কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯১ |
একটি ভারচ্যুয়াল কথোপকথন
(আমি
পার্থসারথিকে)
-পার্থ তুমি কোথায়?
-আমি
এখন অস্তিত্ব ক্রোমোজোমে উঠছি নামছি।
-ক্রোমোজোমের
কোন শাখায়?
-সাহিত্য।
-এই
উজান বেয়ে তুমি একলা কি পারবে? এই
জন্যেই বারবার নেমে যাচ্ছ। তাছাড়া
এখন তো দিশাহীন প্রবাহ। সমুখে সমূহ অস্থিরতা। এই আবেশে অনেকে হেরে ভাবছে, যাই একটু ঢুকুঢুকু। জীবন
অসার। যা হবার তা হবে।
-আমি
তো একা নই? আমার সামনে এন্তার বিদগ্ধ সাহিত্য শিল্পী
হাঁটছেন। নিরন্তর প্রয়াস। আমাকে কেউ না কেউ টেনে তুলবে। ভাবী
গোলকের দিশা দেখাবে। আমি পিছিয়ে পড়ব কি? পিছনে শত শত। সবাই ধুম্রে
বিবশ না, সবাই ঢুকুঢুকু না।
এই কথা বলে সে আমার অবচেতন থেকে আমার অতীতকে টেনে তুলল। দেখলাম আমি সত্যিকারের মাটিতে থাকতে পারছি না। যে জন্মজাত মাটি আমাকে একটা প্রধানমূল দিয়েছিল, সে মাটি ছেড়ে এখন আমি বাস্তবিক মায়া। আমি এখন নিজেকে নিয়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
–হ্যাঁ
দাদা।
-আমি
তোমাকে উঠতে দেখলাম। মানে, আমি তো নিচে, না? তোমার তো অস্তিত্বে বৌদ্ধিক
নান্দনিক পৃষ্টভূমি। আর আমার এখন অসমাপ্ত কোলাজ করা আকাশ ও
পরিচিতি। কোথাও কোথাও দারুণ আঁধার।
অতীতজুড়ে আমি অন্তর্মুখী মাটি। ভালো করে ছড়িয়ে পড়তে পারিনি। সেই আদিতে রয়ে গেছি। অথচ সিষ্টেম
আমাকে বৃক্ষ হওয়ার জন্য সবকিছুই দিয়েছে। বৃক্ষ
হতে যে একটু উদার আকাশ চাই! তোমার
উপরে কেমন? কেউ আড়াল করছে না তো?
-হ্যাঁ
আছে তো দাদা। অনেকে নিজের দৈহিক অস্তিত্ব রাখতে অনেকখানি
আকাশ কব্জা করতে চায়। আলো নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। হাসিমুখে অন্তরের বিষ উগরে দেয়। স্লো পয়জন। এর থেকে যদি ছুরি চালাতে চাইত, আমি বুক পেতে দিতুম।
-তুমি
তো যথেষ্ট উপরে উঠেছো। পরম্পরায় তোমার অনেক
মসৃণ ও অনায়াস সুস্থ অস্তিত্ব ক্রমোজোম। আমি
যে প্রায় প্রাগৈতিহাস থেকে উঠে এসেছি! আমি
শুধু মাটির গন্ধ পাই। তোমার খোলা পটভূমি। আচ্ছা, দেখ তো, কোনো
বিপ্লবের গন্ধ পাও কি না?
-হ্যাঁ
পাচ্ছি দাদা। এ বিপ্লব পুনর্জাগরণের নয়, মুছে যাওয়ার বিপ্লব।
সাবধান। মাটিতে আছো, মাটিতেই থাকো। সেখানে তোমার শেকড়। আমরা সবাই শেকড়চ্যুত হতে যাচ্ছি। নামের
প্রতিযোগিতায়। তুমি থাকো দাদা। জানবো কেউ তো আমার অনুমনন রক্ষা করছে। তুমি আকাশ পেতে ওপরে ওঠো,
কিন্তু মন রাখো তোমার আদি মাটিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন