প্রতিবেশী সাহিত্য
পরাবাস্তববাদীদের কবিতা
ফেদেরিকো গারসিয়া লরকা (১৮৯৮
- ১৯৩৬)
(অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী)
গোলাপের গীতিকাব্য
গোলাপ
সকালের খোঁজ
করছিল না :
তার শাখায়,
প্রায় অবিনশ্বর,
তা অন্যকিছু
চাইছিল।
গোলাপ
জ্ঞানের খোঁজ
করছিল না, কিংবা ছায়ার :
মাংসের কিনার
আর স্বপ্ন দেখছিল
তা অন্যকিছু
চাইছিল।
গোলাপ
গোলাপের খোঁজ
করছিল না,
স্বর্গে ছিল
অবিচলিত
তা অন্যকিছু
চাইছিল।
অন্ধকার পায়রাদের গীতিকাব্য
জলপাই গাছের
শাখার ভেতর দিয়ে
আমি অন্ধকারে
দুটি পায়রা দেখতে পেলুম।
একটা ছিল সূর্য
আরেকটা ছিল চাঁদ।
আমি বললুম
: ‘ছোট্ট প্রতিবেশীরা
আমার সমাধিফলক
কোথায়?’
‘আমার লেজের
পালকে,’ বলল সূর্য।
‘আমার গলায়,’
বলল চাঁদ।
আর আমি যে বাইরে
ঘুরে বেড়াচ্ছিল
আমার শরীরে
পৃথিবীকে জড়িয়ে নিয়ে,
শাদা তুষারে
গড়া দুটো ঈগল দেখতে পেলো,
আর একটি মেয়ে
যে ছিল নগ্ন।
আর একজন ছিল
অন্যজন,
আর মেয়েটি,
সে দুটির কিছুই ছিল না।
আমি বললুম,
‘ছোট্ট ঈগলরা
আমার সমাধিফলক
কোথায়?’
‘আমার লেজের
পালকে,’ সূর্য বলল।
‘আমার গলায়,’
চাঁদ বলল।
জলপাই গাছের
শাখার ভেতর দিয়ে,
আমি দুটো পায়রাকে
দেখতে পেলুম, দুটোই নগ্ন।
আর একজন ছিল
অন্যজন,
আর দুজন কিছুই
ছিল না।
ওহে অন্ধকার প্রেমের গোপন
কন্ঠ
হে লুকোনো ভালোবাসার
গোপন কন্ঠস্বর!
হে পশম ছাড়াই
ভেড়ার ডাক দিচ্ছ! হে জখম!
হে শুকনো চিরহরিৎ-গুল্ম,
তেতো ছুঁচ!
হে সমুদ্রহীন
স্রোত, দেয়ালহীন শহর!
হে শাণিত পরিলেখে
গড়া বিশাল রাত,
স্বর্গীয় পর্বতমালা,
সরু উপত্যকা!
হে হৃদয়ের ভেতরের
কুকুর, কন্ঠস্বর উবে যাচ্ছে,
সীমাহীন স্তব্ধতা,
পূর্ণবিকশিত রামধনু!
আমাকে হতে দাও,
হিমশৈলের উষ্ণ কন্ঠস্বর,
আর আমাকে বিলুপ্ত
হতে বোলো না
জংলিঘাসে, যেখানে
আকাশ আর মাংস ফলহীন।
চিরতরে ছেড়ে
চলে যাও আমার হাতির দাঁতের করোটি,
আমাকে দয়া করো।
অত্যাচার বন্ধ করো!
হে আমিই প্রেম,
হে আমিই প্রকৃতি।
প্রতিটি গান
প্রতিটি গান
অবশিষ্টাংশ
ভালোবাসার।
প্রতিটি আলো
অবশিষ্টাংশ
সময়ের।
একটা গিঁট
সময়ের।
আর প্রতিটি
দীর্ঘশ্বাস
অবশিষ্টাংশ
এক কান্নার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন