কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২ |
পৃথিবীর অন্তিম খাটা পায়খানার মেথর
ও তার মনিবেরা
থানার পাশে যাদের ঘর তাদের নিজেদের মনের সাথে খুব সমঝোতা করে চলতে হয়। হরেক রকম পুলিশ তার হরেক রকম চাউনি। হরেক রকম হরকত। সেই তুলনায় হাতকড়ি বেড়ি আর দড়িতে কোনো কয়েদিকেই কাতর দেখে না চদু, মানে চন্দন। ওরা কিন্তু মনের দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত। যা হবার তা তো হয়েইছে। দু একটা ডান্ডা পড়বে আর কী! থার্ড ডিগ্রি আজকাল উঠে গেছে। আর জেল বা হিসসা তো ভবিতব্য। কিন্তু ভাবের রকমফের যত ওই পুলিশদের। থানার পাশে বাস, তাই বুঝি ওদের মুখের ভাব পড়তে একটা আদত হয়ে গেছে চন্দনের না কি? একটা বিচ্ছিরি নেশা। মনের আর দোষ কী? সারাদিনে তো ওই একটিই কাজ। থানার পিছনে ডোবা। পাড়ে রাখা একটা খালি টিন নিয়ে পাশেই খাটা পায়খানার পিছনে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে মাল বোঝাই টিন টেনে এনে খালি টিন জায়গায় সেট করে দেওয়া আর ভর্তিটা মাথায় করে নিয়ে গিয়ে ওই ডোবায় ঢেলে দেওয়া। ব্যাস। সারাদিন আর কোনো কাজ নেই। মাস গেলেই মাইনে বরাদ্দ। চন্দন নামের পাশে টিপছাপ দিয়ে টাকা নেবার সময় কখনো কখনো জমাদার চন্দন নামটি মনে করিয়ে দেয়। মলয় চন্দন বলে হাঁক পাড়ে আর হা হা হাসি। চদু জানে না চন্দনের গন্ধ কেমন। কথাটা ভাবে আর ভুলে যায়। রোজ চদুর শুধু থানার গেটের পাশে ওর ঝোপড়িতে বসে পুলিশ চোরের আনাগোনা দেখা। পুলিশ দেখলেই ওর চাউনি দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে চদুর। মনে ধন্ধ, বছর বছর এমনি ভাবে দেখতে গিয়ে আমি বকস (ডাইনির পুং লিঙ্গ) হয়ে গেলাম না তো? তা না হয় হলে কি ক্ষতি? আমি কি ওদের দুশমন? ওদের চোখে মুখে রকমারি লোভ নানান অতৃপ্তি। হ্যাঁ, একটা বড় তৃপ্তি, ওই পোষাক। পোশাক হলো ওদের বড় অস্ত্র বড় খোলস। এটা সার বোঝে চদু। ওই যে পুলিশ পোশাকে মানুষটা আসছে? ওর চোখে চাকু ছুরি ঝলকায়। ওর খুন করার বড় শখ। কাউকে ও ভালো দেখতে চায় না। আমাকেও না। ও মাথায় বাড়ি মারে। দু’চারবার মারতে লাঠি উঠিয়ে ছিল, মারেনি। ঘেন্না। চদু ভাবে, ভালোই। যে জিনিসটায় মানুষের সবচেয়ে ঘেন্না পিত্তি, সেটাই তার আত্মরক্ষার অস্ত্র হতে পারে। তো কিসের ভয়? তবে সবাই কি সেরকম? একজন আছে। সে কাছ দিয়ে পেরোলেই মিষ্টি ফুলের গন্ধে ভরে যায় চারপাশ। অমায়িক হাসে। চদুকে বলে, আর ক’টা দিন সবুর কর রে। পাকা পায়খানা হবে। আর তোকে গুয়ের টিন বইতে হবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন