কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩ |
সন্ধান
ইচ্ছে
করেই অনেকটা পিছিয়ে পড়ল শৌনক। অনেকক্ষণ ধরেই হাঁটার গতি সে কমিয়ে আনছিল। স্ত্রী অনসূয়া
মেয়ে কাকলির হাত ধরে ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছিল। শৌনক ছিল সামান্য পেছনে।
লম্বা
রাস্তার দু’পাশে গাছগাছালি অনেক। রাস্তায় পথচারী তেমন নেই তবে মাঝেমাঝেই দুরন্ত গতি
নিয়ে ছুটে যাচ্ছে ছোট বড় নানা আকারের গাড়ি। কাকলিই বলেছিল, চল না বাবা বাসস্ট্যান্ড
অবধি হেঁটেই চলে যাই! একটুখানি তো পথ, সবাই মিলে কথা বলতে বলতে...
এ
রাস্তায় শৌনকের যাতায়াত খুব ঘন ঘন। তবে সেটা গণপরিবহনে। হেঁটে হেঁটে নয়। আজ হাঁটতে হাঁটতে প্রায় দু’যুগ আগের একটি ঘটনা
মনে পড়ে গেল তার। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি একদিন কলেজ থেকে পালিয়ে অনসূয়াকে পাশে নিয়ে
অনেকটা পথ সে হেঁটেছিল এই রাস্তা ধরে। সেই
সময়ের পরিবেশ আজ ঠিক কতখানি বদলে গেছে, হাঁটতে হাঁটতে শৌনক সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিল।
কিন্তু এতদিন আগেকার ছবি কি আর মনে ধরে রাখা যায়? নাকি তা সম্ভব? অনসূয়ার হাত ধরে পাশাপাশি
চলতে চলতে কত কীই যে সেদিন সে বলেছিল, তাও আজ মনে পড়ে না। সমস্ত স্মৃতির ওপর যেন কুয়াশার
এক ধূসর আবরণ। শৌনক কিছুতেই তা ভেদ করতে পারছে না।
-বাবা,
এত পিছিয়ে পড়লে কেন? তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এস।
কাকলির
সুরেলা মিহি আওয়াজ অনেকদূর থেকে শৌনকের কানে আসে। শৌনক চেঁচিয়ে জবাব দেয়, আসছি রে আসছি। হঠাৎই তার
চোখে পড়ে একটি ছোট্ট দোকান। জায়গাটাও যেন চেনা চেনা। সামনের মোড় থেকে বাস ধরার আগে
সেদিন সে আর অনসূয়া এখানেই বোধহয় চা আর কেক খেয়েছিল। আজ অবশ্য সেই চায়ের দোকানটি আর
নেই। এখন এখানে একটি গিফট আইটেমের দোকান।
কী
ভেবে শৌনক ঢুকে পড়ে দোকানে। অনসূয়ার সাথে তার দাম্পত্যজীবন প্রায় দু’দশকের। বছর ঘুরলেই আরও একটি বছর পুরনো হয়ে যাবে
তারা। শৌনক ভারী আশ্চর্য হয়ে যায় এই ভেবে যে, বিবাহবার্ষিকীতে অনসূয়াকে তো অনেকদিন কোনও উপহার দেওয়া হয় না! বিয়ের পর পর তো
বটেই, তার পরও অনেক বছর বিয়ের দিনে দামী দামী
উপহার হাতে নিয়ে শৌনক অফিস থেকে ফিরেছে। কিন্তু সেসবও অনেকদিন আগেকার কথা।
দোকানে
ঢুকে এদিক ওদিক কী যেন খুঁজতে থাকে শৌনক। আগামী বিবাহবার্ষিকীতে অনসূয়াকে সে নতুন কিছু উপহার দিতে
চায়, যা আগে কখনই সে দেয় নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন