মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

চিরশ্রী দেবনাথ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯১


ভগবানের ছেলে      

 

গোকুলচন্দ্র তার কাজটা হারিয়েছে। সেলসম্যান ছিল। লোকজন এখন বাড়িতেই ঢুকতে দেয় না করোনা সংক্রমণের ভয়ে, কিছু কেনা তো দূরের কথা। তিনদিন মনখারাপ করে বসে রইল। পুঁজি শেষ হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। মফঃস্বল শহরে ছোট্ট একটু বাড়ি, মাথা গোঁজার ঠাই। বৃষ্টি হলে, উঠোন ভেসে যায়, ঘরে ঢুকে যায় জল। আজ  সকালে বউটিও খেঁকিয়ে উঠল। কী হবে, কী খাবো শুনি?  গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো বউ।

সাড়া পাড়া ঘুরে এসে বলল, কত  জায়গায় খোঁজ করলাম, কী কাজ করি  আমি, কীভাবে  দুটো টাকা রোজগার করি। দুপুরে পেঁপে সিদ্ধ ভাত খেতে খেতে, উঠোনে গজিয়ে ওঠা পেঁপে গাছটির দিকে কৃতজ্ঞচোখে  তাকাচ্ছিল গোকুলচন্দ্র। সামনে একটি বট গাছ উঠেছে। বাড়িতে কেউ বটগাছ রাখে না। একে কেটে ফেলতে হবে।  জীর্ণ কাদামাটি থেকে রস নিয়ে লকলকিয়ে উঠছে সে। তরুণী গাছ। কাটবে কাটবে করে কাটা হয়নি এতদিন। খাওয়া শেষে গোকুল কাটারি নিয়ে বেরুলো। আস্তে আস্তে এই গাছটি খেয়ে নেবে তাদের ছোট্ট ঘরটিকে। কিন্তু  কাটা হলো না, হঠাৎ ঝরো বাতাস, গুমগুম করে মেঘ ডাকতে লাগল, শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। টানা আধঘন্টা বৃষ্টির পর শান্ত হলো সব। ততক্ষণে বারান্দা উপচে জল ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। জল নামলে গোকুল আবার গাছটি কাটতে বেরুলো।

কিন্তু এটা কী? জলের তোড়ে ভেসে এসেছে একটি  পাথরখন্ড। লালচে মতো রঙ, দেখলে মনে হয় মানুষের বাচ্চা, ঠিক বটগাছের তলায় পড়ে  আছে। নিঃসন্তান দম্পতি দুজনেই তখন তাকিয়ে আছে বিস্ফারিত চোখে এই পাথরটির দিকে। একে অপরের চোখের  ভাষা পড়ে নিচ্ছে যেন। দুদিন পর, কাঁসরঘন্টা বাজছে, বটগাছের  তলায় শুরু হলো  পুজো, দান দক্ষিণা।

স্বপ্নে পাওয়া ভগবানের ছেলে, গোকুলচন্দ্রের দেহে প্রতি পূর্ণিমায়, ভর হয়। জল পড়া, তাবিজ কবজ সব বলে দেয় ভগবানের ছেলে কানে কানে, এমনই প্রচার করে গোকুলের বউ। যা হোক, দুজনের আর খাওয়া পরার অভাব নেই আপাতত।  

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন