সমান্তরাল মহাবিশ্ব ও
আমরা – ৩
বেশ বোঝা যাচ্ছে এতক্ষনে মাল্টিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা আইদেন্টিকাল টুইন এসব অনেক পাঠকই ঠিক হজম করতে পারছেন না, বা অনেকে ব্যাপারটিকে আজগুবি ভাবছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ধারণা এখনো অব্দি পদার্থ বিজ্ঞানের কোন সূত্রকে তো লঙ্ঘন করেইনি বরং সাম্প্রতিক সময়ে এই তত্ত্ব অনেক বাস্তবতা পেয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক তত্ত্বগুলোর কোনোটাই অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে বাতিল করে দেয় না বরং সাম্প্রতি লিন্দের তত্ত্ব কোয়ান্টাম ফ্লাকটুয়েশনের মাধ্যমে অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টির দিকেই ইঙ্গিত করছে।
অনেকেই এর বিপরীতে যুক্তি খাড়া করেছেন। তাঁরা বলেছেন, মাল্টিভার্স তত্ত্ব সত্যি হলে শুধু আমাদের মহাবিশ্বই শুধু কেন টিকলো, বাকীরা হারিয়ে গেল কেন, অন্তত আপাতদৃষ্টিতে? এ বিষয়ে কানাডার প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক লি স্মলিন এক চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন – তিনি বলেছেন এ বিষয়ে জীববিদ্যা অথবা বায়োলজি আমাদের পথ দেখাতে পারে। মানুষ সহ প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণীরই কোটি কোটি স্পার্মের প্রয়োজন হয় কেবল এটি নিশ্চিত করতে যে, এদের মধ্যে একটি স্পার্মই বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে আর শেষ পর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখে।
কিন্তু লি স্মলিনের এই বিবর্তনবাদী দর্শন খুব আকর্ষণীয় সমাধান দিলেও পদার্থবজ্ঞানীরা একে তেমন সমর্থন করেননি। এর কারণ মূলত দুটি – অধিকাংশ বিজ্ঞানী পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে এর সমাধান খুঁজতে চেয়েছেন এবং দ্বিতীয়ত লি কোনো গাণিতিক মডেল এর পেছনে দিতে পারেননি । আর এসবের চেয়েও বড় কথা হল বিজ্ঞানীরা মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পেতে শুরু করেছেন সম্প্রতি।
এছাড়াও বিজ্ঞানের বিভিন্ন স্তরে অনেক সময়ই বিজ্ঞানীরা অনেক রকম প্রমাণ বা হাইপোথিসিস পেয়েছেন, যেগুলো এই সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করে। যেমন অনেকেই মনে করেন, পৃথিবী একটি হলোগ্রাম, যার অর্থ হল আমরা যা করছি বা আমাদের দৈনন্দিন দিনপঞ্জি বহুকাল আগে ঘটে গেছে এখন আবার সেইসব পুনরায় ঘটছে। অথবা দেজাভু, মানে আপনি এমন কোনো সময়ের সম্মুখীন হলেন যেটা আপনার মনে হচ্ছে আগেও কোথাও আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন, কিন্তু বাস্তবে মানে আপনার হিসেবে সেটা অসম্ভব। ধরুন সারাজীবন সরকারী চাকরী করা এক ব্যক্তি যদি ইয়র্কশায়ারে ঘুরতে গিয়ে কোনো এক রেস্টুরেন্টে বসে মনে করেন, ঠিক এই মুহূর্তের সম্মুখীন তিনি আগেও হয়েছেন। কিন্তু হয়ত এজীবনে এই প্রথম তাঁর দেশের বাইরে আসা। এমন বহু ঘটনার সম্মুখীন আমরা অনেকেই কোন না কোন সময়ে হয়ে থাকি, কিন্তু বাস্তবে যার যুক্তি মেলা ভার।
সম্প্রতি ওয়ার্ম হোল সম্পর্কে আমরা কমবেশী সকলেই অবগত। বলা হয় এক ইউনিভার্স থেকে আর এক ইউনিভার্সে পৌঁছনোর একমাত্র গাণিতিক মাধ্যম হলো এই ওয়ার্ম হোল। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করবো আগামী সংখ্যাগুলোয়। তবে পাঠক এই মুহূর্তে হয়ত বুঝতে পেরেছেন, এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপলব্ধি বা গাণিতিক সূত্রগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করতে পারলেই আমরা খুব শীঘ্রই মাল্টিভার্স বা প্যারালাল ইউনিভার্স-এর অকাট্য প্রমাণ হাতে পেয়ে যাব। এবং এও বলা যায়, তখন এই বিষয়টি মেটাফিজিক্স থেকে ফিজিক্সের বিষয় হিসেবে বিজ্ঞানী মহলে বিবেচ্য হবে।
খুব ভাল লাগছে শুভ্রনীল , অনেক অজানা তত্বের জন্যে অপেক্ষায় থাকবো
উত্তরমুছুন