মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

অপূর্বকুমার চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৭



দাগী

 

আধফালি দৃষ্টিও ধ্বস এনে দিতে পারে

সে কথাও মসৃণ লিখে দিয়েছিলে

 

হয়তো নিছক বুঝে নিতে চাওয়া ছিল

 

অথচ বুঝতেই পারোনি: তুমি খুলে দিয়েছিলে দাবির দুয়ার

 

তারপর কত হেমন্তের জোছনার নিচে

মায়াবী তুমি শুয়ে ছিলে--

 

হিমেল বাতাস অজান্তে কেড়েছিল বোধ

 

নিমজ্জন থেকে উঠে এসে আমার আবিষ্ট তর্জনী মধু মেখে দিয়েছিল তোমার বিধ্বংসী বুকের তামাভ বৃত্তে

 

নতুন করে ফোটা পাপড়ির মতো তাকিয়েছিল  তোমার দুর্বোধ্য ওষ্ঠ অধর

 

বেকুবের মতো এগোনো আমার চুম্বনে

তুমি লেপে দিয়েছিলে অসাড় সংযম

 

আমার চোখের ভিতরে ঢুকে পড়া তোমার সবটুকু দৃষ্টি যেন আমাকে অবোধ বলারই জন্য

 

নৈশব্দের থালায় সাজিয়ে অবলীলায় এগিয়ে দিয়েছিলে অফুরান পিপাসা

 

সেই থেকে তুমি জোনাকি; তারাদের মতো ছড়ানো সমস্ত আকাশে

 

সেই থেকে আমি জোছনা দেখিনা

রাতে।

 

ধরো

 

ধরো, আমার জানালা আগামী হাজার বছর শুধু তাকিয়েই থাকবে

ধরো, রাতের প্যাঁচার ডাক একটা অস্ফুট কান্নারই নাম হবে

ধরো, সবুজ নদীর স্রোতে রুপালি বিকেলের   ঝিকিমিকি আসলে একটা মৃত্যুর অন্তর্বাস

ধরো, এই সবকিছু হতেই পারে বা হবেই হবে

 

তবু কি একথা বলার একফালি জমি তুমি পাবে,

যেখানে দাঁড়িয়ে সমস্ত উল্লাস ঢেলে মাথার মধ্যে হিজিবিজিহীন হাসতে পারবে?

হাসতে হাসতে বলতে পারবে গোধূলির সিঁদুরে রক্তরাগ বিড়ম্বনা ছিলনা রাধার কপালে?

রাত্রির কালিমায় ভেসে যাওয়া নোনাইয়ের  জল নোনতা পাঁজরের নিচে মরে যাওয়া গোলাপের কাঁটাটা তোমাকে গুঁজে দেবে ।

 

মায়ামৃগ

 

(১)

 

তখন স্তনের স্পর্শে মাতাল

অন্তর্বাস জানতো না,

ডিটারজেন্ট বারংবার ধুয়ে ফেলে দেবে

তার যাপনের যাবতীয় সঞ্চয়।

 

(২)

 

যে জানালাটা দিয়ে আকাশ আসতো

জৈন্তি পাহাড়ের হিমেল বাতাস নিয়ে

সেটা আজীবন অজানা বাধ্যতায়

বয়ে বেড়ালো লোহার গরাদ।

 

(৩)

 

বালিশের উপর আহ্লাদে আটখানা

তোয়ালেও জানতো না

শুধুই প্রসাধিত চুলের গন্ধ নয়,

লবনের ক্ষয়, অন্য গন্ধ ও অস্বস্তি

বার বার লেপে দেবে যাবতীয়

দুষণ কালিমা।

 


২টি মন্তব্য: