কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৪ |
শূন্যপুর ২
রাইকিশোরী বহুদিন পর আজ আলমারির নিচের তাকের অনুভূমিক লকারটা খুলবে। পুজো সেরে উঠেছে। ঘরে চন্দনবাস। ঠাকুরের আসন। পিঁপড়েরা নকুলদানার র্যাশন নিতে এসেছে। রাইকিশোরী আদরচোখে দ্যাখে।
রাইকিশোরীর পিঁপড়ে হতে ইচ্ছে জাগে। মানুষের র্যাশন তুলতে কার্ড লাগে। ঠিকানা বদলালে যে কার্ড বদলায়। কাগজ ডিজিটাল হয়। ল্যাপ্স। রিনিউ। নির্দিষ্ট পাড়া, জেলা, রাজ্য, দেশের নির্দিষ্ট কার্ড। যত ভাগ, তত কাগজপত্র৷ আর ভয়। পিঁপড়ের দেশ নেই। কাগজ নেই। সংকুচিত মানুষেরও পিঁপড়েজীবনের লোভ হয়।
রাইকিশোরী গোস্বামী। আগে ছিল অন্য পদবী। পঞ্চাশ বছর আগের সাকিনের নথি চাই। বাপ-ঠাকুর্দার বাপ-ঠাকুর্দা হওয়ার প্রমাণ চাই। কোনো ঘর কখনও কি ছিল তার? কোনো দেশ? কুমিল্লার বাড়িটা। তাড়া খেয়ে নতুন ভিটে। শ্বশুরবাড়ি। কোনটা তার বাড়ি? মধুর মা চা নামিয়ে যায়, ঠক্! ভোটার কার্ডের রাইকিশোরী গোস্বামী। ফিমেল। ছিয়াত্তর। শাড়ি-ব্লাউজ নামায়৷ বেডকভার। বালিশের ওয়ার্ড৷ ন্যাপথলিনগন্ধ মাখা আঁচলে খুঁট বাঁধা। খুঁটে ডালার চাবি৷
রাইকিশোরী ডালা তোলে৷ ইস্কুলের কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়েনি কখনও। মন্ত্র পড়ে বিয়ে। কাগজ তারও নেই। রাইকিশোরী ইস্কুল ফাইনাল খুঁজছে দুই পাল্লার মধ্যে মাথা গলিয়ে। কুমিল্লার রোদে ন্যাপথলিনের গন্ধ। মনোহরদা বেণি টানছে। নতুন চরে আসবা একবার? শানোয়ারা বলছে, থাইক্যা যাও। বাবা মাথা নাড়ছে। দীর্ঘশ্বাস।
অ্যাডমিট-সার্টিফিকেট… কিছু হাতে আসে না। আসে দুইটি গোপন চিঠি। হাতের ছোঁয়ায় ভেঙে ভেঙে যায়। যেন স্রোতের টানে নতুন চরের মাটি। পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে। মনোহরদা বেঁচে আছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন