে, তা তৎকালীন রাজ্যের শাসকশ্রেণী বামফ্রন্টের পক্ষে হজম করা অস্বস্তিকর ছিল। তাদের মতাদর্শের বিরোধী মতাদর্শ ছিল। কিন্তু সমরেশ মজুমদার তাঁর বক্তব্যে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলেন, এই লেখার জন্য সেই সময়ের বাম সরকারের রক্তচক্ষু তাঁকে দেখতে হয়নি। অর্থাৎ মতবাদ বা মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সহনশীলতা ছিল। যে সহনশীলতা আজকের সময়ে এবং আজকের রাজনীতিতে একেবারেই নেই। আর তাই বর্তমান প্রজন্মের সাহিত্যিকরা সাহস পাচ্ছে্ন না, আজকের এই অরাজকতা ও সন্ত্রাসকে তাঁদের সৃষ্টিতে মেলে ধরতে।  এবং তাই এখন কোনো রাজনৈটিক উপন্যাসও লেখা হচ্ছে না, যা একসময় তিনি লিখেছেন। শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার সঠিক কথাই উচ্চারণ করেছেন। বর্তমানের অসহনশীলতার আবহাওয়ায় শাসকশ্রণীর বিরুদ্ধে কেউ কোনো বক্তব্য রাখলে অথবা অন্য কোনো মতবাদ বা অভিমত প্রকাশ করলেই তাকে একদিকে যেমন অভিযুক্ত করা হচ্ছে মাওবাদী অভিধায়, অন্যদিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে দেশদ্রোহী রূপে। আর বলা বাহুল্য, এই বিষম পরিস্থিতিতে, ভয় ও সন্ত্রাসের পরিবেশে সাহিত্যিকরা তাঁদের সৃষ্টিতে সমসময়কে তুলে ধরতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন, আশঙ্কিত হচ্ছেন, সন্ত্রস্ত হচ্ছেন। অথচ তা লেখা অত্যন্ত জরুরি, একান্ত কর্তব্যও, কেননা এইসব লেখাই সময়ের দলিল হয়ে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

বাংলা নতুন বছর শুরু হলো। এখনও আমরা করোনামুক্ত হইনি। উপযুক্ত সাবধানতা ও সতর্কতা বজায় রেখেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। সবাইকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকুন। সবাই সুস্থ থাকুন।   

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :

Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

৪টি মন্তব্য:

  1. সহমত। একেবারে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে লেখায় কেউ আগ্ৰহী হচ্ছেন না কারণ লেখকরাও নিজের জীবনকে বিপন্ন করতে চান না। এখনকার লেখকরা বিগত দিনের লেখকদের মতো অগোছালো নন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একজনই জন্মায়।

    উত্তরমুছুন